বিমানবালাদের ১০ টি গোপন কথা !

বিমানসেবিকা বা বিমানবালা হওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতেন সুন্দরী তরুণীরা। আজ সেই ছবি পাল্টে গেছে অনেকটাই। নানা ঘটন-অঘটনে এখন অনেক সুন্দরী তরুণী আর স্বপ্ণ দেখেন না বিমানবালা হবার। অমানবিক পরিশ্রম, অস্বাভাবিক সময়ের কাজ আর তার উপর আছে যৌন হয়রানীর ঝুঁকি। এমনই কিছু কথা তুলে ধরেছেন হিদার পুল, যিনি গত ১৫ বছর যাবত বিমানবালা হিসেবে কাজ করেন।

তিনি “ক্রুসিং এটিচিউড: টেলস অব ক্রাশপ্যডস, ক্রিউ ড্রামা, এন্ড ক্রেজি প্যসেঞ্জার এট ৩৫০০০ ফিট” শিরোনামে একটি জীবন কাহিনী লিখেছেন। এই লেখা থেকে সংক্ষেপে ১০ টি অজানা কথা তুলে ধরা হলো।

১. সিনিয়রিটি মানে ছোট স্কার্ট
আমরা কোন পথে উড়বো, আবার কবে দেশে ফিরে আসব এটা সিনিয়রদের মর্জির উপর নির্ভর করে। এক রুমে ২০ জন বিমানবালাকে রাত কাটাতে হয়। রুমে কার বেড কেমন হবে, কোলাহল থেকে কার রুম কত দূরে হবে সবকিছু সিনিয়ররা নির্ধারণ করে। সিনিয়ররা অবশ্য এ বঞ্চনা থেকে মুক্ত।
প্রবেশনারি সময়ে আমাদের স্কার্টের দৈর্ঘ্য সিনিয়ররা নির্ধারণ করে। এ সময় সামান্য পা দেখানোর সুযোগ থাকে। এ ব্যপারে আমরা টুঁ শব্দও করতে পারি না।
নবীন বিমানবালারা যদি পায়লটদের পটায়ে ফেলে! – এমন আশংকা সিনিয়ররা করে থাকে।
আমার জানা মতে, এক সিনিয়র ইচ্ছাকৃতভাবে পায়লটকে পটাতে তার স্কার্ট ছোট করত!

২. প্লেনের দরজা খোলা, আমাদের মাইনে বন্ধ
প্লেন উড্ডয়নের আগ পর্যন্ত যাত্রীর তলপি-তলপা নিয়ে যে ফরমাইশ আমরা খাটি তার কোনো হিসাব আমাদের মাইনার খাতায় ওঠে না। শুধূমাত্র প্লেনের দরজা বন্ধ হলে- প্লেন আকাশে পাখা মেললে- আমরা বেতন পায়।
আবার ফ্লাইট যদি দেরি করে, স্থগিত হয় তাহলে আমাদের বেতন বন্ধ।
তবে তারা অতটা হৃদয়হীন নয়। বিমানবন্দরে প্রবেশের পর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত ঘন্টায় ১.৫ ডলার হারে একটি থাপকো বরাদ্দ দেয়।

৩. কোঁচ ধরার প্রতিযোগিতায় অর্থ-গচ্চা।
ভালো প্লেনে কাজ করার প্রতিযোগিতা বেধেই থাকে। মনে করুন, ২০১০ সালে ডেল্টা ঘোষনা করল তারা শুরুতে ১০০০ ডলার দিবে। মুহুর্তর মধ্যে ১০০,০০০ দরখস্ত পড়ে যাবে। যদিও হার্ভাডের মাইনে কম নয়।
যারা কলেজ ডিগ্রিতে এগিয়ে, প্রতিযেগিতায় তারাই সেরা। যেমন ডাক্তার, আইনজীবি ইত্যাদি। তবে এগুলো চাকরি পাওয়ার কোন শর্ত নয়।
দ্বোভাষী হলে সুযোগ রেড়ে যায়। তাতে যাত্রীদের খাওয়ার টেবিল বা অন্য কোনো মূহুর্তে আপনার গুরুত্ব বেড়ে যাবে।
তবে আমন্ত্রিত চাকরিতে যাওয়ার আগে আগপাছ চিন্তা করে দেখুন। কারণ, সেখানে গেলে আপনার নির্ধারিত বেতনের কিছু অংশ কেটে রাখা হয়।

৪. আকাশে কারো উচ্চতা বাড়ে আবার কারো কমে
১৯৬০ এর দশকে শর্ত ছিল মেয়েদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি, ওজন ১৩০ পাউন্ড হবে। ৩২ বছরে অবসর নিবে। তারা হবে অবিবাহিত, সন্তান থাকবে না। ফলে, বেশিরভাগ মেয়েরা সর্বেচ্চ গড়ে ১৮ মাস চাকরি করত।
১৯৭০ সালে স্টিউওয়ার্ডেসেস নামে আমাদের এক সংগঠনের দাবিতে অবসরের শর্ত শিথিল হয়।
১৯৮০ সালে বিবাহের শর্ত ঘুচল।
১৯৯০ এর দশকে ওজনের শর্তটি আর থাকল না।
ইদানিং আনেক নিয়ম- কানুন আমাদের জন্য নিরাপদ। বিমান বালারা এখন জাম্প সিটে বেল্ট পরে। ইমার্জেন্সি দরজার পাশে তাদের এখন বসতে হয় না। কিন্তু মজার ব্যপার হলো আমাদের কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেয় তবে ইমার্জেন্সি কালে প্যরাস্যুটে উড়তে সমস্যা হতো বলে এ সমাধান।
একইভাবে, উচ্চতার শর্ত পরিবর্তন হয়েছে। আমদের এখন ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি হতেই হবে। কারণ মাথার উপরের ইকুইপমেন্ট বিন নাগাল পেতে হয়। আবার, ৬ ফুট ১ ইঞ্চির বেশি লম্বা হলেও চলবে না। কারণ, বেশি লম্বাদের মাথা সিলিং-এ আটকে যায়।
এই উচ্চতার শর্ত এয়ারক্রাফ্টের ভিন্নতার উপর নির্ভর করে।

৫. উদ্ভট কারণে আমাদের কোনো অনুভুতি থাকতে নেই
নতুন ভাড়াটে বিমানবালাদের প্রথম ৬ মাসে খুব কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়। আমার জানা মতে এক বিমানবালার সোয়েটার কোমরের কাছে একটু আটোঁসাটোঁ হওয়ায় চাকরি হারাতে হয়েছিল।
এক নবাগতকে বেত্রাঘাত সইতে হয়েছিল। কারণ, সে পূর্ণসদস্যের সুবিধা দাবি করেছিল। বিমানের খরচে সে দেশে ফিরতে চেয়েছিল। (প্রবেশন কালীন শেষ না করা পর্যন্ত আমরা যাতায়াত খরচ পায় না।)
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যখন আমরা একটু অসুস্থ বোধ করি। যদি ভুল করেও একটু অসুস্থতার কথা কেউ বলে, তবে আর তার আকাশে উড়া হয় না। এমনকি সে যাত্রী হিসেবেও দেশে ফিরতে পারে না। একারণে তাৎক্ষনিক বরখাস্ত হয়েছে অনেকে।

৬. পানীয় ঢালা ভগবানের মার!
আমরা সারা জীবন সকল প্রকার পানীয় পরিবেশন করি, যাত্রীদের কাপে ঢেলে দিই। সারা জীবনে যত পানীয় ঢালি তা এক সাথে করলে ৩৫,০০০ ফুট হবে। যে সময়ে আমরা এক কাপ পানীয় ঢালি সে সময়ে আমরা ৩ জন যাত্রীকে ভিন্ন খাবার পরিবেশন করতে পারি। আবার প্রথম শ্রেণীর যাত্রীকে ক্যানের পানীয় পরিবেশন করা দণ্ডনীয়।

৭. যদি কেউ মৃত দেহ প্লেনে পাচার করতে চায়, আমরা ধরে ফেলি!
আপনারা নিশ্চয় মিয়ামি যাত্রীদের নাম শুনেছেন। মিয়ামিরা তাদের মৃত মায়ের লাশ কাপরের ব্যগে করে প্লেনে পাচার করতে চায়। তারা মূলত মৃতদেহ বহনের অত্যধিক খরচ (প্রায় ৫০০০ ডলার) বাচাতে এ কাজ করে।
আমাদের এগুলো খুজে বেরাতে হয়। সৌভাগ্যক্রমে আমার এ রকম কোনো মুহুর্তে পড়তে হয় নি।

৮. আগে সুযোগ নিলেও আমরা খেয়াল করি!
সাধারণত বাথরুম ব্যবহারে মানুষের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। ফলে ১০ বারের মধ্যে ৯ বারই যাত্রীরা বিমানবালাদের হস্তক্ষেপ আশা করে। যাত্রীরা আমাদের বারবার অনুরোধ করতে থাকে।
আসলে আগে সুযোগ নেয়াটা বেআইনী নয়। কিন্তু, ক্রু সদস্যরা এ কাজে সহযোগিতা করলে কমান্ড অমান্য করার দণ্ড চলে আসে। এমনকি কাউকে এ কাজে নিষেধ করাও অন্যায়। আবার সেল মেটদের সাথে বিশ্রী বাক্যালাপে বাধা দেয়া চলবে না।

৯.মানব পাঁচার রোধে আমরা প্রথম বাধা
আমরা প্লেনে উড়ার সময় পুলিশের সাথে কাজ করব তা কখনো চিন্তাও করি না। কিন্তু মাঝে মাঝে এ রকম দূর্ঘটনা ঘটে যায়।
এ রকম নিয়ম আগে ছিল না। সান্দ্রা ফায়োরিনির পর থেকে এ নিয়ম শুরু হয়েছে। হটবেড ট্রাফিকিং, পতিতা পাঁচার এ সব রোধেও কষ্টকরর ধকল সহ্য করতে হয়।

১০. যাত্রীদের কখোনো সমস্যা সইতে হবে না১৯৮০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ২ মিলিয়ন লোক প্লেনে চড়ে। তার মধ্যে প্রায় ৩০০ জন প্লেন চলাকালে আহত হয়েছে। এই ৩০০ জনের মধ্যে ৩ ভাগের ২ ভাগ বিমানবালা।

সূত্র:ফ্লস ম্যগাজিন

আরো পড়ুন :

বিশ্বের ৩০ জন এয়ার হোস্টেস সুন্দরীর সেলফি



মন্তব্য চালু নেই