বিভিন্ন ধরণের ইমেজিং টেস্টের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের ইমেজিং টেস্ট করার জন্য চিকিৎসক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ইমেজিং টেস্টগুলোর প্রতিটিরই আছে কিছু উপকারিতা ও কিছু অপকারিতা। আপনার জন্য কোন টেস্টটি করা প্রয়োজন তা আপনার চিকিৎসকই ভালো বলতে পারবেন। তবে সবারই প্রয়োজন ইমেজিং টেস্টগুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা। বিভিন্ন ধরণের ইমেজ তৈরি করার জন্য বিভিন্ন ধরণের টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। শরীরের নির্দিষ্ট টিস্যুর(যেমন- অস্থি, নরম টিস্যু বা টিউমার) ভেতরে কি ঘটছে তা জানার জন্য ইমেজিং টেস্ট করা হয়ে থাকে। এই টেস্টের ইমেজ বা ছবিগুলো কতটা ভালো দেখায় তার উপর টেস্টের বিভিন্নতা নির্ভর করে। সাধারণত যে ধরণের ইমেজিং টেস্টগুলো করা হয় তা হল :

– প্লেইন এক্সরে
– কম্পিউটেড টমোগ্রাফি (CT Scans)
– নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইমেজিং ইনক্লুডিং পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET)
– ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং (MRI)
– আলট্রাসাউন্ড
আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থা বা আঘাতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা যার জন্য আপনার স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ আপনার অসুখের ইতিহাস শুনবেন এবং শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর আরো ভালোভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ইমেজিং টেস্ট করাবেন। বিভিন্ন ধরণের ইমেজিং টেস্টের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

১। প্লেইন এক্সরে

সাধারণত প্লেইন এক্সরে ব্যবহার করা হয় হাড়, কিছু টিউমার এবং অন্য কোন ডেন্স ম্যাটার এর ছবির জন্য।

উপকারিতা – এটি দ্রুত করা যায়, অ-আক্রমণাত্মক এবং ব্যথাহীন হয়। এটি বিভিন্ন ধরণের রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে যেমন- হাড়ের কোন আঘাত, হাড় ভাঙ্গা, কিছু ক্যান্সার এবং ইনফেকশনও নির্ণয় করা যায় এক্সরের মাধ্যমে।

অপকারিতা – ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে তবে খুব সামান্য পরিমাণে। আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের জন্য এই রকম ঝুঁকির আশংকা করা হয়। এই ধরণের ঝুঁকি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।

২। কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা CT Scans

ক্রস সেকশনাল লেয়ার উৎপন্ন করার জন্য একাধিক এক্সরে ব্যবহার করা হয় এই পরীক্ষাটিতে। যার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরের বিভিন্ন অঙ্গ, অস্থি, কলা ও টিউমারের বিস্তারিত ছবি দেখা যায়।

উপকারিতা – এটি দ্রুত ও ব্যথাহীন একটি পরীক্ষা। সাধারণ এক্সরে এর চেয়ে আরো ব্যপকভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। মারাত্মক সমস্যার উপস্থিতি চিহ্নিত করা যায়। পূর্বে ভালো হওয়া রোগের পুনরাবৃত্তি হয়েছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা হতে পারে।

অপকারিতা – ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। সাধারণ এক্সরের চেয়ে বেশি মাত্রার রেডিয়েশন ব্যবহৃত হয় বলে অন্যান্য ইমেজিং এর চেয়ে ঝুঁকি বেশি থাকে। এই পরীক্ষাটিতে যে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় তাতে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে বা অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে বা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ইনজেকশন-সাইট রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে। অ্যানেস্থেশিয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

৩। নিউক্লিয়ার মেডিসিন ইমেজিং ইনক্লুডিং পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (PET)

এই পরীক্ষাটিতে রেডিওঅ্যাক্টিভ ট্রেসার ব্যবহার করা হয়। গামা রশ্মির নিঃসরণ হয়।

উপকারিতা – সাধারণত ব্যথা হয়না। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ কিভাবে কাজ করছে তা দেখা যায় এবং সমস্যা খুব দ্রুত চিহ্নিত করা যায়। ক্যান্সারের বিস্তার ও নিরাময়ের কার্যকারিতা লক্ষ করা যায়।

অপকারিতা – এই পরীক্ষাটিতে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন জড়িত। ইনজেকশনের স্থানে প্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। PET স্ক্যানারে ক্লস্ট্রোফোবিক বা আবদ্ধতার অনুভূতি হতে পারে তাই ঘুমের ঔষধ লাগতে পারে।

৪। ম্যাগনেটিক রিজোনেন্স ইমেজিং বা MRI

অস্থি, তরুণাস্থি, লিগামেন্ট, নরম টিস্যু এবং অঙ্গের বিস্তারিত ছবি পাওয়া যায়।

উপকারিতা – সাধারণত ব্যথাহীন। কোন প্রকার রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়না। রোগ নির্ণয় ও অবস্থার বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়।

অপকারিতা – দীর্ঘ ও সশব্দ পদ্ধতি। সামান্য নড়াচড়ার জন্য ইমেজ নষ্ট হতে পারে। যার ফলে পুনরায় করার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ক্লাস্ট্রোফোবিক বা আবদ্ধতার অনুভূতি হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেশিয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কিছু অবস্থায় (যেমন- যদি হার্টে পেসমেকার বসানো থাকে) এই পরীক্ষাটি করা সম্ভব হয়না। এই পরীক্ষাটিতে যে ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় তাতে কিডনিতে সমস্যা হতে পারে বা অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে বা কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ইনজেকশন-সাইট রিঅ্যাকশন দেখা দিতে পারে।

৫। আল্ট্রাসাউন্ড

উচ্চ মাত্রার শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের চলন্ত ছবি স্ক্রিনে দেখা যায়। বিভিন্ন অঙ্গ, অস্থি, নরম টিস্যু এবং গর্ভজাত শিশুর ছবি দেখা যায়।

উপকারিতা– নিরাপদ ও ব্যথা হীন পরীক্ষা। রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়না। কোন ইনজেকশন দিতে হয়না। শরীরের বিভিন্ন অংশের রোগ নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়। প্রেগনেন্সির সময় গর্ভজাত শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা যায়।

অপকারিতা – ইমেজের মান এবং ব্যাখ্যা নির্ভর করে যিনি পরীক্ষাটি করছেন তার দক্ষতার উপর। ব্যাক্তির দেহের আকৃতি এবং দেহে উপস্থিত বাতাস ও ক্যালসিফাইড অঞ্চল ইত্যাদি বিষয়গুলো ছবির মানের উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিশেষ প্রস্তুতি যেমন- উপবাস করা ও প্রচুর পানি পান করে ব্লাডার পরিপূর্ণ করে নিতে হয়।

ইমেজিং বা অন্য মেডিক্যাল ইনভেস্টিগেশনের আগে ভালো ভাবে জেনে যাওয়া উচিৎ। তাই আপনার স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলে জেনে নিন।



মন্তব্য চালু নেই