বার্মায় মুসলিম গণহত্যায় কেন চুপ করে আছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি?

বার্মা তথা মিয়ানমারের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগের। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর জাতিগত নিপীড়ন আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটে চলেছে। দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি দীর্ঘদিন দেশটির জান্তা সরকারের নানা চাপের মধ্যে ছিলেন। রোহিঙ্গা নির্যাতনের ইস্যুতে আগে তাঁকে কোনো কথা বলতে শোনা যায়নি। এখন তাঁর দল দেশটির ক্ষমতায়। কিন্তু এখনো বিষয়টিতে তাঁকে কোনো উচ্চবাচ্য করতে দেখা যাচ্ছে না। তাই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দেশে-বিদেশে।

সু চি ও তাঁর দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসার প্রায় চার বছর আগে ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রোহিঙ্গারা হতাহতের শিকার হয়। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে এখনো শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সু চি সে সময় এ নিয়ে তেমন উচ্চাবাচ্য করেননি। সাম্প্রতিক সহিসংতার সূত্রপাত গত মাসে। অক্টোবরের প্রথম দিকে সন্ত্রাসী হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর সেখানে সেনাবাহিনী অভিযানে নামে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে এখন গ্রেপ্তারের পাশাপাশি চলছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও ঘরবাড়ি জ্বালাও-পোড়াও। অথচ সু চির সরকার রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা দূরে থাক, সেনাবাহিনীর অভিযানটা পর্যন্ত আটকায়নি।

এমন সংকটেও সু চি যেন দীর্ঘদিনের অভ্যাসের বশেই চুপ করে আছেন—এমন মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ওয়ার। এ ছাড়া ব্যাংককভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ বলেছেন, এ সরকার একদম মুখের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করল। এনএলডির জন্য এটা ভালো লক্ষণ নয়। প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সরকার যখন তা ভঙ্গ করে তখন তা দেশের প্রত্যেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সু চির সরকারের ব্যাপারে স্মিথ বলেন, ‘ওনার (সু চি) সরকারের ব্যাপারে আমি কতটা হতাশ, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’ তাঁর সন্দেহ, সরকার আদৌ রাখাইনে সেনাবাহিনীর তৎপরতা ঠেকাতে পারবে কি না। উল্লেখ্য, জান্তা সরকারের আমলে প্রণীত সংবিধান অনুসারে এখনো পার্লামেন্টের এক-চতুর্থাংশ আসন সেনাবাহিনীর অধিকারে। সেই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা দপ্তরও তাদের করায়ত্ত। ফলে সরকার আদতে কতটা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্মিথ।

স্থিতিশীল দেশের আশায় জনগণ বিপুল হারে ভোট দিয়ে সু চির দলকে নির্বাচিত করলেও সে আশার গুড়ে বোধ হয় বালি পড়তে যাচ্ছে—এমন আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বর্তমানে মিয়ানমার সরকারের রাখাইনবিষয়ক কমিশনের প্রধান কফি আনান। সূত্র : সিএনএন।



মন্তব্য চালু নেই