বিদেশি নাগরিক খুনের ‘কালো ছায়া’ পোশাক খাতে

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুইজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, ইতালি, জাপান, আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে এসব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে চলাফেরায় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন না হলে বাংলাদেশ ভ্রমণে না আসতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের। আর এই অবস্থায় পোশাক শিল্পের বিদেশি ক্রেতারা তাদের নির্ধারিত সফর, বৈঠক বাতিল ও স্থগিত করা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে বিদেশি নাগরিক খুনের ‘কালো ছায়া’ পড়তে পারে দেশের পোশাক খাতে।

আজ সোমবার দেশের তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সঙ্গে বায়ার্স ফোরামের মাসিক বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে তা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরাম দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বর্তমানে অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে বৈঠক করা নিরাপদ নয়। বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ফারুক হাসানবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে একদিকে জিএসপি ইস্যুতে দেন দরবার হচ্ছে, অন্যদিকে বিদেশি নাগরিক হত্যায় ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এর মধ্যে বায়ার্স ফোরামের বৈঠক স্থগিত একটা অশনি সঙ্কেত। এ অবস্থা চলতে থাকলে আবারও পোশাক শিল্প সঙ্কটের দিকে যাবে।’

পোশাক খাতের ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আমরা এর আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েছিলাম। তখনও এ শিল্প সঙ্কটে পড়েছিল। এরপর রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্য অবাধ প্রবেশ জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এতে আরও বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ে পোশাক শিল্প। সেই রেশ না কাটতেই আবার দেশে বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর অনেক ক্রেতা নির্ধারিত সফরসূচি বাতিল করেছেন। এ অবস্থা যদি বেশিদিন চলতে থাকে তাহলে পোশাক খাতকে আবারও নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোশাক কারখানার এক স্বত্তাধিকারী বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ৬ অক্টোবর বায়ার আসার কথা ছিল। কিন্তু দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার পর নিরাপত্তা ইস্যুতে ওই বায়ার তার সফর পিছিয়েছে। তিনি আগামী ২৫ অক্টোবর পরবর্তী সফরের কথা জানিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার মতো অনেক পোশাক কারখানায় যেসব বায়ার অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আসার জন্য সময় নির্ধারণ করেছিলেন, তাদের বেশির ভাগই তার সফর পিছিয়েছে।’

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মোর্শেদী বলেন, ‘দুইজন বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার পর দেশে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশে অবস্থিত সবগুলো কূটনৈতিক মিশন থেকে সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকদের সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। এতে পোশাক রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশি নাগরিক হত্যার পর তৈরি পোশাক খাতের ক্রেতারা দেশে আসবে না তা নয়, তবে তাদের অনেকেই আসার সময় পিছিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পোশাক শিল্পে আমরা দুইটি রাজনৈতিক অস্থিরতার পার করেছি, রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনায় পোশাক খাতের ভাবমূর্তি অনেক ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসব ঘটনার পর সরকারের সহযোগিতায় যখন আমরা বড় চ্যালেঞ্জ পার করতে যাচ্ছি, ঠিক তখনই দেশে দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এতে আবারও পোশাক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।’

বিজিএমইএ’র পরিচালক মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যতটুকু মনে করছি, আসলে ততটুকু নয়। বিদেশে এর চেয়ে অনেক বেশি হত্যার ঘটনা ঘটে। সেসব দেশের প্রপাগান্ডা নেই। তবে আমাদের দেশে প্রপাগান্ডাটা বেশি। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পরপরই ইতালি, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের রেড জন্য রেড এলার্ট জারি করেছে। এতে কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে যদি এমন ঘটনার পুরনাবৃত্তি না হয় তাহলে পোশাক খাতে যে সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা কেটে যাবে।’

বিজিএমইএ’র অপর পরিচালক শহিদুল হক মুকুল বলেন, ‘বিদেশে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটছে। কোনো ধরনের আতঙ্ক কারো মধ্যে নেই। আমাদের দেশ ছোট বলে এ ধরনের ঘটনায় ইমেজ সঙ্কট হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় অনেক বায়ার আছে। এছাড়া প্রচুর বায়ার আসছিল। আর এমন সময়ই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যেসব বায়ার নতুন আসছে তাদের কাছে আতঙ্কটা বেশি মনে হচ্ছে। তবে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে নতুন করে যে সঙ্কটের আশঙ্কা করা হচ্ছে তা কেটে যাবে।’ বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই