স্বাগত ১৪২৩

বাঙালি জাতির মেতে ওঠার দিন আজ

আজ পহেলা বৈশাখ। পুরানো সব ঝেড়ে ফেলে শুরু হলো নতুন বছর। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত আনন্দের ভেলায় ভাসছে সারা বাংলা। ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষ সব মানুষ শামিল হবে বৈশাখী উৎসবে। সব ভেদাভেদ ভুলে বাঙালি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সবাই বরণ করবে ১৪২৩ বঙ্গাব্দকে।

বৈশাখী আমেজে প্রস্তুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। চারুকলা ইনস্টিটিউট বর্ষবরণের জন্যে গ্রহণ করেছে ব্যাপক প্রস্তুতি। একেবারে শেষদিনের প্রস্তুতিতে সর্বত্র সাজসাজ রব। শেষ তুলির আঁচড়ে রাঙিয়ে তোলা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার মোটিফগুলো।

গত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে বৈশাখ উদ্যাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পরিণত হয়েছে উৎসবের তীর্থভূমিতে। আর নগরবাসীকে তাই এ আনন্দ উদযাপনে ভিন্নমাত্রা এনে দিতে চারুকলার শিক্ষার্থীদের চোখে ঘুম ছিল না গত কয়েকটা দিন।

নববর্ষে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সমাজের জঞ্জাল সরাতে ঘোষণা করেছেন নতুনের মহত্তম আহবান ‘ঐ নতুনের কেতন ওড়ে…. তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদ বাংলা নববর্ষকে দাওয়াত করেন আরো প্রত্যয়মগ্ন হয়ে গভীর আকুলতায় ‘অগণ্য অসংখ্য বাধা ওড়ায়ে হয় প্রবল কণ্ঠে। তুলি পুরুষ হুংকার, হে বৈশাখ এসো…।’ পহেলা বৈশাখ, কেবল জ্যোতির্বিদ্যা নিরুপিত পৃথিবী আহ্নিক গতির ওপর নির্ভরশীল একটি দিন তা নয়। আমাদের জীবনে চেতনা এবং স্বকীয় সংস্কৃতির পরিচয়ও বটে।

গ্রামীণ জনপদে যেমন বাংলা নববর্ষের একটা অনস্বীকার্য প্রভাব রয়েছে। একইভাবে নগরজীবনেও পহেলা বৈশাখের প্রবল উত্তাল, আনন্দমুখর উৎসারণ যেন সকল পঙ্কিলতাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আকণ্ঠ আবেগ, মানবিক চৈতন্যের দরজায় এসে ডোরবেল বাজায়। লাল কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙ্গা অনুরাগে স্ফুরিত হয়ে বৈশাখ আসে বছর ঘুরে রমনার বটমূলে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাতাঝরা আঙ্গিনায়, টিএসসি, চারুকলার গভীর প্রাঙ্গণে।

ভোরবেলার মুখরিত ইলিশ-পান্তা ভোজন, মঙ্গল শোভাযাত্রা, লাল-সাদার শুদ্ধতা বিজড়িত নন্দিত প্রহর যেন বৈশাখের গলায় এক চিরকালীন সম্প্রীতির মালা পরিয়ে দিয়ে যায়। আর এ মালায় গ্রথিত ফুলের ঘ্রাণে বছরজুড়ে বাঙালীর প্রাণ যেন থাকে উদ্বেলিত।

হতাশা-গ্লানিময় অতীতকে ভুলে গিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে দলমত নির্বিশেষে আমরা সবাই যেন এগিয়ে আসি। নতুন বছর বয়ে আনুক আমাদের সকলের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। এই কামনায় আইরিশ বাংলা বার্তার পক্ষ থেকে সকলকে ১৪ ২৩ সালের শুভেচ্ছা।

এদিকে নতুন বছর শুরু হওয়ার ঘণ্টা কয়েক আগেই শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে রাজধানীসহ সারাদেশ। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে দেশবাসী।

বিশেষ করে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর সব মার্কেটের ক্রেতা-বিক্রেতারা রাস্তায় নেমে আসেন। ভূমিকম্পের সময় অনেক নারী পুরুষকে চিৎকার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই দিকবেদিক ছুটাছুটি করতে দেখা গেছে।

বুধবার রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে রাজধানীসহ সারাদেশ কেঁপে ওঠে। এসময় বাসা-বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে আসে সবাই। ভূমিকম্প শেষে সারাদেশে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই