বিশ্বনবিকে চেনার আল্লাহ প্রদত্ত উদাহরণ

আল্লাহ তাআলা সত্যগ্রন্থ কুরআনসহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানুষের মুক্তির দিশারি করে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য একটাই এ জমিনে তাঁর দ্বীন প্রচার করবে। কালিমার দাওয়াত দিবে। সকল অন্যায়-অত্যাচার থেকে পথহারা জাতিকে সঠিক পথে সন্ধান দিবে। কিন্তু পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবের অনুসারীরা বিশ্বনবির পরিচয় সুস্পষ্টভাবে পাওয়ার পরও তাকে অস্বীকার করে। যার ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁদের উদ্দেশ্যে বিশ্বনবিকে চেনার উপমা তুলে ধরে বলেন-

যাদেরকে আমি (আসমানি) কিতাব দিয়েছি, তারা আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে চেনে; যেমনিভাবে চেনে তারা আপন সন্তানদেরকে এবং নিশ্চয় তাদের মধ্যে একদল জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করছে। (হে রাসুল!) এ বাস্তব সত্যটি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে; সুতরাং আপনি কখনও সন্দিহান লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৪৬-১৪৭)

বিশ্বনবির পরিচয় বিষয়ে আল্লাহ তাআলা দৃষ্টান্তটি অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। কেননা যে সন্তান নিজের ঔরষে জন্ম গ্রহণ করেছে তার পরিচয় পিতার কাছে গোপন থাকতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে, হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রাক্তন আহলে কিতাবের আলেম (যিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনারা হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবি হিসেবে নিজের সন্তানকে চেনার মতো করে কিভাবে চিনতেন?

তিনি জবাব দিলেন, যখন আমি বিশ্বনবিকে সর্বপ্রথম দেখেছিলাম তখনিই আমি তাঁকে নবি হিসেবে এমনভাবে চিনে ফেললাম যেভাবে আমি নিজের সন্তানকে চিনি, বরং তাঁর চেয়েও অধিক পরিমাণে নবিকে চিনে নিলাম।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করলেন- আপনি এ কথা ঠিকভাবে বলতে পারলেন? জবাবে তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওরাত কিতাবে আখেরি নবির যে সব বৈশিষ্ট্য এবং নিদর্শন বর্ণনা করেছেন তা দেখে আমি নিশ্চিত হলাম যে ইনিই আল্লাহর সর্বশেষ নবি।

আর নিজের সন্তানকে যদিও কয়েকটি প্রকাশ্য ইঙ্গিত এবং লক্ষণ দ্বারা চেনা সম্ভব তবুও সন্দেহের অবকাশ থাকে; কারণ স্ত্রীকে অবিশ্বাস করার সম্ভাবনা থেকে যায়। এরপর হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে কল্যাণময় বস্তু (ঈমান) গ্রহণ করার তাওফিক দিয়েছেন।

এ জন্যই আল্লামা ইবনে জারির তাবারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আল্লাহর বাণী- সত্য তাই যা আপনার প্রভু আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং যা তাঁর পক্ষ থেকে আপনার নিকট নাজিল হয়েছে। পক্ষান্তরে আহলে কিতাবের অনুসারীরা যা বলেছে তা সত্য নয়।

অর্থাৎ বাইতুল্লাহ-ই সত্য ক্বিবলা এবং সকলের জন্য চিরন্তন ক্বিবলা। আর এটিই ছিল হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ক্বিবলা এবং তাঁর পূর্ববর্তী আম্বিয়াগণের ক্বিবলা।

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সত্যের উপর অটল অবিচল থাকার এবং কাবাকে (বাইতুল্লাহ) ক্বিবলা হিসেবে মেনে নিয়ে নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। সন্দেহ ও সংশয় পোষণকারীদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া থেকে হিফাজত করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই