বিদেশে বসেই নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে বাংলাদেশী জঙ্গীরা

পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে বসে বাংলাদেশে জঙ্গী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে বাংলাদেশী জঙ্গীরা, এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অন্তত শীর্ষ পাঁচ নেতা বর্তমানে পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে বাংলাদেশী তরুণদের জঙ্গী প্রশিক্ষণ, জঙ্গী সংগঠন পরিচালনার অর্থও যোগাড় করতে সহযোগিতা করছে। নিখোঁজ ও পলাতক জঙ্গীরা আবারও হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশে বসে নানা ধরনের জঙ্গী হামলার নির্দেশনা দিচ্ছে তারা। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলা ও কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানার অভিযানের পর বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী জঙ্গীদের বিষয়ে সতর্ক নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অভিজাত পরিবারের ছেলেদের স্টুডেন্ট ভিসা দিয়ে প্রথমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছেন জঙ্গী নেতারা। সেখানে মোটিভেশন দিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণের জন্য সিরিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশে পাঠান। বিশেষ করে তরুণ ও ছাত্রদের মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর নেয়ার পর সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে তুরস্ক। এরপর তারা পাড়ি জমায় আফগানিস্তান ও সিরিয়া। সেখানে তাদের ভারি অস্ত্র ও গ্রেনেড চালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দেশে ফিরে তারা মিশন বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়। তবে তারা সংখ্যায় নগণ্য হলেও দেশে ফিরে এসে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দেশীয় জঙ্গীদের তৎপরতায় উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে। গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা ও কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানার জঙ্গীরা যে আইএস এর আদলে ছবি তুলেছে তাতে তারা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী জঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণ করেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি জঙ্গী হামলার পর গণমাধ্যমে বলেন, বিদেশে বসে যারা জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ প্রধান (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বুধবার ঢাকায় পুলিশ সদরদফতরে এক অনুষ্ঠানে বলেন, যারা ভুল পথে গেছে, জঙ্গী পথে গেছে, তারা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহযোগিতা করবে। কোন ডিস্টার্ব করবে না।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, পাকিস্তানে অবস্থান করে আন্তর্জাতিক জঙ্গীগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবিটি প্রধান ইজাজ হোসেন। আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের আমির ইজাজ হোসেন পাকিস্তান থেকে একবার বাংলাদেশে এসেছিল। সে সময় ১৫ মিনিটের জন্য ইজাজ হোসেন তাদের কলাবাগান প্রথম লেনের বাসায় যায়। সেখানে চার ভাই ও মায়ের সঙ্গে কথা বলে সে ফের পাকিস্তানে চলে যায়। তবে ইজাজ পাকিস্তান থেকে তার মায়ের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ রাখে। ইজাজের স্ত্রী ও চার সন্তান এক সময় যাত্রাবাড়ীতে থাকত। মালয়েশিয়ায় আছে তেহজীব করিম, সেখানে অবস্থান করছে দেশে ব্লগার হত্যা মামলার অন্যতম আসামি রেদোয়ানুল আজাদ রানা। সে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন ছাত্র। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পেছনে রানা রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত জঙ্গী নেতারা ভিসা পাঠিয়ে এদেশ থেকে টার্গেটকৃত তরুণ ও যুবকদের নিচ্ছে। এরপর মারণাস্ত্রের প্রশিক্ষণের জন্য তুরস্ক হয়ে আফগানিস্তান বা সিরিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখানে আত্মঘাতী প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা দেশে ফিরে কথিত ‘কতল’ মিশনে নামছে।

গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, তুরস্ক ফেরত যুবকদের কয়েকজন এখনও যারা পলাতক তাদের খোঁজ করছে গোয়েন্দারা। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বাংলাদেশী ছাত্র দেশে এসে জঙ্গী হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আসা কয়েকজন ছাত্র গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারী ও কল্যাণপুর জঙ্গী আস্তানায় যাতায়াতাকারীর মধ্যে রয়েছে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গীদের যোগাযোগ থাকার বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।খবর দৈনিক জনকণ্ঠের।



মন্তব্য চালু নেই