বিএনপিতে একীভুত হচ্ছে এলডিপি, খালেদার অপেক্ষা!

আর শরীক নয় বিএনপিতে একীভূত হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় রয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। এ নিয়ে তলে তলে আলাপ আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি ও এলডিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাসই মিলছে। বিএনপির কয়েকজন নীতি নির্ধারকও বিষয়টি স্বীকারও করছেন।

বিএনপির উপদেষ্টান্ডলীর সদস্য এডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন জানান, বিএনপির সরকারের শাসনামলে দুর্নীতি ও দু:শাসনের অভিযোগ এনে বিএনপি থেকে সরে যাওয়া এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও দলটির অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে ইতোমধ্যে এ নিয়ে কথা বার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। তবে চলমান লন্ডন সফর শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

তিনি বলেন, কেবল এলডিপি নয়, বিএনপির বাইরেও জনগণের ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এমন আরও দলের ব্যাপারেও অনুরূপ চিন্তা-ভাবনা চলছে।

এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, একীভূত হওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষত দলীয় প্রধান কর্নেল অলিকে অন্তত ভাইস চেয়ারম্যান পদ দেয়া এবং দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতার অবস্থান একীভূত বিএনপিতে কি হবে ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

একীভূত বিএনপিতে শাহাদাত হোসেন সেলিমকে সাংগঠনিক স¤পাদক পদ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে এলডিপির পক্ষ থেকে। এলডিপিতে ডজন খানেক সাবেক মন্ত্রী ও এমপি রয়েছেন। দলে এদের সম্মানজনক অবস্থান এবং আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয় নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানালেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।

তিনি আরও জানান, একীভূত হওয়ার বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। বেগম জিয়ার লন্ডন সফরে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আলোচনায় এটাও রয়েছে। তাই ধারণা করা যাচ্ছে যে বেগম জিয়ার দেশে ফেরার পর বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

তিনি জানান, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) অলি আহমদ-এর নেতৃত্বাধীন এলডিপি বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল। একীভূত হওয়ার ব্যাপারে এলডিপির কাছে সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন বিএনপি উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ। এই দুজন প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন কর্নেল অলির বাসায়। এতে নীতিগত সম্মতির কথা জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মী মনে করেন যে বর্তমান সময়ে দলে কর্নেল অলির মত একজন বিচক্ষণ নেতার প্রয়োজন। তাই তাকে ফিরিয়ে আনা দরকার।

তিনি আরও বলেন, কর্ণেল অলি আহমেদ বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। বিগত বিএনপি সরকারের শেষদিকে এসে তিনি দুর্নীতি ও দুঃশাসনের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেন।বিএনপির ডাকসাইটে ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সাংসদদের নিয়ে তিনি গঠন করেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পাটি (এলডিপি)। পরবর্তীতে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা বাংলাদেশ একীভূত হয় এলডিপিতে।

এরপর বদরুদ্দোজা চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং কর্নেল অলি কো-চেয়ারম্যান হন। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে ফাটল তৈরি হয়। তারা পৃথক হয়ে যান। বদরুদ্দোজা চৌধুরী আবারও বিকল্পধারাকে নিয়ে এবং অলি আহমেদ এলডিপিকে নিয়ে পথ চলা শুরু করেন। দুটি দলই বর্তমানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে।

অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ২০০৮ অনুযায়ী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দল। আগামী ২৬ অক্টোবর এলডিপির নবম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে রাজধানীতে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে যে সভা হওয়ার কথা রয়েছে তার আগেই বিএনপির সাথে একীভূত হওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হলে ঐ সভাটিকে বিশেষ প্রতিনিধি সম্মেলন বা কাউন্সিল অধিবেশনে পরিণত করে সেখান থেকে মতামত নিয়ে রাখা হবে।



মন্তব্য চালু নেই