আসছেন চীনের প্রেসিডেন্ট

বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও উন্নয়নসহ ২৫টি চুক্তি চূড়ান্ত

আগামী ১৪ আক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। গত তিন দশকে এটিই কোন প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর। এই সফরে গুরুত্তপূর্ণ ২৫টি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। বানিজ্য সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ দমন, যোগাযোগ, সামুদ্রিক অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট এমন সময়েই বাংলাদেশ সফরে আসছেন যখন কাস্মীর ইস্যুতে ভারত পাকিস্তান দন্দ চরমে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও নেপাল সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ায় সম্মেলন ভন্ডুল হয়েছে। ভারত পাকিস্তান উভয় দেশই তার বন্ধু বৃদ্ধি করতে চাইছে। চীন সৌদি আরব সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ভারতের চিরবন্ধু রাশিয়া পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরো উষ্ণ করেছে। এমতাবস্থায় চীনের প্রসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অতি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় চীন এখন পর্যন্ত ২৯টি প্রকল্প চূড়ান্ত করেছে। এর বাইরে আরও অনেক প্রকল্প নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় তালিকায় থাকা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্পগুলোতে সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও যুক্ত করা হবে। এছাড়া বড় অংকের বিনিয়োগের আভাস পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত হলে তা দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণায় উল্লেখ করা হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বরাত দিয়ে প্রথম আলো জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে বিভিন্ন প্রকল্প, আর্থিক সহযোগিতা এবং চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনা চলছে। সফরের আগের দিন পর্যন্ত এ নিয়ে আলোচনা চলবে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটকে বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশ এবার প্রথমবারের মতো সন্ত্রাসবাদ দমনে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করতে যাচ্ছে। এটি সই হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ দমনে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করবে চীন। এ ছাড়া সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি চীন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও দেবে।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তির পর থেকেই সামুদ্রিক ক্ষেত্রে সহযোগিতায় আগ্রহ দেখিয়ে আসছে চীন। এরই ধারাবাহিকতায় চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারকে সই করবে। এর আওতায় সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বাংলাদেশকে প্রশিক্ষণ, গবেষণাসহ মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে চীন।

জানা গেছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা ওবোর নামে পরিচিত উন্নয়ন কৌশল ও রূপরেখায় ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবারের সফরের সময় এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে। ওবোরে যুক্ত হলে সিল্ক রোড ফান্ড (এই উদ্যোগে যুক্ত দেশগুলোর জন্য চীনের সরকারি বিনিয়োগ তহবিল) থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাবে বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্র বলেছে, চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সামনে রেখে সে দেশের উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল কাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছে। চীনের অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী কর্মকর্তারা ঢাকায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেবেন।

শি জিনপিং আগামী শুক্রবার সকালে কম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পরদিন সকালে তিনি ঢাকা থেকে ভারতের গোয়ায় যাবেন। দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের ২৪ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন স্টেট কাউন্সিলর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরকে ইতিমধ্যে ‘মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ফলে এ সফরে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘোষণা আসছে। পাশাপাশি শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা নতুন একটি স্তরে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই