বিদেশেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে বাংলাদেশ

বিদেশে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোম্পানি গঠনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) গঠন প্রণালী (অর্গানোগ্রাম) প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পিডিবিতে পাঠানো হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারে জলবিদ্যুতের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ সরকার। প্রস্তাবিত হাইড্রোপাওয়ার কোম্পানি এসব দেশে যৌথ উদ্যোগে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করবে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে পিডিবি ও নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভারত ও চীনের সঙ্গে এ ধরনের পৃথক যৌথ কোম্পানি গঠন করেছে।

উল্লেখ্য, আগে মতভেদ থাকলেও সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো আঞ্চলিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সার্কভূক্ত এ দেশগুলোর মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি (ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট) স্বাক্ষর হয়েছে।

ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমারে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে কাজ করছে। ভারত তাদের অরুণাচল প্রদেশে উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের ওপর দিয়ে নিজেদের পূর্বাঞ্চলে নিতে চায়। বিনিময়ে বাংলাদেশকেও দেয়া হবে সুবিধা। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানের বিপুল জলশক্তি কাজে লাগিয়ে ভারত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এখন বাংলাদেশও সে পথে এগুচ্ছে। এ বিষয়ে দেশ দু’টির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হবে বলে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমারে প্রায় কয়েক হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে তারা ভারত ও চীনের কাছে এসব বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে চুক্তিও করে ফেলেছে। মিয়ানমারের রাখাইনে আগামী ২০১৯ সালে ৬০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। কিন্তু নিজস্ব বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকায় এ বিদ্যুৎ তারা রপ্তানি করবে। বর্তমানে রাখাইনের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে মাত্র ২০ মেগাওয়াটের মতো। বাংলাদেশও এখান থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ চাইলে নতুন করে কেন্দ্রও নির্মাণ করতে পারবে।

নেপালে ৮০ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তারা মাত্র ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ভারতীয় কোম্পানি জিএমআর নেপালে দু’টি বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করছে। বিদ্যুৎ প্রকল্প দু’টির একটি আপার (উজান) কর্নালি এবং অন্যটি মাছরাঙ্গির উজানে নির্মিত হচ্ছে। এর একটি ৫০০ মেগাওয়াট, অন্যটি ৬২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন। জিএমআর বাংলাদেশের কাছে এই বিদ্যুৎ বিক্রিতে আগ্রহী। প্রকল্প দু’টির বিদ্যুৎ সঞ্চালনে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। আইএফসি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়ে জিএমআর’র সঙ্গে মধ্যস্ততা করছে।

সরকারের পরিকল্পনা হলো, দেশের চাহিদা মেটাতে আগামী পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে নেপাল থেকে অন্তত ১০ হাজার মেগাওয়াট এবং ভুটান থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মূল্যে আমদানি করা।



মন্তব্য চালু নেই