বিপিএলে যত ১ রান, ১ উইকেটের জয়

বিপিএলের তৃতীয় আসরে মাঠের লড়াই শুরুতেই দারুণ জমে উঠেছে। রোমাঞ্চকর সব জয় তুলে নিচ্ছে দলগুলো।

প্রথম ছয় ম্যাচের দুটিরই জয়ের ব্যবধান ১ রানের। আর দুটি ম্যাচেরই পরাজিত দলটি সিলেট সুপারস্টার্স। তাও আবার টানা দুই ম্যাচে! সিলেটের জন্য দুর্ভাগ্যই বলা চলে।

বাংলাদেশের এই ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এবারই প্রথম ১ রানের জয় দেখল। ২০১২ সালে প্রথম আসরে অবশ্য ২ রানের জয় ছিল। সেবার ওটাই ছিল রানের ব্যবধানে সবচেয়ে ছোট জয়। মজার বিষয়, সেবারও পরাজিত দলটি ছিল সিলেট!

সেবার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি সিলেট রয়্যালস নামে ছিল। আর জয়ী দলটি ছিল খুলনা রয়্যালস বেঙ্গলস। প্রথম আসরে উইকেটের ব্যবধানে সবচেয়ে ছোট জয়টি ছিল দুরন্ত রাজশাহীর, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের বিপক্ষে ৩ উইকেটে জিতেছিল তারা।

২০১৩ সালে দ্বিতীয় আসরে ৩ উইকেটের জয় ছিল দুটি। তবে সেবারই প্রথম এবং একমাত্র ১ উইকেটের জয় দেখেছিল বিপিএল। বরিশাল বার্নাসের বিপক্ষে জিতেছিল সিলেট রয়্যালস।

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশালের দেওয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪ রান। হাতে ২ উইকেট। ক্রিজে ছিলেন সোহরাওয়ার্দী শুভ ও মোহাম্মদ নবী। বোলার ছিলেন আজহার মাহমুদ।

প্রথম দুই বল থেকে একটি ওয়াইডসহ আসে ৩ রান। ফলে স্কোর হয়ে যায় লেভেল। কিন্তু তৃতীয় বলে ব্র্যাড হজকে ক্যাচ দিয়ে সিলেটকে বিপদে ফেলে দেন শুভ। তবে পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে দুই বল আগে সিলেটকে ১ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় এনে দেন নবী।

বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে ছোট জয়টি ছিল ২ রানের। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে জিতেছিল দুরন্ত রাজশাহী। আর ২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে এসে প্রথমবার দেখা গেল ১ রানের জয়। একটি নয়, দুটি। তাও আবার প্রথম ছয় ম্যাচেই।

গত সোমবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসের মুখোমুখি হয়েছিল সিলেট সুপারস্টার্স। চিটাগংয়ের দেওয়া ১৮১ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে সিলেটের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯ রান। তখনো ৪৪ রানে ক্রিজে ছিলেন সিলেট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তার সঙ্গী ছিলেন অজন্তা মেন্ডিস। হাতে উইকেট ছয়টি।

মোহাম্মদ আমিরের করা ওই ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে মুশফিক নন-স্ট্রাইক প্রান্তে গেলে জয়টাও দূরে সরে যায় সিলেটের। আমিরের পরের দুই বলে কোনো রান নিতে পারেননি মেন্ডিস। চতুর্থ বলেও ব্যাট ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইকে যান মুশিফক। পঞ্চম বলে কাভার দিয়ে দারুণ একটি চার মারেন সিলেট অধিনায়ক। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। কিন্তু ১ রানের বেশি নিতে পারেননি মুশফিক। ১ রানের নাটকীয় জয় পায় চিটাগং।

আর মঙ্গলবার নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বরিশাল বুলসকে ১০৮ রানে অলআউট করেও জিততে পারেনি সিলেট। ছোট লক্ষ্যে শেষ ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। হাতে দুই উইকেট। স্পিনার তাইজুল ইসলামের করা ওভারের প্রথম বলেই ফিরে যান মোহাম্মদ শহীদ। পরের দুই বল থেকে তিন রান নেন ফিদেল এডওয়ার্ডস। তবে চতুর্থ বলে রান নিতে পারেননি এগারো নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা শুভাশীষ রায়।

পঞ্চম বলে শুভাশীষ এক রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন এডওয়ার্ডসকে। ফলে শেষ বলে সিলেটের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে চার রান। তবে দুই রানের বেশি নিতে পারেননি এডওয়ার্ডস। টানা দুই ম্যাচে ১ রানের পরাজয়ের তিক্ততা পায় সিলেট। আর টানা দুই ম্যাচে জয়ের স্বাদ নেয় বরিশাল।

অবশ্য সিলেটের বিপক্ষে বরিশালের জয়ের অন্যতম কারিগর পেসার আল-আমিন হোসেন। শুরুতে তার দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বরিশাল। শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি কারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন জাতীয় দলের এই পেসার।

এবারের বিপিএলে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ব্যাট-বলের লড়াইয়ে শুরু থেকেই উত্তেজনার রং ছড়াচ্ছে। উদ্বোধনী ম্যাচেই ফল নির্ধারণ হয় শেষ বলে। চিটাগংয়ের দেওয়া ১৮৮ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে রংপুর রাইডার্সের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। যা শেষ বলে দাঁড়ায় ১ রানে। সাকলাইন সজীব ১ রান নিয়ে রংপুরকে উপহার দেন ২ উইকেটের নাটকীয় জয়।

সামনে আরো অনেক ম্যাচ। শুরুতেই এমন রুদ্ধশ্বাস সব জয় বিপিএল নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের মাত্রাটাও বাড়িয়ে তুলেছে।



মন্তব্য চালু নেই