বিশুদ্ধতা কমছে হোমিও ওষুধে, শিক্ষা ব্যবস্থায়ও গলদ

সেবার ব্রত নিয়েই হোমিওপ্যাথী চিকিৎসা পেশায় আসেন চিকিৎসকরা। কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার্জনের পর সেই জ্ঞান রোগীর শরীরে প্রয়োগকালে যদি যথোপযুক্ত ওষুধের অভাব পরিলক্ষিত হয়, তবে সমস্ত অর্জনই ব্যর্থতাই পর্যবসিত হয়। যে চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে আধুনিককালের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসার, সেই হোমিও চিকিৎসা আজ শুধুমাত্র মানহীন ওষুধের কারণে মানুষের আস্থা হারাতে বসেছে।

বাংলাদেশের সাথে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থায় রয়েছে বিশেষ পার্থক্য। একাডেমিক ক্ষেত্রেও এই পার্থক্য বিরাজমান। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি হোমিও ওষুধ ব্যবসা মহান পেশা হলেও একশ্রেণির অর্থলোভী মানুষের কারণে এর দায় নিতে হচ্ছে চিকিৎসক সমাজকেও। চলতি বছরেই চট্টগ্রামের দুইজন হোমিও চিকিৎসককে ভেজাল ওষুধ তৈরীর দায়ে গ্রেপ্তার করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে চিনি-আটার সাথে কেমিক্যাল মিশিয়ে গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওষুধ তৈরি করে আসছেন তারা। তবে ল্যাব টেস্টে তা প্রমাণিত হয়েছে কিনা সেটা পরবর্তীতে আর নিশ্চিত করা হয়নি, এমনকি এই দুই চিকিৎসক কোন ষড়যন্ত্র বা কারো ইন্ধনে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছিলেন কিনা-তাও আর জানা হয়নি। সেদিন তাদের ছয় মাসের জেল দেয়া হয়েছিল। এর পরের ঘটনা ছিল বেদনাদায়ক। পরিবারের উপার্জনক্ষম দুই চিকিৎসকের হঠাৎ সৃষ্ট এমন পরিণতিতে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

সম্প্রতি পুরাতন গির্জায় হোমিও ওষুধের ফার্মেসীতে অভিযান চালিয়ে ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে, সিলগালা করেছেন কিছু ফার্মেসীও। হোমিও পটেন্সি, মাদারটিংচার, বায়োকেমিক, ট্রাইটুরেশন ওষুধে সাধারণত মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে না কারণ এগুলো মিশ্র কিংবা স্থুল নয়। প্রতিটা ওষুধে একক বৈশিষ্ট্য একক মাত্রা বিদ্যমান। হোমিও নিয়মনীতি, ফার্মাকোপিয়া, শক্তিও মাত্রাতত্ত্ব, অর্গানন নিয়মানুযায়ী দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পক্ষান্তরে এলোপ্যাথি ওষুধ স্থুল ও মিশ্র বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি বিধায় এর উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখের প্রয়োজন রয়েছে।

হোমিও চিকিৎসায় ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে অনেকে হারবাল ব্যবসা করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। হোমিও শাস্ত্র কেবল সিঙ্গেল রিমেডি বা একমাত্র একটি ওষুধকে সমর্থন করে। কাজেই এখানে হারবাল কিংবা প্যাটেন্টকে কোনভাবেই সমর্থন করা যায় না। এই চিকিৎসায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা একেবারে নেই, নেই কোন ব্যবস্থাপনা। তাই হোমিও ওষুধ ব্যবসায়ীরা যার যার ইচ্ছামত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে হোমিও ব্যবসায় বিশুদ্ধতা কমছে। ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় ভেজাল ওষুধের ব্যবসা করছে। এদের কারণে বদনাম হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসকদের। এমনই একজন আমার পিতা ডা. গোপাল চন্দ্র দাশ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু জীবন যুদ্ধে তিনি চরমভাবে পরাজিত। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও তিনি সার্টিফিকেট ফিরিয়ে দিয়েছেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে মানুষকে বিনামূল্যে হোমিও চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন প্রায় ৪০ বছর। কিন্তু এর পরিনামে পেয়েছেন অশেষ লাঞ্ছনা। সততার মূল্য হিসেবে হারাতে বসেছেন পটিয়ার বাগদণ্ডী গ্রামের জমিও। পিতার মতে, বর্তমানে হোমিও ওষুধ বেশি পরিমাণে ভেজাল হওয়াতে ভালো চিকিৎসকরা বিশুদ্ধ ওষুধ ছাড়া রোগীকে পরিপূর্ণ সুস্থ করতে পারছেন না।

চট্টগ্রামে একাধিক আমদানীকারক না থাকায় হোমিও ওষুধের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ানো হয়। এই ওষুধ প্রধানত আমদানি হয় জার্মানির উইলমার সোয়েব, আমেরিকার বোরিক ট্যাফেল (বিটি), ভারতের ব্যাকসন, হ্যানিম্যান, এসবিএল, পাকিস্তানের কেন্ট ও সুইজারল্যান্ড থেকে। অথচ সিএম পাওয়ারের ওষুধের লেবেল লাগিয়ে নিম্ন শক্তির ওষুধ বিক্রির করছে ব্যবসায়ীরা, আর দাম নিচ্ছে উচ্চ শক্তির। ইনট্যাক্ট সিল ফাইলগুলো রোগীদের ওপর ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। পটেন্সি, বায়োকেমিক, মাদার টিংচার, ট্রাইটুরেশান ওষুধ কিংবা উচ্চশক্তির প্রতি ড্রাম/আউন্সে নিম্ন শক্তির ওষুধ বিক্রি করে প্রতিনিয়ত ঠকানো হচ্ছে হোমিও চিকিৎসক তথা রোগীকে। দেখা গেছে, জার্মানি উইলমার সোয়েবের লেবেল ছাপাখানায় ছাপিয়ে তাতে ভেজাল ওষুধ ভরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশীয় হোমিও ল্যাবরেটরির মাদার টিংচার বোতল থেকে লেবেল উঠিয়ে সেখানে ভারতের হ্যানিমান হোমিও ল্যাবরেটরি নামে লেবেল দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে। ভারতে প্রস্তুতকৃত জার্মানির উইলমার শোয়েবের লেবেল ছাপানো হচ্ছে দেশীয় ছাপাখানায়। অথচ গ্রাহকদের কাছে এই ওষুধ প্রকৃত জার্মানির ওষুধ হিসেবে চড়া দামে গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আরো অভিযোগ রয়েছে, হোমিও ওষুধ ব্যবসায়ীরা ড্রাগ লাইসেন্স নিয়ে বিশুদ্ধ সুরাসার আরএস বিক্রির জন্য অনুমতি নিলেও তাদেরকে সাপ্তাহিক, মাসিক হারে মাসোহারা দিতে হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মচারীকে। হোমিও ওষুধ সংরক্ষণের মাধ্যমগুলো হল বিশুদ্ধ সুরাসার গ্লোবিউলস বা পিল, শঠি।

বিশ্ববাজারে মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে প্রতিটা হোমিও ওষুধের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। এ অবস্থায় সরকারী ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের অভাবে দেশীয় হোমিও ওষুধ ল্যাবরেটরিগুলো যথাযথ মানসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেনি। গড়ে উঠেনি সরকারি হোমিওপ্যাথী গবেষণাগারও। এসব ওষুধের মান নিয়ন্ত্রণে নেই কোন অভিজ্ঞ রসায়নবিদ। বর্তমানে জার্মানির পটেন্সির এক ড্রাম ওষুধ শিশিতে কিছুদিন রাখার পরে দেখা যায়, সেই ওষুধের রং হলুদ হয়ে যায়। কিন্তু পূর্বে জার্মানির হোমিও ওষুধ এভাবে হলুদ রং ধারণ করতো না। বর্তমানে কিছু কিছু জীবন রক্ষাকারি ওষুধও দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা ওষুধে ভেজাল করে গ্রাহকদের ঠকাচ্ছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ীর ফার্মাকোপিয়া সম্পর্কে নেই কোন অভিজ্ঞতা। জার্মানীর চোখের ড্রপ সিনেরিয়া মেরিটিমা অনেক চক্ষু বিশেষজ্ঞ, সার্জনরা ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে পূর্বের ন্যায় এটির মান কমেছে এবং দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ভারতের প্রস্তুতকৃত উইলমার সোয়েবের ওষুধ প্রকৃত জার্মানীর বলে দাম নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত হারে। আবার জার্মানীর বোতলে ভারতের ওষুধ রাখা হচ্ছে, ভারতের বোতলে দেশীয় ওষুধ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে অবাধে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, হোমিও কলেজগুলোতে যেনতেনভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। কথাটি একপ্রকার সত্য হলেও এর পেছনে কথা থেকে যায়। যারা চিকিৎসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান এবং সাধারণত যাদের লক্ষ লক্ষ টাকা দেয়ার ক্ষমতা নেই তাদের অনেকে কিংবা শখের বশে কেউ কেউ ব্যাচেলর অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যাণ্ড সার্জারী (বিএইচএমএস) বা ডিপ্লোমা ইন হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যাণ্ড সার্জারী (ডিএইচএমএস) বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। বিএইচএমএস কোর্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। আর ডিএইচএমএস কোর্স হোমিওপ্যাথিক বোর্ড এর অধীনে পরিচালিত হয়। বিএইচএমএস কোর্স চট্টগ্রামে চালু করার ব্যাপারেও কোন উদ্যোগ নেই। চট্টগ্রামে তিনটি বেসরকারী হোমিও কলেজ রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র ডিএইচএমএস কোর্স চালু রয়েছে। চার শিক্ষাবর্ষ এবং এক বছর ইন্টার্নিশীপসহ মোট পাঁচবছর অধ্যয়ন শেষেই পাওয়া যায় সনদ। অথচ এসব হোমিও কলেজগুলোতে মানহীন শিক্ষা দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থী সারাজীবন ক্লাস না করে শুধুমাত্র পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিয়ে ডিএইচএমএস সার্টিফিকেট লাভ করেন। ঢাকায় সরকারি হোমিও কলেজ থাকায় সেখানকার তুলনায় চট্টগ্রাম হোমিও শিক্ষা চিকিৎসা শিক্ষায় পিছিয়ে রয়েছে। এখানে সরকারিভাবে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করা হয় না হোমিও বিজ্ঞান নিয়ে। বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর নামেমাত্র উদ্যোগ ছাড়া আর কোন প্রকার কাজ চোখে পড়ে না।

এছাড়া সারাদেশের হোমিও কলেজগুলোতে মেধাভিত্তিক বৃত্তির কোন ব্যবস্থা নেই। শিক্ষকদের সম্মানিও যথাযথ যোগ্যতা অনুসারে দেওয়া হয় না। কলেজগুলোতে নেই লাইব্রেরী, আধুনিক ল্যাবরেটরীসহ কোন আধুনিক ব্যবস্থা। ইন্টার্নশীপ করতে হয় দায়সাড়াভাবে। বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক প্র্যাকটিশনার্স অর্ডিনেন্স-১৯৮৩এর বিধান অনুসারে ডিএইচএমএস সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। একজন হোমিও চিকিৎসকের কর্তব্য বিষয়ক নিয়মাবলি ১৯৮৩ ইং ২৫ আগস্ট প্রকাশিত বাংলাদেশ গেজেটের অর্ডিনেন্স সেকশন ৩৪ পৃষ্ঠা ৫৩১৫ এর সার-সংক্ষেপে বর্ণিত রয়েছে। সার্টিফিকেট পাওয়া গেলেই শুধু একজন ভাল চিকিৎসক হওয়া যায় না। লক্ষণ সমষ্টির জ্ঞান, শক্তি ও মাত্রাতত্ত্ব বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হলে বিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করা চাই।
হোমিও বোর্ড ঢাকা থেকে ডিএইচএমএস সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট উত্তোলন প্রক্রিয়া জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। হোমিও কলেজের সিলেবাসও যুগোপযোগি করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা জরুরি। কারণ হোমিও শাস্ত্র যেমনি বিরাট, তেমনি দুরায়ত্তকর। এখানে সাধনা যেমন প্রয়োজন তেমনি চিকিৎসা শাস্ত্রের অনেকখানি জুড়ে রয়েছে ব্যবহারিক প্রয়োগবিদ্যা। প্রত্যেক চিকিৎসককে রোগীর রোগের লক্ষণ, ওষুধের লক্ষণ এবং জীবনি শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে সুচিকিৎসা দিতে হয়। হোমিওপ্যাথির উল্লেখযোগ্য নিয়মনীতিগুলো হল : সদৃশ নিয়মে চিকিৎসা-সিমিলিয়া সিমিলিবাস কিউরেন্টার (সদৃশ দ্বারা সদৃশ আরোগ্য করা), ওষুধ পরীক্ষণ, ওষুধের গতিশক্তি সৃষ্টিকরণ বা শক্তিকরণ, একক ওষুধ, একক মাত্রা, সূক্ষ্ম বা ক্ষুদ্রতম ও পরিবর্তিত মাত্রা, রোগীর ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও ওষুধের সত্তা-স্বাতন্ত্র্য নির্ণয় এবং রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা, রোগীর আংশিক বা আংগিকভাবে নয় সামগ্রিকভাবে চিকিৎসা করা। এজন্য হোমিও শিক্ষা ও চিকিৎসার মানোন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ প্রয়োজন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের মানোন্নয়নে এগিয়ে আসতে পারে।

প্রতিটি হোমিও ওষুধ মানবদেহের উপর প্রয়োগ করে পরীক্ষা করেছিলেন জার্মানির এমডি ডিগ্রিধারী গবেষক ও আবিষ্কারক ডা.হ্যানিম্যান। এলোপ্যাথির স্থুল ওষুধের ক্ষমতা সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর করতে গিয়ে তিনি এটমিক পাওয়ার আবিষ্কার করলেন, যাকে তিনি হোমিও ওষুধেকে শক্তিকরণে রূপ দেন। হোমিও ওষুধ ব্যবসায়িক নামে নয় শাস্ত্রীয় নামে পরিচিত। ১৭৯০ সালে ডা. উইলিয়াম কালেনের “এ ট্রিয়েটিস অন ম্যাটিরিয়া মেডিকা” ইংরেজি থেকে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে কম্প জ্বরের ওষুধ সিংকোনা বা পেরুভিয়ান বার্ক বা চায়না পাকস্থলীর উপর বলকারক ক্রিয়া প্রকাশ করে জ্বর ভালো করে থাকে-এই তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। ডা. হ্যানিম্যান এই পেরুভিয়ান বার্ক বা সিংকোনাকে স্থুল থেকে সূক্ষ করতে করতেই হোমিওপ্যাথি আবিষ্কার করেন। এভাবে তিনি মানবদেহে প্রায় একশ ওষুধ পরীক্ষা করে এর লক্ষণাবলী মেডিরিয়া মেডিকা পিউরাতে লিপিবদ্ধ করেছেন। ডা. হ্যানিম্যান ফ্রাগমেন্টা দ্য ভিরিবাস, অর্গানন অব মেডিসিন, ম্যাটিরিয়া মেডিকা পিউরা, ক্রনিক ডিজিজেস (ব্যবহারিক অংশ) রচনা করে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। খনিজ, উদ্ভিজ্জ, রোগজ, গ্রন্থিজ, শক্তিজ, প্রাণিজ উপাদান থেকে এই ওষুধ তৈরি হয়। কিন্তু ভেজাল ওষুধ ব্যবসায় জড়িত অনেক চিকিৎসক বর্তমানে এলোপ্যাথিক চিকিৎসকের মতো রোগীদেরকে অযথা প্যাথলজি টেস্ট দিয়ে হয়রানি করছে। পাশাপাশি তাদের দেয়া ভেজাল ও ভুল ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঘটতে পারে প্রাণহানী।

শুধু হোমিও চিকিৎসায় নিয়মনীতি থাকলে হবে না, হোমিও ওষুধ ব্যবসায়ও নিয়মনীতি থাকা চাই। বর্তমান সরকার হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নয়নে বিশেষ আশার বাণীও শুনিয়েছেন-এটা কম আশার কথা নয়। তাই হোমিও ওষুধের উপর শুল্কহার কমিয়ে আমদানির অবাধ সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য বন্দর-কাষ্টমসে হোমিও ওষুধ আমদানি পণ্য শুল্কায়ন/ছাড়করণ প্রক্রিয়া সহজ করার নির্দেশনা দেওয়া দরকার। বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবার কথা চিন্তা করে হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানকে যুগোপযোগী করে তোলার বিকল্প নেই। এলোপ্যাথির ব্যয়বহুল চিকিৎসা ছাড়াই একমাত্র হোমিও চিকিৎসাই পারে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে। হোমিও চিকিৎসায় প্যাথলজির সাহায্য ছাড়াই রোগ নির্ণয় করে রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।

এলোপ্যাথি চিকিৎসা যেমন ব্যয়বহুল তেমনি দুঃসাধ্য। পক্ষান্তরে হোমিও চিকিৎসা সুলভ সহজসাধ্য ও দরিদ্রবান্ধব। মেটেরিয়া মেডিকা, রেপার্টরি, অর্গানন, নিয়মনীতি, সার্জারী, কিংবা প্যাথলজির জ্ঞান প্রয়োগ করে এবং নির্ভেজাল ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে অনেক দুরারোগ্য রোগ নির্মূল করা সম্ভব। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে একে আধুনিকায়ন করা এখন সময়ের দাবী।

লেখক : ডা. শোভন দাশ, প্রাবন্ধিক



মন্তব্য চালু নেই