বাধার মুখে পড়েও মোদিকে লেখা চিঠি হাইকমিশনে

বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে লেখা খোলা চিঠি ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে পৌঁছে দিতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান ও ধাওয়ায় অন্তত ১৫ জন আহত হন।

অবশ্য মিছিল করে চিঠি পৌঁছে দিতে না পারলেও পরে বেলা তিনটার দিকে জাতীয় কমিটির একটি প্রতিনিধিদল গুলশানে ভারতীয় হাইকমিশনে গিয়ে চিঠি দিয়ে আসে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন জাতীয় কমিটির নেতা বি ডি রহমতুল্লাহ, তানজীমউদ্দিন খান, রেহনুমা আহমেদ, মোশাইদা সুলতানা, কফিল আহমেদ ও কল্লোল মোস্তফা। কল্লোল মোস্তফা জানান, বি ডি রহমতুল্লাহ হাইকমিশনের ভেতরে গিয়ে এক কর্মকর্তার কাছে চিঠিটি পৌঁছে দেন।

পুলিশের এ বাধাকে অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘এই চিঠি দিতে যাওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এটি গণতান্ত্রিক অধিকার। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরছি। পুলিশের এ বাধা বাড়াবাড়ি।’ রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাতিলের দাবিতে তাঁদের কর্মসূচি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিরা চিঠিটি পৌঁছে দিয়েছেন।

মিছিলে পুলিশের বাধার প্রতিবাদে মালিবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ২০ অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে কমিটি। এর মধ্য দিয়ে আজকের কর্মসূচির সমাপ্তিও ঘোষণা করা হয়। ওই দিন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিকেল চারটায় কর্মসূচি পালিত হবে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কমিটির নেতারা ও বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। সেখানে তাঁরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এরপর সেখান থেকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাঁরা মিছিল নিয়ে বিজয়নগর, শান্তিনগর হয়ে গুলশানের দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু বেলা একটার পর মৌচাক মোড়ে মিছিলটি পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে কিছুটা ধস্তাধস্তি হওয়ার পর মিছিলকারীরা আরও সামনে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আহত হন অন্তত ১৫ জন। এঁদের মধ্যে সজীব নামে ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মালিবাগের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জাতীয় কমিটির মহানগর নেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম দাবি করেন, এ হামলায় তাঁদের অর্ধশত নেতা–কর্মী আহত হন। পুলিশ জলকামান থেকে পানি ছোড়ে এবং কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোড়ে।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ঘটনাস্থলে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, মিছিলটিকে মৌচাক মার্কেটের সামনে থামতে বলা হয়। তাদের বলা হয়, তারা চাইলে একটি প্রতিনিধিদল গিয়ে চিঠিটি দিয়ে আসতে পারে। এভাবে রাস্তা আটকে মিছিল করলে যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সেখানে বাধা উপেক্ষা করে তারা মালিবাগের দিকে অগ্রসর হতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মোদির উদ্দেশে লেখা খোলা চিঠিটি পাঠ করেন আনু মুহাম্মদ। চিঠিতে প্রকল্পটি বাতিলের আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি বাংলাদেশে করতেই হয়, তাহলে অন্য কোথাও করা হোক। সেখানে পরিবেশের এত বড় ক্ষতি হবে না। কিন্তু সুন্দরবন একটি। এটিকে ধ্বংস করা চলবে না। তাঁরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে প্রকল্পটি বাতিলের আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য দেন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজীমউদ্দিন খান প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই