বাইরে তালাবদ্ধ ভেতরে পর্নো স্টুডিও!

মহল্লার একটু সমস্যার কারণে হোটেল সুফিয়া বন্ধ রয়েছে। খুলবে কবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হোটেল খুলতে তাও ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। তবে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে সার্ভিস দেয়া হবে। ঠিকানা দিলে মাল জায়গামতো পৌঁছে যাবে।

বুধবার সরেজমিনে রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাব কাটরা-নিমতলী এলাকার হোটেল সুফিয়াতে গিয়ে দেখা গেল মূল ফটক তালাবদ্ধ। পরে হোটেলের সাইনবোর্ডে দেয়া নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তারিক নামের এক ব্যক্তি রিসিভ করে নিজেকে হোটেলের ম্যানেজার দাবি করে এ কথা বলেন।

এদিকে হোটেলটির কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, হোটেল সুফিয়ার মালিক খন্দকার ফরিদ উদ্দিন খুব ভালো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ হোটেলটি পরিচালনা করে আসছিলেন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি কয়েক বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তার অবর্তমানে হোটেল দেখাশোনা করছেন তার ভাতিজা রায়হান। ঠিক এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েই রায়হান এক সময়ের নামকরা এই হোটেলটিকে বানিয়েছেন দেহব্যবসা আর মাদকের আখড়া। যার মাশুল গুণতে হচ্ছে পুরান ঢাকার অভিভাবকদের। হোটেলের কারণে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে। যার প্রমাণস্বরূপ গত রোববার রাতে এলাকাবাসী হোটেলটি ঘেরাও করে পর্নোছবি তৈরির সরঞ্জামাদিসহ ১১ জনকে আটক করে বংশাল থানায় সোপর্দ করেন। আটক ১১ জনের মধ্যেই ৫ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. এএম আমজাদ আলী নিশ্চিত করেছেন যে আটকৃতদের মধ্যে ৪ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাবেক ছাত্র। আর এক জন এখনো হলে থেকে পড়াশুনা করছেন।

তবে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুদ্দুস ফকির অবশ্য ঘটনাটি একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার ভাষ্যমতে, আটককৃতদের মধ্যে একজন মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। বাকিরা বহিরাগত। বৈধতা বিবেচনায় ওসির বক্তব্য সঠিক। কারণ প্রক্টর নিজেও বলেছেন, পাঁচ জনের মধ্যে চার জন শহীদুল্লাহর হলের সাবেক ছাত্র। আসলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা হলে ছিলেন।

আটককৃতদের কাছ থেকে পর্নোগ্রাফি তৈরির সঞ্জামাদি উদ্ধারের ব্যাপারটিও ওসি কুদ্দুস ফকির বেশ কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘আরে ভাই, তাদের কাছ থেকে মাত্র একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। ল্যাপটপটিতে কিছু অশ্লীল ভিডিও চিত্র থাকলেও সেগুলো এখানকার কারো নয়। আর ল্যাপটপের ব্যাগে কিছু সংখ্যক ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) সিডি উদ্ধার হয়। আপনিই বলুন, সামান্য এই জিনিসগুলিও জন্য কাউকে কী পর্নো নির্মাতা বলা যায়।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘মনে করেন এই মামলার আমিই সব। মামলাটি পর্নোগ্রাফি আইনে হয়নি, হয়েছে ডিএমপির ৭৪ ধারায় আসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে। তাই আসামিদের ওই দিনই আদালতে চালান করে দিয়েছি। বাকিটা আদালতের হাতে।’

এ বিষয়ে বংশাল থানার ডিউটি অফিসার হাফিজুল ইসলাম জানান, গত সোমবার সকালে ডিএমপি অ্যাক্টের ৭৪ ধারায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আটককৃত ১১ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আটককৃতদের নাম প্রকাশে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে পর্নোছবি তৈরি করতে গিয়ে রাজধানীর নিমতলীর হোটেল সুফিয়া থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীসহ ১১ জনকে আটক করে বংশাল থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয় এলাকাবাসী। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ পর্নোভিডিও, পর্নোসিডি, পর্নো ম্যাগাজিন, পর্নো সিনেমা তৈরির সরঞ্জাম ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে চারজন মেয়ে ও সাতজন ছেলে বলে জানা গেছে।



মন্তব্য চালু নেই