বিএনপিতে নতুন উদ্বেগ!

দুই বিদেশি খুন হওয়ার পর নতুন করে চাপে পড়েছে বিএনপি।আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর এমনিতেই চাপে আছে দলটি। তার ওপর এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা এ জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ি করে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।বিএনপির দু’একজন নেতা অবশ্য গণমাধ্যমে পাল্টা বিবৃতি দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বিএনপি যখন রাজপথের কর্মসূচি বন্ধ করে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত তখন নুতন করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ভাবিয়ে তুলছে দলটির শীর্ষ নেতাদের।

কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে পুরনো মামলায়, আবার কেউ কেউ আসামি হচ্ছেন বিদেশী নাগরিক হত্যাসহ নাশকতার নতুন নতুন মামলার। অবরোধ প্রত্যাহারের পর বেশকিছুদিন ধরপাকড় কিছুটা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে বলে বিএনপির দাবি।

তবে বিদেশি নাগরিক হত্যায় দলের এক নেতাকে গ্রেপ্তার এবং এতে বিএনপির মদদ আছে সরকারের এমন বক্তব্যে দলে উদ্বেগের মাত্রা কিছুটা বেড়েছে।এসব কারণে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে গ্রেপ্তার ও মামলার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাহবুবুর রহমান বলেন, “বিএনপি এমনিতেই দুর্যোগের মধ্য দিয়ে চলছে।এরমধ্যে কোনো তথ্য উপাত্ত ছাড়া নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করায় এটা আরো বেড়ে যাবে।”

গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধ ধীরে ধীরে বন্ধ হওয়ার পর কোনো কর্মসূচি ছিল না বিএনপির।এরমধ্যে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির চেষ্টার পাশাপাশি মনোযোগ দেয়া হয় দল পুনর্গঠনে। যদিও নির্দিষ্ট সময়ে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।যা এখনো চলছে।

এরমধ্যে ঈদুল আজহার আগে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নেতাকর্মীরা ঈদের আমেজ কাটিয়ে উঠছেন।কিন্তু এরই মধ্যে ঘটছে বিপত্তি!আবারও শুরু হয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে আছে দল পুনর্গঠনে বাধা দেয়ার অভিযোগ।

দলের পক্ষ থেকে দেয়া তথ্যমতে গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামসহ যশোরের প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে নাশকতার মামলা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়,জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেরুল হকসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এছাড়াও সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি ইসমাইল,রংপুর মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক,চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাশেদুন্নবী এবং বগুড়া জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে।

সবশেষ জাপানি নাগরিক হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের ভাই ও রংপুরের বিএনপি নেতা রাশেদুন্নবী বিপ্লবকে।

অন্যদিকে প্রিজন সেল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি ‘অসুস্থ’ বিএনপি নেতা ‍রুহুল কবির রিজভীকে।এ ঘটনায় পরিবারের পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে বুধবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি বলেন,“বিরোধী দল ও মতকে দমন করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও অন্য নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে,তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।”

এছাড়া বিদেশি নাগরিক হত্যায় বিএনপি নেতাকে আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন,“বিনা তদন্তে বিএনপিকে দোষারোপ করে সরকার আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।”

তবে এই সময়ের মধ্যে বিএনপির জন্য স্বস্তির খবরও আছে। নাশকতার মামলায় জামিন মিলেছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর,স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার,যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমানের।মির্জা ফখরুলের এক মামলায় জামিনের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে।

ফখরুলের বিবৃতি দেয়ার একদিন আগে দলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ আনেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

পুনর্গঠন কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে এমন দাবি করে তিনি বলেন,“দলের পুনর্গঠন কাজ চলছে,সেখানে আমাদের নেতাকর্মীরা একসাথে বসবেন,পরামর্শ করবেন,সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু বসলেই তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” এসময় তিনি আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ দেশে রাজনীতি করতে পারবে কি না তাও সরকারের কাছে জানতে চান।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বললে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিশেষ করে বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় হঠাৎ করে নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন।তবে প্রকৃত ঘটনা নিশ্চয়ই বিদেশীরা ভালো বুঝতে পারবেন।”

বিদেশি হত্যার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে মাহবুব বলেন,“নিরাপত্তা ইস্যুতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।” ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই