বাসর রাতে স্বামী যদি বুঝতে পারে আমি সতী নারী না, তখন কী করব?

“অনেক ইচ্ছা করে মন খুলে কাউকে জীবনের সব কথা খুলে বলি। কিন্তু তা সম্ভব না। এতো বেশি ভুল আমার জীবনে। নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়। আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমরা মধ্যবিত্ত তবুও বাবা মা অনেক কষ্ট করে আমার সব চাওয়া পূরণ করার চেষ্টা করে। লেখাপড়ায় ছোটবেলা থেকেই মনোযোগ খুব কম। তবে ভালো রেজাল্ট করি বরাবর। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করি ক্লাস সেভেনে। আমার কথিত এক বন্ধুর সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়। দুজনেরই সম্মতিতে। এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ জানে আমার মতো ইনোসেন্ট মেয়ে আর হয়না। নিজেকে খুবই লজ্জিত মনে হয় তখন।

তো ওই কথিত বন্ধুর সাথে এক বছর ধরেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম। কয়েক সপ্তাহ পর পর ই যেতাম নিম্ন মানের হোটেলে। এক পর্যায়ে আমি আমার ভুল বুঝতে পারি। আমি এসব বন্ধ করে ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। বলে রাখি, ও আমার প্রেমিক ছিলোনা। বিয়ে করবে এরকম আশাও দেয়নি। এখন ও অনেক দূরে থাকে। কথা হয় মাঝে মাঝে বন্ধু সুলভ। আমরা দুজনেই বিগত দিনের কাজের জন্য অনুতপ্ত।

এখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি। আমার অনেক ছেলের সাথে এমনই সম্পর্ক ছিলো সবাই আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে যায়। আমি তখন খুবই কষ্ট পাই। অবশ্য কিছুদিন পর ভুলে যাই আবার নতুন সম্পর্কে জড়াই। আমার আম্মুর দিকের ফ্যামিলি অনেক উচ্চ পর্যায়ে আর আমার আব্বুর দিকের ফ্যামিলি একটু নিম্ন পর্যায়ে। আমার অনেক আত্মীয়রা ইশারায় বুঝিয়েছে ভালো ছেলে খুঁজে আমার নিজেরই প্রেম করে বিয়ে করতে হবে। ফ্যামিলির মাধ্যমে ভালো যায়গায় বিয়ে হবেনা।

আমার মাথায় অনেক চিন্তা। আমার হাসবেন্ড নিশ্চই বুঝবে আমার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছিল বিয়ের আগে। আমি এখন কী করবো??? আমার পড়ায়ও মন নাই। ভালো ১টা বি.এফ ছিলো। ভালো জব করে। সব দিকেই ভালো। ও ফিজিক্যাললি ক্লোজ হতে চাইছে, আমি দেইনি তাই ব্রেকআপ করছে। এই ছেলেকেও ভুলতে পারছিনা। খুব কষ্টে আছি। প্লিজ সমাধান দিন।

১. পরামর্শ:

সংযুক্তি হিসেবে একটা কথা বলি। আপনি বলেছেন, “এখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি। আমার অনেক ছেলের সাথে এমনই সম্পর্ক ছিলো সবাই আমাকে ধোঁকা দিয়ে চলে যায়।” …এটা একটা ভয়াবহ লক্ষণ। সত্যি সত্যি যদি তাই হয়, তাহলে আপনার সোশিওপ্যাথ হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর। তবে এ থেকেও মুক্তি আছে। আশার কথা হচ্ছে আপনি পরামর্শ চাইছেন। আপনি নিজেকেই শুধরে নিতে পারবেন যদি নিজের “ইগো” সরিয়ে রেখে পরামর্শ অনুসরণ করেন।

এ ধরনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়েই একটা কথা মনে চলে আসে…”যা হবার তো হয়েছেই, আর কি ক্ষতি হবে, সুতরাং চলুক”। এ ভাবনা মাথায় আসতে পারে, কিন্তু ভুলেও তাকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমাদের মতো সমাজে “সতীত্ব”কে শরীরকেন্দ্রীক দেখা হয়, যদিও এটা সম্পূর্ণই মানসিক বিষয় বলেই আমি মনে করি। সুতরাং কিছুই হারানোর নেই, বরং পাওয়ার অনেক কিছু আছে, যদি নিজেকে শক্ত করে শুধরে নিতে পারেন।

কনফেশন একটা বড় উপায় এ থেকে উদ্ধার পাবার। তাতে আর কিছু না হোক, নিজের মধ্যে আত্মগ্লানিকে একটু ছাড় দেয়া যায়, নিজের অবস্থানকে যাচাই করা যায়। আর সত্যিকার অর্থে, ভবিষ্যতে যার সাথে আপনার জীবন কাটবে, তার কাছে সত্য গোপন না করাটাই ভালো। তাতে অল্পসময়ের জন্যই হয়তো মুক্ত থাকবেন, কিন্তু আপনার “আনসেটেল্ড” অতীত সামনে এসে দাঁড়াতেই পারে। তখন তা বিব্রতকর এবং যেকোন বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর অবশ্যই।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়া করবেন না। একটা থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেকটা সম্পর্কে জড়ানো কোন সমাধান নয়। তাকেই বেছে নিন, যে আপনাকে সবকিছু জেনে মেনে নিয়ে ভালোবাসে, আপনার সত্যিটুকু জেনে যদি সে চলে যায়, তাহলে বুঝবেন, সে ভালোবাসা আপনার জন্য না, কখনো ছিলও না। তখন অপাত্রে ভালোবাসা দান করবেন না।

আর যিনি সত্যি সত্যি আপনাকে বিশ্বাস করবেন, ভালোবাসবেন, তিনি সব কিছু জেনেই মেনেই ভালোবাসবেন। ফলে বিয়ে-পূর্ববর্তী যৌন সম্পর্ক অথবা অনেক সম্পর্ক পরবর্তীতে আপনার দাম্পত্য জীবনে সামনে এসে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাই কম। তবে সতর্ক থাকবেন, তার বিশ্বাসভঙ্গের কারণ কখনো হবেন না।
আপনার জন্য শুভকামনা।

২. পরামর্শ:

তুমি কি অবলীলায় একের পর এক ভুল করে ফেলেছ আপু। তারপরও সান্ত্বনা এটাই যে তুমি বুঝতে পারছ যে এগুলো তোমার ভুল। তবে তোমার ধারণাই নেই যে এই অল্প বয়সে কি মারাত্মক সব ব্যাপারে জড়িয়ে গেছ তুমি। এবং তাঁর সবই নিজের দোষে।

তোমার শেষ কথাটা দিয়ে শুরু করি। তোমার প্রেমিক মোটেও ভালো না। তুমি যে লিখলে সে সবদিক দিয়ে ভালো, এটা তোমার ভুল ধারণা। ভালো মানুষ হলে সে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য ব্রেকআপ করতো না। তুমি যদি রাজিও হতে, সে তোমাকে ইউজ করে তারপর চলে যেত। রাজি না হয়ে ভালো করেছ।

দ্বিতীয়ত, এত অল্প বয়সে একের পর এক প্রেম করা, ক্লাস সেভেনে ছেলের সাথে হোটেলে যাওয়া আর লেখাপড়ায় অমনোযোগী বলে বিয়ে করতে চাওয়া মোটেও কোন বুদ্ধিমতীর কাজ নয়। এমনকি মানসিক স্থিরতার লক্ষণও নয়। এবং সত্যি কথাটা হচ্ছে এতে তুমি কোনদিনও সুখী হবে না। বরং তোমার সমস্যা দিন দিন বাড়বে আর বাড়তেই থাকবে। তাই এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কখনো কি ভেবেছ যে মা বাবা জানতে পারলে কী হবে? তোমার বাবার ফ্যামিলি নিচু, এই ধরণের চিন্তা মাথায়ই বা কী করে আসে। কারা তোমার মাথায় দেয় এইসব বাজে ভাবনা? বিয়ে নিজের পছন্দেই করা উচিত, তবে সেটা অবশ্যই মা বাবার সম্মতিতে এবং যখন বিয়ের বয়স হবে তখন।

হ্যাঁ, স্বামী অবশ্যই বুঝবেন যে তোমার আগে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল এবং সেটা তিনি ভালোভাবে নও নিতে পারেন। তাই তোমার উচিত হবে মন দিয়ে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। তারপর কোন একটি ভালো মানুষের সাথে যদি সম্পর্ক হয়, তাঁকে সব সত্য জানিয়ে তবেই বিয়ে করা। নিজের পায়ে না দাঁড়ালে একের পর এক ভুল প্রেমে জড়াবেই তুমি। আর শোন, মানসিক স্থিরতা ফিরে পাওয়ার জন্য কাউন্সিলিং করাতে পারো।



মন্তব্য চালু নেই