বিআইএফসির ৫১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ!

বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর মান্নানের (অব.) মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানতের অধিকাংশ অর্থই তিনি এবং তার সহযোগিরা ঋণ হিসেবে নিয়ে ফেরৎ দেননি। উপরন্তু সেই অর্থ অন্য হিসাবে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) আমানতের ৫৩৮ কোটি টাকার মধ্যে ৫১৮ কোটি টাকা মেজর মান্নান (অব.) এবং তার সহযোগিরা ঋণ নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মেজর মান্নানের সানম্যান গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি থেকে তিনি ও তার পরিবারারের সদস্যরা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আমানতের ৫১৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। যা ধরা পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে। এরপর ছয় মাস সময় দেওয়ার পরও তারা এই টাকা পরিশোধ করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে ধরা পড়ে, প্রাক্তন চেয়ারম্যান মেজর আব্দুল মান্নান (অব.), বর্তমান চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মান্নান, পরিচালক রইস উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, মহিউদ্দিন, আকবর হোসেন, আবদুল ওহাব ও আয়েশা খানম তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ হিসেবে এ অর্থ নিয়েছেন। অধিকাংশ ঋণই নেওয়া হয়েছে মেজর মান্নানের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান সানম্যান গ্রুপ অব কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে।

পরিদর্শনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিচালক এ এন এম জাহাঙ্গীর আলম তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মটর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও রহমতউল্লাহ অ্যান্ড কোম্পানির নামে ২৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি। যা সুদ-আসলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এরমধ্যে রহমতউল্লাহ অ্যান্ড কোম্পানির টাকা মেজর মান্নানের মালিকাধীন প্রতিষ্ঠান সানম্যান ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে।

পরিচালক রোকেয়া ফেরদৌস তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এ সব প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণের অধিকাংশই স্থানান্তর করা হয়েছে মেজর মান্নানের সানম্যান গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে। এভাবে সর্বমোট তুলে নেওয়া হয়েছে ৫১৮ কোটি টাকা। বিস্ময়কর হলো- এসব ঋণের অধিকাংশই বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি বিভাগকে অবহিত করা হয়নি।

এসব অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম মান্নান। যদিও তিনি তার মৃত পিতার নামে একটি ঋণ হিসাবে আট কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা করে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের আড়ালে অবৈধভাবে এসব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিআইএফসি’র পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ দিকে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার দুদকের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।



মন্তব্য চালু নেই