বাবুল হত্যা : পাঁচ পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

চা বিক্রেতা বাবুল মাতুব্বরের আগুনে পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় মিরপুরের শাহআলী থানার ওসি একেএম শাহিন মন্ডলসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে পুলিশেরই তদন্ত কমিটি। এই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির সুপারিশ করেছে কমিটি। পাঁচজন হলেন- ওসি একেএম শাহিন মণ্ডল, উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুর রহমান খান ও নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন। তবে শ্রীধাম হালদার নামের একজন এএসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বাংলামেইলকে জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে পাঁচজনের বিরুদ্ধে দায় বা অভিযোগ স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এসআই মমিনুর রহমান খান, এসআই দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন ঘটনাস্থলে থেকে বাবুলের মৃত্যুর সময় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এসআই নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা এক আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। ওসি শাহিন মণ্ডল পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন।

রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে তদন্ত ওই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে বলে বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছেন উপ-কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার। সূত্র জানায়, ঘটনার পর শাহআলী থানার এই দু’জন এসআই, দু’জন এএসআই ও একজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় থানার ওসি এ কে এম শাহীন মণ্ডলকে।

সূত্র জানায়, কমিটি ওসি শাহিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে সেটা হলো বাবুলের মৃত্যুর আগে ও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তার অধীনে থাকা পুলিশ সদস্যদের জবাবদিহিতা, নিয়ন্ত্রণ এবং সর্বোপরি পেশাদারি আচরণ তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি বলে তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনা হয়।

এসআই মমিনুর রহমান খান, এএসআই দেবেন্দ্রনাথ ও কনস্টেবল জসিম উদ্দিন সেই বুধবার রাতে বাবুলের শরীরে আগুন লাগার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা সেখানে থাকা অবস্থায় সোর্স দেলোয়ার ও আইয়ুব আলী বাবুলের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়, যাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যের চরম অবহেলা এবং অপেশাদারী আচরণ ফুটে উঠেছে বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

এদিকে এসআই নিয়াজ উদ্দিন মোল্লা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের সোর্স আইয়ুবকে আটক করে তার কাছে সোপর্দ করেন। তার হেফাজত থেকেই আইয়ুব পালিয়ে যায়। এতে নিয়াজ উদ্দিনের চরম গাফিলতি ও অপেশাদারি আচরণ ফুটে উঠেছে বলে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

অন্যদিকে এএসআই শ্রীধাম চন্দ্র হালদার ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে দাবি করেন বাবুলের স্বজনরা। এর আগে শ্রীধাম সোর্স দেলোয়ার ও আইয়ুবকে দিয়ে কয়েকবার টাকা দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ তাদের। তবে তদন্ত কমিটি শ্রীধামের কোনো অবহেলা খুঁজে পায়নি।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় শাহআলী থানার ওসি শাহিন মণ্ডল কোনভাবেই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। পুলিশের অন্য সদস্যরাও ঘটনায় দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। তারা দায়িত্বশীল হলে চা বিক্রেতাকে মরতে হতো না। এ ঘটনায় পুরো পুলিশ বিভাগকে ভাবমূর্তি সঙ্কটে পড়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চা বিক্রেতার মৃত্যুর ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওসিসহ শাহআলী থানার অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে।

গত বুধবার রাতে মিরপুর-১ নম্বর গুদারাঘাট এলাকায় পুলিশের সামনে সোর্সের লাথিতে নিজের দোকানে স্টোভের আগুনে পুড়ে দগ্ধ হন বাবুল মাতুব্বর। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। রাতেই তড়িঘড়ি করে বাবুলের মেয়ে রোকসানা আক্তারকে বাদী করে একটি মামলা নেয় পুলিশ। একইদিন পুলিশের দুটি কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ডিএমপি সদর দপ্তরের উপ-কমিশনার (ডিসিপ্লিন) টুটুল চক্রবর্তী একটি কমিটির প্রধান। অপর কমিটির প্রধান করা হয় ডিএমপির মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মাসুদ আহমেদ খানকে।



মন্তব্য চালু নেই