বিমানে জন্ম নিলে কী হয়?

পাসপোর্টের জন্য বেশ ঝামেলায় পড়েন শোনা ওয়েন। কারণ পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের বোঝানো বেশ কষ্টকর তাঁর জন্ম ভূমিতে নয় বরং এর ৩৬ হাজার ফুট ওপরের আকাশে। শোনা ওয়েন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের একজন যাঁদের জন্ম হয়েছে বিমানে। তাঁর পাসপোর্টে স্পষ্ট করে লেখা আছে, ‘এই পাসপোর্টধারীর জন্ম হয়েছে বিমানে’।

সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে শোনা ওয়েনের গর্ভবতী মা ডেবি ওয়েন আরেক মেয়ে ক্লারাকে নিয়ে ঘানা থেকে বিমানে উঠেছিলেন। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ওই বিমানের গন্তব্য ছিল লন্ডন। বিমানযাত্রার মাঝপথে ডেবি ওয়েনের ব্যথা ওঠে। পরে বিমানের প্রথম শ্রেণিতে নেওয়া হয় তাঁকে। ওই সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসেন এক চিকিৎসক যাত্রী। ইউরোপের আকাশে পৌঁছার পর পরই জন্ম হয় শোনা ওয়েনের। জন্মের সময় তাঁর নাম রাখা হয়েছিল শোনা ক্রিস্টি ইভ (Shona Kirsty Yves) ইংরেজি নামের প্রতিটি আদ্যাক্ষর নিলে শব্দটি দাঁড়ায় SKY।

কাকতালীয় হলেও আকাশে জন্ম নেওয়া শোনার ওয়েনের চাকরিও ভ্রমণ বিষয়ক। তাঁকে প্রায়ই বিমানে চলাচল করতে হয়। আর নিজের জন্ম যেহেতু বিমানে, তাই এই বিষয়ে একটু জানার চেষ্টা করেন শোনা ওয়েন।

শোনা ওয়েন বলেন, অধিকাংশ বিমান সংস্থা আকাশে তাঁদের উড়োজাহাজে জন্ম নেওয়া শিশুদের হিসাব রাখে না। তবে বিভিন্ন বিমান সংস্থা সূত্রে জানা যায়, আকাশে জন্ম নেওয়া শিশুদের সংখ্যা একদমই নগণ্য।

শোনা বলেন, গর্ভধারণের ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো নারীকে বিমানে উঠতে দেওয়া হয়। তবে ২৮ সপ্তাহের পর থেকেই ডাক্তারের বিশেষ অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হয়। এত নিরাপত্তা নেওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে জন্মের তারিখের বেশ আগেই বিমান ভ্রমণকালে শিশুর জন্ম হয়।

শিশু তুমি কোন দেশি?

বিমানে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুর জন্য সবচেয়ে ঝামেলা হয়ে দাঁড়ায় জাতীয়তা। একেক দেশের জাতীয়তার আইন একেক রকম। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযাযী, এর স্থল, জল বা আকাশসীমায় জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুই মার্কিন নাগরিকত্ব পায়। পৃথিবীর অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভূমি আইন অনুসরণ করা হয়। তবে যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ আবার এমন নিয়মের অনুসারী নয়। তাই এসব দেশের সীমানায় জন্ম নিলেও জাতীয়তা পাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

সারা জীবন বিনামূল্যে বিমান ভ্রমণ?

প্রচলিত একটি ধারণা হলো, বিমানে জন্মগ্রহণ করা কোনো শিশু সারা জীবন বিনামূল্যে বিমানে ভ্রমণ করতে পারে। এটি পুরোপুরি না হলেও আংশিক সত্য।

থাই এয়ারওয়েজ, এশিয়া প্যাসিফিক এয়ারলাইনস, এয়ার এশিয়া ও পোলার এয়ারলাইনসসহ হাতে গোনা কয়েকটি বিমান সংস্থা তাদের উড়োজাহাজে জন্ম নেওয়া কোনো শিশুকে বিনামূল্যে সারা জীবন বিমান ভ্রমণের সুযোগ দেয়। এ ছাড়া ভার্জিন আটলান্টিকসহ কয়েকটি বিমান সংস্থা দু-একবার বিনামূল্যে বিমান ভ্রমণের সুযোগ দেয়।

প্রতিবেদনের শুরুতে উল্লেখিত ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে জন্ম নেওয়া শোনা ওয়েন দুবার বিনামূল্যে বিমানে চড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। শোনার ১৮ বছর উপলক্ষে বিমান সংস্থাটি তাঁকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া-আসার প্রথম শ্রেণির টিকেট দিয়েছিল। তবে এ জন্য বিমান সংস্থার হয়ে একটি প্রচারণায়ও অংশ নিতে হয়েছিল তাঁকে।

শোনা ওয়েনের মতে, বিমানে জন্ম নেওয়া শিশুকে পুরস্কার দেওয়ার কোনো মানে নেই। বরং বিমানে কষ্ট করে শিশুর জন্ম দেওয়া মাকে পুরষ্কৃত করা উচিত।



মন্তব্য চালু নেই