বিপথে যাওয়ার পথটা কোথায়?

আতিয়ার রহমান : কেঁদে লাভ নেই, লাভ নেই শোক পালন করেও, এতে শুধু চোখের পানি শুকিয়ে যাবে কিন্তু জমিন ভিজবে না। যদি কিছু করতেই হয়, তবে যে তরুন ছেলেগুলি এ কাজ করল তারা কিভাবে বিপথে গেল, এ বিপথে যাওয়ার পথটা কোথায়? সেটা খুজে বেড় করতে হবে। এরা সব ধনীদের সন্তান, ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছে, তাদের কোন অভাব বা কোন চাওয়া অপূর্ণ থাকে না, তবে কেন তারা এমন বিপথে গেল, কারা দিল এমন মগজ ধোলাই, একদিনে হটাৎ করেই তো আর এমন মগজ ধোলাই হয় নাই। এতে নিশ্চয় সময় লেগেছে বেশ।

হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া ছেলেগুলো যখন ছয় মাস পর লোকালয়ে ফিরে আসলো তখন তারা আর মানুষ থাকলো না! একেকজন হয়ে গেল মায়া-দয়াহীন কসাই! প্রশ্ন হচ্ছে- তাদের এ বিপথে যাওয়ার পথটা কে খুজে বেড় করবে সরকার? কিন্তু কেন, কেন সরকার এ দায় ভার নেবে-কারো ঘরের যদি বৌ ভেগে যায় তার দায় ভার কি সরকারের, কারো বিবি যদি তরকারী কাটতে গিয়ে হাতকেটে ফেলে সে দায়ভারও কি সরকারের, কারো সন্তান যদি স্কুলে না গিয়ে সেচ্ছায় বিপথগামী হয় তবে সেই কৈফিয়ত কি সরকার দেবে? কিন্তু কেন দেবে? এটা তো আমাদের ঘরের সমস্যা যা পরের হয়েছে আমাদেরই ভুলে।

এরা সব বিপথগামীরা ধনীদের সন্তান – কিসের নেশায় এমন ওয়ান ওয়ে রাস্তা তারা বেছে নিলো? টাকা পয়সা সম্মান বাড়ি গাড়ি নিরাপদ ভবিষ্যৎ বন্ধু পরিবার সবইতো ছিলো, তাহলে? এডভেঞ্চার! নাকি হিরো সাজার খায়েশ? কি টোপ গিলানো হয়েছে তাদের? আর কারা গিলিয়েছে এমন টোপ? যারা এদের বিপথগামী করেছে এরা তাদের আশপাশের এবং কাছের লোক এটা সন্দেহ করাটাই এখন জায়েজ বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে-এরা স্কুল কলেজের শিক্ষক হতে পারে, খেলার সাথীও হতে পারে, যাদের সাথে ওঠাবসায় ঘনিষ্ঠ তারাই এ বিপথের বার্তা বহনকারী-এরা ভালো করেই জানে ধনীরা সন্তানদের সময় দেয়ার সময় পায় না। তাদের সেই দুর্বলতা ভেদ করেই ফেসবুক টুইটার ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেও বিপথের বার্তা বহন করে থাকতে পারে মাস্টারমাইন্ড ব্রেইনওয়াশকারীরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় মাস্টারমাইন্ড ব্রেইনওয়াশকারীরা সমাজের উপরতলার লোক, যারা অবাধে ধনীদের সন্তানদের সাথে মিশতে পারে, এদের সংখাটা ছোট না বড়ই, তারাই টার্গেট করে বেছে নিচ্ছে নিজের শিকারগুলোকে, তাদের ভার্সিটি স্কুলগুলোর টিচার বা তেমন পর্যায়ের কেউ, যারা যে কোন অযুহাতে তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলছে, হয়তো সখ্যতা তাদের পরিবারের সাথেও। পিতা-মাতার অবর্তমানে তারাই সন্তানদের সাথে মেশে এবং এদের ব্রেইনওয়াশ করে!

তাই বলছিলাম, এই কাছের লোকের দায় ভার সরকারের উপড়ই বা কিভাবে বর্তায়-আপনার সন্তান কার সাথে বসবেন, কার সাথে খেলবেন এটার নিয়ন্ত্রনও যদি সরকার করে তাহলে সন্তান জন্ম দিয়ে কি এমন উদ্ধার করছেন আপনি। সন্তান জন্ম দেয়ার দায় ভারও সরকারকেই দিয়ে দেন। আমি সরকারকেও তেল মারছি না নিজেদের সংশোধনের চেষ্টা করছি-সরকারের তো অনেক ভুল, সে যেই সরকারই হোক- কিন্তু মশাই, আমার আপনার একটু ভুল যে বহু মানুষের জীবন নিয়ে নিচ্ছে, সেটার নিয়ন্ত্রন তো আমাদেরই করতে হবে। কি হবে হঠাৎ সময় জ্ঞানহীন ভাবে সন্তানের খোজঁ নিলে বা তার কাছে চলে গেলে, কি করছে, কার সাথে চলছে, কেন চলছে? এসব খবর নিলে-খুব বেশি হলে আপনার সন্তান একটু অভিমানী হবে -দুটাকা খরচা করে একটা গিফট দিয়ে সন্তানের অভিমান ভাঙাবেন-হাজার হোক আপনার সন্তান! বিপথগামী হয়ে মরার চেয়ে জীবীত থেকে অভিমান কারও ভালো। কি এমন ক্ষতি হবে যদি প্রাইভেট শিক্ষকের হঠাৎ খোঁজ নেন বা বিশ্বস্ত কোন বেকারকে দিয়ে দু একদিন শিক্ষকের গতিবিধি লক্ষ্য করেন-কিচ্ছু ক্ষতি হবেনা। শিক্ষক রাগ করলে বুঝিয়ে বলবেন-আমার নিরুপায়। শিক্ষকরাও এতে জড়িত থাকতে পারে, সে ক্ষেত্রে আপনার সন্তান কোন শিক্ষকের সাথে বেশী ঘনিষ্ঠ হচ্ছে-সে ব্যপারে প্রধান শিক্ষককে অবহিত করে রাখুন- সর্ম্পকটি নিয়ে সন্দিহান হলে-পুলিশকে জানিয়ে রাখুন শিক্ষক বা সন্তানকে জানানো বা চাপ দেয়ার কি দরকার। যদি সন্তান অবাধ্য হয় তবে পুলিশের সহায়তা নিন- পুরোপুরি আপনার সার্থে নয়, অনেকটা আমাদের সার্থেও। কারন আপনার অবাধ্য সন্তান ছমাস পর আমাদের মৃত্যুর কারন হতে পারে- আর এর দায় ভার সরকারের উপড় কোন ভাবেই বর্তায় না। তবে হ্যা… শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কতৃপক্ষকে অবশ্যই খুটিনাটি বিষয় গুলো ঘেটে দেখা প্রয়োজন। এছাড়া নিযোগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের গতিবিধির উপর নজর রাখার দায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কতৃপক্ষের উপড়ই বর্তায়।

যাদের সন্তানরা বিপথগামী হয়ে গুলশানে নারকিয় ঘটনার জন্ম দিল কোথায় ছিল তাদের সন্তানরা ? কেন তাদের পরিবার পুলিশ কে জানালো না, তাদের বিপথগামীতার কথা। তারা জানবে না এমন হতেই পারে না। কেন পরিবার এমন দ্বয়িত্বহিন ছিল ? এই ছয় মাস কোথায় ছিলো তারা? দেশে নাকি বিদেশে? কোথায় প্রশিক্ষণ নিয়েছে তারা? এতো মানুষ জবাই করে রক্তস্রোত ভাসিয়ে দেওয়ার মতো ইস্পাত নার্ভ তৈরী করতে মাত্র ছমাস লেগেছে? কে দিয়েছে এ প্রশিক্ষণ ? তাই বাংলাদেশের সব পরিবারকে বলছি, বলছি সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সকল স্তরের সবাইকে- দয়া করে ভেবে নেবেন না এরা ছয়জনই শেষ আর কেউ বিপথগামী হবে না। যারা এই ছয়জনকে ব্রেইনওয়াশ করেছে তার হয়তো আজো আপনার আমার অজান্তে আমাদের সন্তানদের ব্রেইনওয়াশ করছে। কালকে গুলশানের মতো অন্য কোথাও আমার আপনার সন্তান, ছাত্র, বন্ধু, ভাই, বোন যেন কারো মৃত্যুর কারন না হয়। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। নাকে তেল দিয়ে অনেক ঘুমিয়েছেন, এবার জেগে থাকার সময় হয়েছে। আপনার পরিবারের কাছে যারা বহিরাগত-তারা কেমন লোক সে খেয়াল আপনাকেই রাখতে হবে।

এদের ধরতে না পারলে কখনো এ সমস্যার সমাধান হবে না, আমি এমন কথা বিশ্বাস করি না। কারন আমি জানিনা এরা কারা, তবে এটুকু জানি এরা আমার পরিবারের কাছে বহিরাগত। তাই তাদের চেনা বা ধরা আমার সাধ্যেরও অনেক বাইরে। তবে এদের কাছ থেকে নিজের পরিবারকে বাচঁতে নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। আমি এদের না চিনলেও আমার সন্তান কে চিনি আর জানি সে কে? তাই সবার কাছে অনুরোধ একটু কষ্ট করে খোজ নিন আপনার সন্তান কি করছে।নিজেদের পরিবারকে এদের হাত থেকে রক্ষা করতে আপনাকে আমাকে হঠাৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। ফোন করে জানিয়ে সন্তান, স্ত্রী, স্বামী বা মেয়ের কাছে সবসময় যাবেন না। মাঝে মধ্যে হঠাৎ বা লুকিয়ে পরিবারে খোঁজ নিন- ভালো হলে ভালো, খারাপ হলে পদক্ষেপ নিন। তবে অনুরোধ সন্তানের ও আপনজনদের প্রতি হিংস্র হবেন না-এতে বিপদ বাড়বে কমবে না।

লেখক : সাংবাদিক


(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না)



মন্তব্য চালু নেই