বার্থে আটকা বাবা, কয়েক ইঞ্চি দূরে মেয়ের মৃত্যু

কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব। বাবা ট্রেনের বার্থে আটকা। পাশেই মেয়ে চিৎকার করছিল। বাবা, বাঁচাও…কোথায় তুমি…দয়া করে বাঁচাও বাবা। আধা ঘণ্টা ধরে মেয়ের এমন আর্তচিৎকার শুনেছেন বাবা। কিন্তু অতি কাছে থেকেও কিছুই করতে পারেননি তিনি। ফলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মেয়ে।

এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ভারতের ভোপালে রোববার ভোররাতে ইন্দোর-পাটনা এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায়।

ওই ট্রেনের বি-৩ বগির যাত্রী ছিলেন সত্যেন্দ্র সিং (৫৫)। ট্রেন দুর্ঘটনায় তার মেয়ে রাগিনী সিং এবং স্ত্রী গীতা সিং মারা গেছেন।

সত্যেন্দ্রর ছেলে অজয় বলেছেন, বগিটির যাত্রীদের মধ্যে তার বাবাই একমাত্র প্রাণে বেঁচেছেন। তার মা ও বোনসহ অন্য যাত্রীরা মারা গেছেন।

দুর্ঘটনার কারণে সত্যেন্দ্র যে স্টিলের বাংকারে ছিলেন তা দুমড়ে মুচড়ে যায়। এ কারণে তার চেহারা থেতলে যায়, নাক ভেঙে যায়। তার কাঁধ এবং পা বেঁকে যাওয়া স্টিলে আটকে যায়। এ কারণে মেয়ে বাঁচার জন্য চিৎকার করলেও তিনি তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতে পারেননি।

এক পর্যায়ে মেয়ে রাগিনী নিস্তব্ধ হয়ে যান। এর চারঘণ্টা পরে সত্যেন্দ্রকে উদ্ধার করা হয়। তবে সোমবার সকাল পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে তার স্ত্রী গীতাও মারা গেছেন।

সত্যেন্দ্রকে উদ্ধার করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ভোপাল থেকে কানপুরের নিজ বাড়িতে নেয়া হয়েছে। একই অ্যাম্পুলেন্সের তার দুই পাশে দুটি স্ট্রেচারে মৃত স্ত্রী-কন্যাও শায়িত ছিল।

সত্যেন্দ্রের ছেলে অজয় (২৪) দিল্লিতে কর্মরত। তিনি জানান, তার বাবা-মা ও বোন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাটনা থেকে হাজিপুরে যাচ্ছিলেন।

অজয় বলেন, খবর পেয়ে আমি খবর পেয়ে কানপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবার ছুটে যাই। এ সময় বাবা বলেন কিভাবে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বলেছেন সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিল তখনই ট্রেনটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই সব কিছু দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং তিনি বার্থের স্টিলের ভাঁজের মধ্যে আটকা পড়ে যান।

দুর্ঘটনায় দুই বার্থের মাঝে চাপা পড়ে তাৎক্ষণিক মারা যান গীতা সিং। এর কিছুক্ষণ পর বোন রাগিনী সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও তার কিছুই করতে পারেননি বলে জানান অজয়।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে সকাল থেকে আমরা বাবাকে ফোন করতে থাকি। কিন্তু বাবা বলেছেন, ফোনটি তার বাঁ পকেটে থাকলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করতে পারেননি, কারণ তিনি একটি আঙ্গুলও নাড়াতে পারছিলেন না। সূত্র: টাইমস অব ইনডিয়া



মন্তব্য চালু নেই