বাড়ি ভাঙতেই গোপন ‘সুড়ঙ্গ’, ফেসবুকে তোলপাড়

‘সুড়ঙ্গ’ কথাটাই যেন জড়িয়ে রয়েছে রহস্যের সঙ্গে। গোপনীয়তার সঙ্গে। গুমখুন বা গা ঢাকা দিয়ে পালানোর ইতিবৃত্তের সঙ্গে।

আর ফেসবুকে যদি এমনই এক ‘সুড়ঙ্গ’-এর ছবি দেখা যায়, যা নাকি শহরেরই এক বাড়ি ভাঙতে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, তবে হুজুগ আটকাবে কে! আর সেই হুজুগেই সকাল থেকে মেতেছে কৃষ্ণনগর।

নদিয়ার এই ইতিহাস-বিজড়িত সদর শহরের গোলাপট্টিতে জলঙ্গির পাড়ে সেই বাড়িতে থাকেন শেফালি রায় নামে এক বৃদ্ধা। বাড়ি ভাঙতে গিয়েই না কি বেরিয়ে পড়েছে সুড়ঙ্গ। সোমবার বিকেল থেকেই লোকমুখে খবর ছড়াচ্ছিল। এলাকার দু’এক জন করে দেখতেও আসছিলেন। এর মধ্যে ফেসবুকে সুড়ঙ্গের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বাড়ির সামনে ভিড় বাড়তে থাকে। বেগতিক বুঝে দুপুরে বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় কোতায়ালি থানা এবং কাউন্সিলরকেও বিষয়টি জানান শেফালিদেবীরা। পুলিশ বিকেলে এসে ঘুরেও যায়।

শেফালিদেবী অবশ্য বলছেন, এটা আদৌ কোনও সুড়ঙ্গ নয়, বরং পুরনো বাড়ির ‘বেসমেন্ট’। তাঁর কথায়, ‘‘দেড়শো বছর আগে আমার শ্বশুরের কাকা এটি তৈরি করিয়েছিলেন। আমি শাশুড়ির কাছে শুনেছি, এই ঘরের নীচে ঘর ছিল। আমার শাশুড়ি ওখানে জ্বালানি ও কিছু জিনিসপত্তর রাখতেন।’’ তিনি জানান, ওই সময়ে বাড়িটি অনেক নিচুতে ছিল। মাটি ভরাট করায় ওই ঘরটি মাটির নীচে চলে যায়। এখন বাড়ি ভাঙতেই সেটি বেরিয়ে এসেছে। তাঁর মেয়ে গার্গী রায়ও একই কথা জানিয়েছেন।

পুরনো বাড়িটির একটি অংশ ভেঙে ফেলে এখন নতুন করে গড়া হচ্ছে। ক’দিন আগে এক ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে বাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছে। সোমবার দুপুরে একটি ঘর ভেঙে ফেলার পরেই নীচের ঘরটি দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু ‘সুড়ঙ্গ’ দেখতে আসা অনেকেই শেফালিদেবীর বক্তব্য মানতে নারাজ। স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভু চট্টোপাধ্যায় বা দিগনগর থেকে আসা বনমালি ঘোষেরা দাবি করেন, তাঁরা ওই গর্তে নেমেছিলেন। তাঁদের ধারণা, ওটা কোনও ঘরের অংশ নয়। বরং সুড়ঙ্গই, যার দু’দিক বন্ধ রয়েছে। তাঁদের মতে, আরও কিছুটা খুঁড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

বাড়িটি ভাঙার দায়িত্ব পেয়েছেন যে ঠিকাদার, সেই গঙ্গেশ সরকার বলেন, ‘‘ঘরের নীচে প্রায় ১২০ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট গভীর গর্ত মিলেছে। চুন-সুরকি দিয়ে ইটের গাঁথনি দেওয়া। সেটা সুড়ঙ্গ না ঘর ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সেখানে খালি দু’টি মাটির কলসি পাওয়া গিয়েছে।’’

গার্গী বলেন, ‘‘লোকজন ভিড় করায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় কোতোয়ালি থানা এবং স্থানীয় কাউন্সিলরকে খবর দিই আমরা।’’ স্থানীয় কাউন্সিলর অয়ন দত্তের বক্তব্য, ‘‘আমি বয়স্কদের কাছে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ওটা সুড়ঙ্গ নয়, বাড়ির বেসমেন্ট। এই এলাকায় আগে এই ধরনের বেসমেন্ট তৈরি করা হত জিনিসপত্র রাখার জন্য। নিচু এলাকায় মাটি ভরাট করার ফলেই সেটি চাপা পড়ে গিয়েছিল।’’ কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা এবং সদর মহকুমাশাসক মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই।



মন্তব্য চালু নেই