বাস ভাড়ায় নৈরাজ্য: মালিক-শ্রমিকরাই সর্বেসর্বা

রাজধানীতে গণপরিবহন ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। চলতি মাসের প্রথমদিন থেকেই কার্যকর হয়েছে বর্ধিত বাস ভাড়া। যাত্রীরা অভিযোগ করছে, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি টাকা আদায় করছে শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের দৌরাত্ম বন্ধে কার্যকর কিছুই করছে না বিআরটিএ।

সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস বা সিএনজির দাম বাড়ানোর পর সরকার ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগর এবং আশেপাশের জেলার বাস ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা বাড়িয়েছে। কিন্তু বাস মালিক ও শ্রমিকরা নিচ্ছে এর দ্বিগুণ বা তিনগুণ বা তার চেয়েও বেশি। আবার মিনিবাসের সর্বনিম্ন ভাড়া আগের মতোই পাঁচ টাকা এবং বড় বাসের সাত টাকা থাকছে। তবে বড় বাসে এখন রাজধানীতে ১২ টাকার কমে সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় না। মিনিবাসেও কোথাও কোথাও সাত টাকা করে আদয় করা হচ্ছে।

বাড়তি ভাড়ার ওপর অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে এখন পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ছাড়াও যন্ত্রাংশসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধির অযুহাত তুলছেন। অথচ সরকারের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এসব বিবেচনা করেই।

আবার বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রথম দুই একদিন ঝগড়া বিবাদ হলেও সরকারি সংস্থার উদ্যোগহীনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে যাত্রীরা। বিনা বাক্যব্যয়ে অন্যায় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

আবার কোন রুটে কত ভাড়া সে বিষয়ে বাসে চার্ট টাঙানো থাকার কথা থাকলেও যাত্রীদের তা দেখানো হয় না। বিআরটিএ বলছে, তারা ভাড়ার নতুন চার্ট সরবরাহ করে দিয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম মানতে বাধ্য করানোর কোন কার্যকর ব্যবস্থাই নেই। আবার পরিবহণ কোম্পানি ও শ্রমিকরা দাবি করছেন, নতুন ভাড়া কার্যকরের পাঁচ দিনেও দূরত্ব অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা হাতে পাননি তারা।

গুলিস্তান থেকে আবদুল্লাহপুরগামী ৩ নম্বর বাস আগে শাহবাগ থেকে মহাখালী যেতে পাঁচ টাকা ভাড়া দিতে হতো। তবে, নতুন ভাড়া কার্যকরের দিন থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে আট থেকে ১০ টাকা করে আদায় করছে তারা।

যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১২ রুটে চলাচলকারী শিকড় পরিবহনে মোটের ওপর দুই টাকা ভাড়া বেড়ে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শিকড় পরিবহন ফার্মগেট পর্যন্ত আগে ২০ টাকা ভাড়া নিত। যা মিরপুরের ভাড়া বলে তারা আদায় করতো যাত্রীদের কাছ থেকে। এখন সেই ভাড়া ২২টাকা দিতে হচ্ছে যাত্রীদের।

খিলগাঁও থেকে মোহাম্মদপুরে চলাচলকারী মিডওয়ে পরিবহনের একাধিক বাসের কর্মী জানান, মালিকপক্ষ তাদের এখনও নতুন নিয়মে বেশি ভাড়া আদায়ের নির্দেশ দেয়নি। ২/১ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

সরকার নির্ধারিত ভাড়া বাড়ানোর তালিকায় হিউম্যান হলারের বিষয়টি নির্ধারিত না হলোও এর মধ্যে তারও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করছে। মোহাম্মদপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত আগে হিউম্যান হলার (লেগুনার) ভাড়া ছিল ২০টাকা। এখন তারা আদায় করছে ২৭টাকা। ফার্মগেট থেকে মিরপুর-২ (গ্রামীণ ব্যাংক ভবন) পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১৫ টাকা এখন আদায় করা হচ্ছে ১৮টাকা।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য হচ্ছে। কিন্তু এ নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। সরকার বাস ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে যতটুকু আন্তরিক অন্যদিকে যাত্রীদের অধিকার রক্ষায় ততটুকু উদাসীন’।

বিআরটিএ সচিব শওকত আলী বলেন, ‘ভাড়া বাড়ানোর পরই একটি প্রতিক্রিয়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করছি। এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি’।

বিআরটিএ জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ভাড়ার চার্ট বাসে সংরক্ষণ না করাসহ নানা অভিযোগে রাজধানীতে ৫৪টি মামলা করেছে তারা, জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬৪ হাজার সাতশ টাকা। রবিবার বিআরটিএর তিনটি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে এই ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি সংস্থাটি। যাত্রী অধিকার নিশ্চিতে অভিযান চালু থাকবে বলেও জানিয়েছে তারা। ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই