জিম্বাবুয়েকে ‘বাংলাওয়াশ’, অভিষেকে তাইজুলের বিশ্বরেকর্ড

বিজয়ের মাসে টাইগারদের উপহার

পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ওয়ানডেতে নবমবারের মতো হোয়াইটওয়াশের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এ নিয়ে জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট-ওয়াশ করল স্বাগতিকরা। এর আগে হাবিবুল বাশার সুমনের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়েকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ।

সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের স্পিনারদের দাপটে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। ১২৮ রানে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। জবাবে ২৪.৩ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। প্রথমবারের মতো খেলতে নেমেই আলো ছড়ান বাঁহাতি এই স্পিনার। মাত্র ১১ রানে ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার কীর্র্তি গড়েন তিনি। তাইজুল ছাড়া সাকিব আল হাসান ৩ টি ও জুবায়ের হোসেন ২টি উইকেট নেন। পেসারদের মধ্যে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা একমাত্র উইকেটটি নেন।

তবে জিম্বাবুয়ের শিবিরে প্রথম আঘাতটি করেন মাশরাফি। তার বলে মুশফিকের তালুবন্দি হন সিকান্দার রাজা (৯)। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। হ্যামিলটন মাসাকাদজা ও ভুসিমুজি সিবান্দা ৭৯ রানের জুটি গড়েন।

বিপদজনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন জাতীয় দলের তরুণ লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন। অর্ধশতকের দেখা পাওয়া হ্যামিলটন মাসাকাদজাকে ৫২ রানে গুগলিতে বোল্ড করেন জুবায়ের। ৫৪ বলে ৫ টি চার ও ৩ টি ছক্কায় ৫২ রান করেন মাসাকাদজা।

দলীয় ৯৫ রানে মাসাকাদজার বিদায়ের পর আর কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মাত্র ৩৩ রানের মধ্যে শেষ ৮ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।

দলীয় ১০৮ ও ১০৯ রানে ব্রেন্ডন টেলর ও ভুসিমুজি সিবান্দাকে ফিরিয়ে সফরকারী শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। স্কোরবোর্ডে ৩ রান যোগ করতেই মারুমাকে সরাসরি বোল্ড করেন জুবায়ের। তখন ৫ উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের রান ১১২।

২৭তম ওভারে জুবায়েরের পরিবর্তে তাইজুলকে বোলিংয়ে আনেন মাশরাফি। প্রথম বলেই বাজিমাত। সোলোমন মোরের উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে উইকেট শিকারের খাতা খোলেন তাইজুল। চার বল পর ওভারের শেষ বলে আবারও সফরকারীদের শিবিরে আঘাত করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। পেসার পানিয়াঙ্গারাকে সরাসরি বোল্ড হন।

২৯তম ওভারের প্রথম বলে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন তাইজুল। জন নিয়াম্বুকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। নিয়াম্বুর বিদায়ের পর তাইজুলের হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ওভারের দ্বিতীয় বলেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান তাইজুল। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন চাতারা।

আর এই উইকেট দিয়ে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক তুলে নেওয়ার রেকর্ড গড়েন তাইজুল।

জিম্বাবুয়ের শিবিরে শেষ আঘাতটি করেন সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিগত ২ রানে সাকিবের বলে স্লিপে মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হন কামুনগোঝি।

সহজ টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ব্যর্থতার পরিচয় দেন। তামিম ইকবাল ১০ রানে পানিয়াঙ্গারার বলে সোলোমোন মোরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। এরপর এনামুল হক বিজয় ৮ রানে চাতারার বলে স্লিপে মাসাকাদজার শিকার হন।

তৃতীয় উইকেটে অভিষিক্ত সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ ১৯ রানের জুটি গড়েন। নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে সৌম্য সরকার শুরুটা ভালোই করেন। ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের পরিচয়ও দেন। কিন্তু দলীয় ৪৭ রানে চাতারার বাউন্সারে তার ইনিংস শেষ হয়ে যায়। ১৮ বলে ২০ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার।

সৌম্যের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসান ক্রিকেটপ্রেমীদের হতাশ করেন। ৮ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি সাকিব। সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো শূন্য রানে আউট হন তিনি।

৫৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়েন দুই ‘ভায়রা’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম।

মাহমুদউল্লাহ এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলেও মুশফিক টিকে থাকতে পারেননি। ১১ রানে চাতারার বলে উইকেটরক্ষক টেলরের তালুবন্দি হন মুশফিক।

মুশফিকের বিদায়ের পর সাব্বির রহমানকে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মাহমুদউল্লাহর ১১তম অর্ধশতকে ৫ উইকেট হাতে রেখে জয় পায় বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ ৫১ ও সাব্বির রহমান ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

জিম্বাবুয়ের হয়ে চাতারা ৩টি ও পানিয়াঙ্গারা ২টি উইকেট নেন।



মন্তব্য চালু নেই