বিনিয়োগ মন্দায় দেশ

অভ্যন্তরীণ খাতের পাশাপাশি, বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ইস্যূতেও মন্দার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এ পরিস্থিতি দিন দিন আরো কঠিন হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে মন্দা দেখা দিয়েছে। নিবন্ধন কমেছে অর্ধেকেরও বেশি প্রকল্পে।

সর্বশেষ প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৫ বলছে, ২০১৪ সালে দেশে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের এফডিআই এসেছে। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। ফলে দেশিসহ বিদেশি উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনেয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না। এ ছাড়াও শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যার কারণেও অনেকে বিনিয়োগ প্রকল্প হাতে নিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যাচ্ছেন।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮ সালে এফডিআই প্রথমবারের মতো বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। পরের দুই বছর কিছুটা খারাপ গেলেও ২০১১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে শতকোটি ডলারের এফডিআই আসছে দেশে। ২০১৩ সালে এফডিআই আসে ১৫৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর বিদায়ি বছরে তা দাঁড়িয়েছে ১৫২ কোটি ৬৭ লাখ ডলারে।

তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০১৪-১৫) প্রথম আট মাসে বিদেশি বিনিয়োগে মোট ৭৫টি নতুন প্রকল্প নিবন্ধিত হয়। যার বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২১৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে ২২ হাজার ৭২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আসে। এরপরের অর্থবছরে (২০১৩-১৪) ৮৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে আসে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার বিনেয়াগ।

এফডিআই বাড়াতে বাংলাদেশের বাজারকে আরও উন্মুক্ত করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এফডিআই-র অবদান মাত্র ১ শতাংশ। অথচ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিমালার সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত করতে পারলে তা ৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে স্যামসাংয়ের ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব ফিরে যাওয়ার পেছনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির সমন্বয়হীনতাই দায়ী। এ ছাড়াও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার কমানোর পাশাপাশি, খেলাপি ও মন্দ ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনাও জরুরি।’

এদিকে বিনিয়োগ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে নিবন্ধিত মোট যৌথ ও শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৯৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ বিদেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।

এ অবস্থা নিয়ে কথা হয় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) সভাপতি আফতাব-উল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের উচিত বিপুল পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আনা। অথচ আসছে তার সামান্যই। এ জন্য দায়ী মূলত: সুশাসনের ঘাটতি। আর বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব। দেশি বিনিয়োগকারীরাই যেখানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কেন এগিয়ে আসবেন?’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিদেশি উদ্যোক্তাদেরকে শুধু মুনাফা ফেরত নেওয়ার সুযোগ দিলেই তারা বিনিয়োগে উৎসাহী হবে, বিষটি এমন না। বরং বিনিয়োগের জন্য গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ ও জমির ব্যবস্থা করতে হবে। এর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর।’রাইজংবিডি



মন্তব্য চালু নেই