বিএনপি কাউন্সিলের নামে তামাশা করছে : হানিফ

বিএনপির কাউন্সিলকে ‘তামাশা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। শীর্ষ দুই পদে কাউন্সিলের আগেই নির্বাচন এবং কাউন্সিলরদের কোনো ক্ষমতা না দেয়ায় কাউন্সিল সম্পর্কে হানিফ এ মন্তব্য করেন।

আজ শনিবার বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে হানিফ বিএনপির কাউন্সিল সম্পর্কে কথা বলেন। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থীদের নাম ঘোষণার জন্য এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

খালেদা জিয়ার ‘ভিশন-২০৩০’ এর ঘোষণাকে ‘মিনিংলেস’ আখ্যায়িত করে হানিফ বলেন, “যিনি ভিশন ২০৩০ ডেকেছেন তিনি কি তার সাম্প্রতিকালের কর্মকাণ্ড, অতীতের কার্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত? উনি কি দুঃখ প্রকাশ করেছেন? উনি কি পেট্রলবোমার শিকার পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সেটাতো তিনি করেননি। তার কাছে জাতি কোনো কিছুই আশা করতে পারে না। তার কাছে ভিশন ২০৩০ আর ২০৬০ কী? এটা মিনিংলেস কথাবার্তা।”

তিনি বলেন, “বিএনপির সম্মেলন নিয়ে দেশের জনগণের মাধ্যে কোনো আগ্রহ নেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যেও তা নেই। সম্মেলন করা হয় নেতা নির্বাচনের জন্য কিন্তু দেশবাসী লক্ষ্য করেছে বিএনপি নির্ধারিত সম্মেলনের তারিখের অনেক আগেই তাদের চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে। তারপর আজকের সম্মেলনের আর কী গুরুত্ব থাকতে পারে?”

হানিফ বলেন, “কাউন্সিলরা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ক্ষমতাবান। নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নেতৃত্ব নির্বাচন করে থাকেন। আর বিএনপি কাউন্সিলরদের না ডেকেই নেতৃত্ব নির্বাচিত করেছে। তারা কখনো নিজেকে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। এটা একটা জগা-খিচুরি টাইপের দল। সম্মেলনের আগেই নেতৃত্ব নির্বাচন করে আজ ঢাকডোল পিটিয়ে সম্মেলন করা দলের সঙ্গেও তামাশা, দেশবাসীর সঙ্গেও তামাশা। তাই এটা সম্মেলন না বলে তামাশাই বলা চলে।”

তিনি বলেন, “খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্যে দেশবাসীর জন্য আশার কোনো বাণী ছিল না। ভিশন ২০৩০ দেয়ার আগে তার (খালেদা জিয়ার) উচিত ছিল অতীতে রাষ্ট্রক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে যে অপকর্ম করেছেন তা আলোচনা করে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া কিংবা ভুল স্বীকার করা।”

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, “আজকের সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে কোনো বক্তব্য না দিয়ে প্রমাণ করেছেন তিনি স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে আছেন এবং তাদের পক্ষে থাকবেন।”

তিনি বলেন, “পাকিস্তানি ভাবধারায় আদর্শিত খালেদা জিয়ার কাছে জাতি আর কিছু প্রত্যাশা করে না। তার কাছে মানুষ সুষ্ঠু ধারার রাজনীতির জন্য অতীতের কার্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত , দুঃখপ্রকাশ কিংবা জাতির কাছে ক্ষমা চাইলে জনগণ বুঝতো হয়তো তা বোধোদয় হয়েছে। কিন্তু তা না করে তিনি আবারও প্রমাণ করেছেন তিনি এখনো অসুস্থ রাজনীতি থেকে বের হননি।”

খালেদা জিয়ার ফের সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, “সংলাপের কথা খালেদা জিয়া কী কারণে বলেছেন? সংলাপ হয় দেশে কোনো ক্রাইসিস হলে। কিংবা কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু করার জন্য সরকারি দল কিংবা বিরোধী দলের আহ্বানে সংলাপ হয়। কিন্তু দেশে এখন এমন কোনো সংকট নেই যে সংলাপ করতে হবে।”

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা আশা করি, দলের মনোনিত প্রার্থীর পক্ষে সব নেতাকর্মী কাজ করবে। দলের মাঠ পর্যায়ের কোনো কর্মীই দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে বলেছি, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছে তাদের দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আবারো বলতে চাই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যনির্বাহী বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। শুধু বিদ্রোহী নয়, বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যদি প্রচার-প্রচারণা করে, মদদ দেয় তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের অপরাধ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ৬০৯টি ইউপির দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন হানিফ। তবে এখনো ১৪টি ইউপির প্রার্থীর নাম প্রকাশ বাকি আছে, যা পরে ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কার্যনির্বাহী সদস্য সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই