বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার কেনায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ

নদী খননে ৩শ’ কোটি টাকায় কেনা বিদেশি ১১ ড্রেজারের কারিগরি মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নদী খননসহ ও নিয়মিত পলি অপসারণে ‘২টি ড্রেজার প্রকল্পের আওতায়’ ২০১১ সালে ৩টি এবং ‘১০টি ড্রেজার প্রকল্পের আওতায়’ ২০১৪ সালে দু’দফায় ৮টি খনন যন্ত্র কেনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

কেনার ৫ বছরের মধ্যেই এসব ড্রেজার কার্যক্ষমতা হারাতে বসেছে। তিনটি ড্রেজার অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অন্য খননযন্ত্রের অবস্থাও বেশ খারাপ। ড্রেজার স্পাড, কাটার, কপ্পা, পাম্পসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি ভেঙে গেছে। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি লাগানোয় এ অবস্থা হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

ড্রেজার ক্রয় চুক্তির শর্ত অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেনি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের যন্ত্রাংশ লাগিয়ে এসব ড্রেজার বিআইডব্লিউটিএ-কে বুঝিয়ে দেয়া হয়। ড্রেজারের যে ডিজাইন ও স্পেসিপিকেশন টেন্ডারে চাওয়া হয়েছিল সরবরাহের সময় তা অনুসরণ করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, এ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন প্রকৌশলীর সহযোগিতায় এ সুযোগ করে নেয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের যন্ত্রপাতি লাগিয়ে ড্রেজার সরবরাহে সহায়তার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ কোটি টাকা নিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন প্রকৌশলী।

সরবরাহের পর তড়িঘড়ি ঠিকাদার কোম্পানির পুরো বিলও পরিশোধ করে দেয়া হয়। দ্রুত এ বিল একবারে পাইয়ে দিতেও বিনিময় নিয়েছেন প্রকৌশলীত্রয়। বিনিময়ের পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

বিআইডব্লিউটিএ-র ঠিকাদার মো. আখতার হোসেনের অভিযোগ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঠিকাদার সংস্থার এ তিন প্রকৌশলীর দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অভিযুক্ত প্রকৌশলীরা হলেন— বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আতাহার আলী সরদার, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আইয়ুব আলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রকল্প পরিচালক) রবিউল ইসলাম।

ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘১০টি ড্রেজার প্রকল্পের আওতায়’ ২০১৪ সালে কোনো প্রকার টেস্ট, ট্রায়াল ছাড়াই ৮টি ড্রেজার বুঝে নেয়া হয়েছে। ড্রেজারগুলোর সঙ্গে স্পেয়ার পার্টস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ নেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা নেয়া হয়নি।

এছাড়া ড্রেজারের ডিজাইন ও স্পেসিপিকেশনের শর্তও মানা হয়নি। এতে আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে সবগুলো ড্রেজার নষ্ট হয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এ দুর্নীতি ও অনিময়ের অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, যে কোন ঠিকাদারি কাজের কার্যাদেশ নিতে এই তিন প্রকৌশলীকে ৫ শতাংশ হারে উৎকোচ দিতে হয়। দাবি পূরণ না হলে নানাভাবে ঠিকাদারদের হয়রানি করা হয় বলেও ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ঠিকাদার।

ঠিকাদার মো. আখতার হোসেন তার প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো অভিযোগে আরও বলেন, ‘১০ ড্রেজার প্রকল্পের আওতায় ৩টি সার্ভে ভ্যাসেল, ট্রাক বোট সংগ্রহে ডাকা টেন্ডারে তাকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। বর্তমান বাজার দরের চেয়ে ওই কাজ ১৫ কোটি টাকা বেশিতে প্রদান করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগের নথি অনুয়ায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় না করে, ড্রেজিং না করেও কাগজে-কলমে হিসাব দেখিয়ে বছরে ২৫ কোটি তুলে নিয়েছে এ চক্র। আব্দুল মান্নান হাওলাদার ও ড. সামছুদ্দোহা খন্দকার বিআইডব্লিউটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় থেকেই ড্রেজিং বিভাগকে টাকা বানানোর কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন আলোচিত এ তিন প্রকৌশলী।

গত বছরের জানুয়ারিতে ড্রেজারের তেল চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত তিন প্রকৌশলী। মামলাও হয়েছিল এ অভিযোগে, কিন্তু ম্যানেজ করে বেরিয়ে আসেন প্রকৌশলী আতাহার আলী সরদার ও আইয়ুব আলী।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি  তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। এ সব রিপোর্ট লিখে কিছু হবে না বলেও এ প্রতিবেদককে জানান ওই প্রকৌশলী। এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান তিনি।

অপর দুই অভিযুক্ত প্রকৌশলী আতাহার আলী সরদার ও রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ দুর্নীতি, অনিয়মের এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা জানান। এ ছাড়া নামে বেনামে বাড়ি-গাড়ির মালিকসহ বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক এই তিন প্রকৌশলী।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর মোজাম্মেল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এ সমস্ত কাজ আমার আমলে হয়নি।’ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই