বিমান বাহিনীর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত : রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কার্যক্রমের পরিধি আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিস্তৃত। বিমান বাহিনীর স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় পেশাদারিত্বের পাশাপাশি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা ও দক্ষতার জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা পেয়েছে।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় নতুন নির্মিত বিমান বাহিনীর কক্সবাজার এয়ার ডিফেন্স রাডার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি একথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এই বাহিনীর সাংগঠনিক উন্নয়ন এবং পেশাগত নৈপুণ্য বৃদ্ধির জন্য যুদ্ধবিমান ও প্রয়োজনীয় যুদ্ধউপকরণ সংযোজনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারে আজকের এই ণখঈ-৬ রাডার সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশ ও জাতির অগ্রগতি ও নিরাপত্তায় আরো সক্রিয় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিমান বাহিনীর রাডারটি সমুদ্র অঞ্চল ও সমগ্র মহীসোপান এলাকার বিমানগুলোতে সঠিক তথ্য প্রদান করবে। একই সঙ্গে চলমান বিমানগুলোকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হবে।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রয়েছে গৌরবময় এক ইতিহাস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এ বাহিনীর সদস্যরা প্রয়োজনীয় যুদ্ধ উপকরণ ছাড়াই শুধুমাত্র একটি এ্যালুয়েট হেলিকপ্টার, একটি ডিসি-৩ ও একটি অটার বিমান নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুঃসাহসিক বৈমানিকেরাই প্রথম বাংলার আকাশসীমায় প্রবেশ করে শত্রুর ওপর সফল আক্রমণ পরিচালনা করে, যা ছিল আমাদের বৈমানিকদের অসাধারণ দক্ষতার নিদর্শন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর সদস্যদের এ সাহসিকতাপূর্ণ অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতার ঐকান্তিক ইচ্ছা ও প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশি বিমান বাহিনীতে সংযোজিত তৎকালীন অত্যাধুনিক সুপারসনিক যুদ্ধবিমান ও রাডারের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের গরএ-২৯ যুদ্ধবিমান।

সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বর্তমানে শান্তিরক্ষা মিশনে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণ বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বিমান বাহিনী তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুর্যোগের সময় সরকারের আহ্বানে ত্রাণ-তৎপরতা, জাতীয় নির্বাচন কার্যক্রম, ভিআইপি/ভিভিআইপি মিশন পরিচালনা এবং বিশেষভাবে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদেরকে সার্বিক সহায়তা প্রদানে অনন্য অবদানের প্রশংসা করেন।

তিনি আরো বলেন, যেকোনো বাহিনীর সাফল্যের জন্য পেশাগত দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। দক্ষতা একদিকে যেমন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে তেমনি স্বীয় বাহিনীর জন্য বয়ে আনে সুনাম ও মর্যাদা। তাই উন্নত ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে আপনাদের গড়ে উঠতে হবে একজন দক্ষ বৈমানিক, প্রকৌশলী, কন্ট্রোলার ও আদর্শ বিমান সেনা হিসেবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এ জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ, কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিটি ক্ষেত্রে কঠোরভাবে শৃঙ্খলা মেনে চলা। মনে রাখবেন পরিশ্রম ও সততার কোনো বিকল্প নেই। সুদৃঢ় মনোবল, কঠোর পরিশ্রম, কর্তব্যনিষ্ঠা, সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও দেশপ্রেমই আপনাদেরকে পেশাগত জীবনে উৎকর্ষের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। দেশসেবা এবং জনগণের কল্যাণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিঃস্বার্থ ও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন আপনাদের কাছে দেশবাসীর এটাই প্রত্যাশা।

এ সময় রাষ্ট্রপতিকে বিমান বাহিনীর পক্ষে কক্সবাজারে উদ্বোধন হওয়া র‌্যাডারটির অপারেশন কার্যক্ষমতা প্রদর্শন করা হয়। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বেলা সাড়ে ১১টায় বিশেষ হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে এসে পৌঁছালে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসবার ও কক্সবাজার ঘাঁটির অধিনায়ক এয়ার কমডোর মো. পারভেজ ইসলাম তাকে স্বাগত জানান। এসময় একটি চৌকস কন্টিনজেন্ট রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, নৌবাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্যসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী রাডার ইউনিট কক্সবাজার এয়ার ডিফেন্স রাডার (ওয়াই এলসি-৬) অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরে যান।



মন্তব্য চালু নেই