বিচারক লাগে না, টাকা দিলেই জামিন!

ভুয়া জামিননামা তৈরি করে শতাধিক আসামিকে কারাগার থেকে বের করে দেয়ার ঘটনার আরেক হোতা ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পেশকার মো. মোসলেহ উদ্দিনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার সকাল ১০ থেকে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শফিউল্লাহ এ জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তবে তিন দিনের রিমান্ড থাকায় আরো দুইদিন চলবে এ জিজ্ঞাসাবাদ।

এর গতকাল রোববার মোসলেহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. সফিউল্লাহ। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ২৪-২৬ আগস্ট একই অভিযোগে করা মামলার আসামি ও এই জালিয়াতির ঘটনার মূল হোতা ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-২ এর আদালতের পিয়ন শেখ মো. নাঈমকেও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ৭৭টি মামলার ১১০ আসামিকে পাঁচ মাসে কারাগার থেকে বের করে এনেছে শক্তিশালী একটি জালিয়াতী চক্র। পিয়ন শেখ মো. নাঈম ঢাকার দ্বিতীয় যুগ্ম-দায়রা জজ আদালত থেকে ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর বদলি হয়ে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-২ আদালতে আসেন। তার সার্ভিস বুক ও হাজিরা খাতা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নভেম্বরে বদলির প্রায় দুই মাস পর জানুয়ারি থেকে বিচারকের জাল স্বাক্ষর করে টাকার বিনিময়ে আসামিদের জামিন দেয়া শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দেন পেশকার মোসলেহ উদ্দিন।

জানুয়ারি মাসে বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ১৪টি মামলার ১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০টি মামলার ২০ জন, মার্চে ১৪টি মামলার ২০ জন, এপ্রিলে ১২টি মামলার ১৬ জন এবং মে মাসে ২৬টি মামলার ৪০ জন আসামি জামিনে মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন তারা। আর এই ৭৭টি মামলায় সবাই প্রায় দুর্ধর্ষ আসামি ছিলেন। যারা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে এখনো পলাতক আছে।

বিষয়টি গত ১২ জুলাই গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আদালত এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন ১৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রশাসনের পক্ষে নাজির ওবায়দুল হক আকন্দ বাদী হয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া জামিননামা কারাগারে পাঠিয়ে আসামিদের মুক্তির ব্যবস্থা করে অবৈধ অর্থ উপার্জনের অভিযোগে মামলা করেন। আর ওই মামলা আসামি করা হয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পেশকার মোসলেহ উদ্দিন ও একই আদালতেরই এমএলএসএস (পিয়ন) শেখ মোহাম্মদ নাঈমকে। এ ঘটনায় উভয় আসামিকেই চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে পেশকার মো. মোসলেহ উদ্দিন ভুঁইয়াকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ আটক করে।

সংশ্লিষ্ট এক দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই মামলার অভিযোগ তদন্তের জন্য গত ৪ আগস্ট দুদকে পাঠানো হয়। দুদক বিষয়টি তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক বেনজির আহমেদের তদারকিতে উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহকে দায়িত্ব দেয়। এই দুই আসামির পক্ষে একা জালিয়াতি করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে একটি সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকতে পারে মনে করা হচ্ছে। আর এসব বিষয় জানতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। এ ঘটনায় আদালতের আইনজীবী বা প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারী অথবা অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই