বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানোর কৌশল খুঁজছে সরকার

গত ৬ বছরে ৬ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। সর্বশেষ বেড়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। অন্যদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বছরও শেষ হয়নি। এরইমধ্যে ফের গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আবারও বাড়তে যাচ্ছে সব ধরনের গ্যাসের দাম। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। অনুমোদন পেলেই তা কার্যকর করা হবে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন শ্রেণিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়েছিল। গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যে গ্যাসের দাম প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। কোম্পানিগুলো গৃহস্থালি মিটারযুক্ত গ্রাহকদের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা ৮০ পয়সা, দুই বার্নারের চুলার মাসিক বিল ৬৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ক্যাপটিভ জেনারেটরের জন্য প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৮ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে বৃদ্ধি করে ১৯ টাকা ২৬ পয়সা, শিল্পের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৬ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে ১০ দশমিক ৯৫ টাকা এবং বাণিজ্যিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৯ দশমিক ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সিএনজি স্টেশন, সার কারখানা ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্টে ব্যবহৃত গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বর্তমানে অনেক কম। এর পরেও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বোধগম্য নয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়লে দেশের মানুষের জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মারাত্মক হুমকিতে পড়বে দেশের অর্থনীতি। এমন আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠনের। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, ‘আবারও গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালে, তা হবে জুলুমের শামিল।’ তারা বলেন, সরকার বেতন-ভাতা বাড়িয়েছে। এখন আবার তা উসুল করে নিচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে। ‘এভাবে চললে টিকে থাকা দায় হবে’ বলে মনে করেন সচিবালয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী। তার মতে, তারা বলেছেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বাড়বে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। বাড়বে যানবাহনের ভাড়া। বাড়বে ট্রাক ভাড়া। এ বিষয়গুলো জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়াবে।’

গ্যাসভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে যেসব কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কম, সেগুলো বেশি চালালে এখনই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বিক্রির দামের চেয়ে কম হবে। কিন্তু তা না করে দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ যুক্তিহীন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, গত বছরের নভেম্বরে পিডিবি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয় বিইআরসিতে। তাতে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ বাড়ানোর আবেদন করে। এর ভিত্তিতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডেসকো) ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

অন্যদিকে, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত পৃথকভাবে বিভিন্ন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের দাম বর্তমান দামের চেয়ে আরও ২০ থেকে ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করে। এ লক্ষ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের গণশুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে আবারও গ্যাস ও বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার কার্যকর ঘোষণা করে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরিকল্পনা করছে বিইআরসির।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিইআরসির গণশুনানির সময় ক্যাব গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কমানোর যুক্তি উপস্থাপন করে একটি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বিইআরসি তা আমলে নেয়নি।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।



মন্তব্য চালু নেই