বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের চাবি পানির নিচের বিশাল পিরামিডে! সত্যটা আসলে কী?

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মানেই রহস্যের আলো-আঁধারিতে ছেয়ে থাকা এক সমুদ্রক্ষেত্র। যাকে নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই, কিন্তু, রহস্যের সমাধান আজও অধরা।

কয়েক বছর ধরেই ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ নামে একটি ভিডিও। যাতে দাবি করা হয়েছে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সমুদ্রের তলায় খোঁজ মিলেছে একটি ক্রিস্টাল পিরামিডের। যার আয়তন এবং উচ্চতা মিশরের বুকে থাকা পিরামিডগুলোর থেকে কয়েক গুণ বেশি।

ভিডিও-তে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, জলের তলায় ওই পিরামিডে বিশেষভাবে খোঁজ চালিয়েছে ফ্রান্স এবং আমেরিকার যৌথ গবেষণাকারী দল। পিরামিডটির আয়তনও মাপা হয়েছে। যাতে নাকি দেখা গিয়েছে পিরামিডটি ৩০০ মিটার চওড়া এবং লম্বায় ২০০ মিটার। এমনকী, পিরামিডগুলির গায়েও নাকি মিলেছে বিশাল গর্ত। যেখান দিয়ে সমুদ্রের জল সমানে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। এর ফলে জলের উপরে বিশাল ঢেউ এবং ঘূর্ণি তৈরি হচ্ছে। আর এই সামুদ্রিক ঘূর্ণির কবলে পড়েই নাকি বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছে একের পর এক বিমান, জাহাজ, নৌকা।

কিন্তু, এই পিরামিড কী ভাবে এখানে এল? তা নিয়ে স্পষ্ট করে ভিডিওটিতে কিছু বলা হয়নি। তবে, এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের সঙ্গে যে ভিনগ্রহের জীবেদের যে কাহিনি জড়িয়ে আছে তা উল্লেখ করা হয়েছে এই ভিডিওটিতে।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যানুসন্ধানে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ১৯৮০ সালে হিস্ট্রি চ্যানেল ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’-এর জলের তলায় রহস্যময় পিরামিড নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছিল। যার নাম ছিল ‘দ্য বিমিনি ওয়াল’। এই ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছিল প্রকৃতিবিদ এবং অভিযাত্রী রে ব্রাউনের দাবি করা কিছু তথ্যের উপরে ভিত্তি করে। রে ব্রাউনের দাবি ছিল, ১৯৬৮ সালে তিনি এবং তাঁর বন্ধু ছুটি কাটাতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলেন। একদিন বাহামার সমুদ্র উপকূলের কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের জলের তলায় তাঁরা ডাইভিং করছিলেন।

কিন্তু, মাঝরাস্তায় বন্ধুর থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এমন সময়েই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে সমুদ্রের তলায় বিশাল এক প্রাচীন শহর তাঁর নজরে আসে। শহরের মাঝখানে নাকি একটি দৈত্যাকারের ক্রিস্টাল পিরামিড তিনি দেখতে পান। এমনকী, পিরামিডের গায়ে বিশাল আকারের গর্তও নাকি তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন।

বোঝাই যাচ্ছে ‘দ্য হিস্ট্রি চ্যানেল’-এর এই ডমুমেন্টারি থেকে তথ্য সংগ্রহ করেই বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সাম্প্রতিক ভিডিওটি তৈরি হয়েছে। তবে, এই ভিডিও-র কোথাও কৌশলে রে ব্রাউনের প্রসঙ্গ আনা হয়নি। রে ব্রাউন যা দাবি করেছিলেন, তা নিয়ে কোনওদিনই সরকারি স্তরে কোনও গবেষণা হয়নি। রে ব্রাউনের দাবির পক্ষে কোনও তথ্যও পাওয়া যায় না। এমনকী, রে ব্রাউন নিজেও মৌখিক বর্ণনা ছাড়া কোনও তথ্য-প্রমাণ দিতে পারেননি।

সাম্প্রতিকতম ভিডিওতে যে ফ্রান্স ও আমেরিকার যৌথ গবেষণার কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কেও কোনও তথ্য পাওয়া যায় না। কেউ কেউ আবার কয়েক কদম এগিয়ে কল্পিত এই ক্রিস্টাল পিরামিডকে ভিনগ্রহের যান বলে বর্ণনা করেছিলেন। সেটাও যে একটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়, তা একটু খতিয়ে ভাবলেই বোঝা যায়। যে ক্রিস্টাল পিরামিডের বাস্তব অস্তিত্বটাই এতটা ধোঁয়াশায় ভরা ,সেটা যে নিছক গুজব ছাড়া আর কিছুই নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের আবরণ রহস্যেই মোড়া থাকছে।



মন্তব্য চালু নেই