বিচারক অপসারণ আইন নিয়ে পাল্টা পাল্টি বক্তব্য

অপসারণের বিধান রেখে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন ২০১৬’ নিয়ে পাল্টা পাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক।

বুধবার দুপুরে সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন আইনজীবী সমিতির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করে এই আইন অনুমোদনের বিরোধিতা করে বলেন, বিচারপতিদের বিষয়ে সংসদের তদন্ত করা সংবিধান পরিপন্থি।

সম্পাদকের বক্তব্যের পার সমিতির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বিচারপতিদের তদন্তের বিষয়ে সংসদের হাতে ক্ষমতা নেয়া কোনো ভাবেই সংবিধান পরপিন্থি নয়।

তিনি আরো বলেন, আমি সমিতির সভাপতি হিসেবে মতামত দিচ্ছি না। একজন সাধারণ আইনজীবী হিসেবে কথা বলছি। বুধবার তার নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আরো বলেন, আইনজীবী সমিতির পক্ষে এমন মতামত প্রদানের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উনি হয়তো ব্যক্তিগতভাবে মত প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তখন তিনি বিচারপতিদের নিয়ে করা এই আইনটিকে সংবিধান পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন।

সংবিধানের ৯৪ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘এই আইনটি পাস হলে তা সংবিধান পরিপন্থি হবে। যা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিচার বিভাগ আমাদের সংবিধানের একটি মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। এই আইন পাস হলে তা আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে আঘাত করবে।’

এই আইনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই আইনটির মাধ্যমে সরকার বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এই আইনটি অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না। বিচারপতিরা হয়তো সম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে পারবেন না।’

শুরু থেকে বিচারকদের অপসারণে ষোড়শ সংশোধনীতেও বিরোধিতা করেছেন বলে উল্লেখ করেন খোকন। এখনও তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সংসদের হাতে ক্ষমতা দিতে হলে সংসদ সদস্যদেরও আচরণবিধি থাকতে হবে। কারণ সংসদ সদস্যদেরও অনেকেই আইনজীবী হিসেবে আদালতে প্রাকটিস করেন। তাই আদালতের কোনো সিদ্ধান্ত ওই সংসদ সদস্যের বিপক্ষে গেলে সংসদে গিয়ে বিচারকের বিরুদ্ধে এই আইনের অপব্যবহার করতে পারেন।’

তাছাড়া তদন্ত কমিটিতে অ্যাটর্নি জেনারেল থাকায় তদন্ত প্রভাবিত হবে। আর একজন নাগরিককে তদন্ত কমিটিতে রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেই ব্যক্তি কে হবেন, এর কোনো বৈশিষ্ট নির্ধারণ করা হয়নি। তাই তদন্ত কমিটিতে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে।

পরে এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৭২ সালের সংবিধানেও এই বিধানটি ছিল। কিন্তু তখন কোনো বিচারককে অপসারণ করা হয়নি। সরকারি প্রত্যেক কর্মকর্তাদের আচরণবিধি আছে। সুতরাং এই ধরনের তদন্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করবে বলে আমি মনে করি না। তাছাড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় মাত্র নীতিগত অনুমোদন হয়েছে। এখনো অনেক প্রক্রিয়া বাকি আছে। সংসদে পাস হওয়ার পরও এটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।’

সমিতির পক্ষে সাধারণ সম্পাদকের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ‘উনি উনার ব্যক্তিগত মতামত দিতেই পারেন। তবে সমিতির পক্ষে বক্তব্য দিতে হলে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের জানা থাকতে হবে। সভাপতি হিসেবে আমি এ ধরনের কোনো সংবাদ সম্মেলনের কথা জানি না। আগে বিষয়টি দেখে তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’



মন্তব্য চালু নেই