বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ ১% মানুষের হাতে

বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। অন্যদিকে পৃথিবীর মোট দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক এক শতাংশেরও কম সম্পদের মালিক। বৈষম্যের ভয়াবহ এ চিত্র উঠে এসেছে অ্যাকশন এ্যাইডের এক প্রতিবেদনে।

একবিংশ শতাব্দির সম্পদের বৈষম্য শীর্ষক সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার একসঙ্গে সারাবিশ্বে প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের ৪৫টি দেশের সম্পদের বৈষম্য এবং অভিজ্ঞতার তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ঢাকায়ও এক অনুষ্ঠানে বৈষম্যের ওই পরিসংখ্যান তুলে ধরে অ্যাকশন এ্যাইড।

প্রতিবেদনের বলা হয়, বিশ্বজুড়ে সব ধরনের বৈষম্য বাড়ছে। নৈতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের বাইরেও এ বৈষম্যের বিসৃতি লক্ষণীয়। বিশ্বের দেশে দেশে নারী-পুরুষে, সাদা-কালোয়, দলিত-ব্রাহমিন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে এ বৈষম্য উত্তোরত্তর বাড়ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২০০ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আফ্রিকা মহাদেশের মোট সম্পদের (২ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) চেয়ে বেশি এবং ব্রাজিলের মোট সম্পদের (৩ দশমিক ১৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সমানপ্রায়।

এতে আরো বলা হয়, বিশ্বের মাত্র ৬৪ ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ ৩৫০ কোটি দরিদ্র মানুষের সমান। ৪০ শতাংশ মানুষের গড় আয় বিশ্বের মোট আয়ের মাত্র ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সংস্থার বাংলাদেশ শাখা পরিচালক ফারাহ কবির বলেন, অল্প ক’জন মানুষ যখন বিশ্বের বিপুল সম্পদের মালিক তখন দারিদ্র, সম্পদের বৈষম্য নিয়ে অনেক কিছু বলার থাকে না। সব দেশের সরকার বৈষম্য অবসানের প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু ওই পথে তারা হাঁটেন না। ফলে দিনে দিনে অর্থের প্রভাবে সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।

ফারাহ কবির আরো বলেন, রাজনীতিবিদদের সুন্দর কথামালায় সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে না। সত্যিকার সমাধানের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে, যা জনগণের দাবি। এ জন্য দরকার মৌলিক পরিবর্তন।

অ্যাকশন এ্যইড পরিচালক বলেন, আমাদের মতো দেশে (বাংলাদেশে) নারী ও পুরুষদের জন্য দরকার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে মনোযোগী হওয়া জরুরি। একইসঙ্গে সামাজিক সুরক্ষায় ধনীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।

অ্যাকশন এইডের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, উন্নশীল দেশের নারীকর্মীরা আরো ভালো থাকতে পারত, যদি তারা পুরুষ সহকর্মীদের সমান বেতন-ভাতা পেত। সাব-সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ৮০ শতাংশ কম পায় নারীরা।

বিশ্বের ৩২ দেশের কর্মীরা (বিশ্বের মোট নারী জনগোষ্ঠীর অর্ধেক) স্বাস্থ্যসেবা খাতে ২০১০ সালে ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ শ্রম দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ওই শ্রমের অর্ধেকের টাকা নারীদের দেয়া হয়নি।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের বাসিন্দা কৃষিকাজে নিয়োজিত শাহজাদা বেগমের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষকদের বিশেষ করে নারী কৃষকদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। এ নারী কৃষক বলেন, আমাদের দেশের (বাংলাদেশের) জিডিপি বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু জিডিপি বাড়ার প্রতিফলনের ছিটেফোঁটাও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে দেখা মিলছে না, বিশেষ করে কৃষিকাজ করে খাওয়া মানুষের জীবনে।

প্রতিবেদনে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট জোসে মুজিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা শুধু তাদের মুনাফা বাড়াতে চায়। এখানে সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, অতিরিক্ত মুনাফার অংশ শ্রমিকদের মধ্যে সমবণ্টনের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা উৎপাদিত পণ্য কিনতে পারে।

প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে, যা সমাজে সম্পদের বৈষম্য কমাতে ভূমিকা রাখবে। বলা হয়েছে, বেতন বাড়ানো, নারী কর্মীদের সম্মানের সঙ্গে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শ্রমের উপযুক্ত মজুরি দেয়া।

এ ছাড়া সুপারিশে বৈষম্য কমাতে কর ব্যবস্থাপনা সংস্কারের সুপারিশের পাশাপাশি সামাজিক খাতে আয়ের একটি অংশ ব্যয় করতে ব্যবসায়ীদের উদ্ধুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ধরনের ব্যয় বাড়ানো গেলে, দরিদ্র নারীরা কাজের সুযোগ করে নিতে পারবে।



মন্তব্য চালু নেই