বিশ্বের কোটি তরুণীর অনুপ্রেরণা এই নিধি!

জনমাবনশূন্য তুষাররাজ্য। তাপমাত্রা নামতে নামতে চলে গেছে মাইনাস ৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সূর্যের আলো? তাও মাত্র ঘণ্টা তিনেকের জন্য। এমনি এক প্রাণঘাতী তুষাররাজ্যে ১৩ দিনে ৫ হাজার কিলোমিটার একাই গাড়ি চালালেন অদম্য সাহসী এক নারী। নাম তার নিধি তিওয়ারি। তিনি ভারতীয় তরুণী।

সেই মুহূর্তগুলো ছিল অন্যরকম। চারদিকে ধূ ধূ সাদা বরফ। জনমানব তো দূরের কথা‚ কোনো প্রাণের চিহ্নই নেই। তারমধ্যে বরফ চিরে এগিয়ে চলেছে একটা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার। এভাবেই নিধি ১৩ দিন ধরে ৫ হাজার কিমি গাড়ি চালালেন সাইবেরিয়ায়। পাড়ি দিলেন বিশ্বের শীতলতম গ্রাম ওয়েমায়য়াকোন। যেখানে এখন গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

নিধির গল্পটাই এমন। গেল বছর দুই বান্ধবীকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিল্লি থেকে লন্ডন গিয়েছিলেন নিধি। ১৭ দিন ধরে তাকে অতিক্রম করতে হয়েছিল ২৩ হাজার ৮০০ কিমি। সাড়া পড়ে গিয়েছিল তিন তরুণীর এ অভিযান। তবে এবার আর কাউকে নিয়ে নয়। নিধি একাই গিয়েছিলেন তুষাররাজ্যে।

নিধির যাত্রা শুরু হয়েছিল রাশিয়ার য়াকুৎস্ক শহর থেকে। এটা হল বিশ্বের শীতলতম শহর। য়াকুৎস্ক থেকে বন্দর শহর ম্যাগাডান এবং ফের ফিরে আসা। পথে পড়েছিল ওয়েমায়য়াকোন। বিশ্বের শীতলতম জায়্গা যেখানে স্থায়ী ভাবে মনুষ্যবসতি আছে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পথে একা গাড়ি চালালেন নিধি।

সারাদিনে ১০-১২ ঘণ্টা গাড়ি চালতেন নিধি। বেশিরভাগই অন্ধকারে। কারণ এই অংশে শীতে সূর্যের আলো থাকে মাত্র ৩ ঘণ্টা। তাই নিজের যাত্রাপথ নিখুঁত ভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন নিধি। কোথায় পাবেন সরাইখানা। বা কোথায় থাকবে পেট্রোল পাম্প। বেশিরভাগ সময়ে হিটার চালিয়ে গাড়িতেই থাকতেন।

অজানাকে জানার নেশা নিধির ছোটবেলা থেকেই। মেয়ে বলে বাধা দেননি বাবা মা। বরং বলেছেন এগিয়ে যেতে। মাত্র ১১ বছর বয়সে ভুটানে ট্রেকিং করেছিলেন নিধি। ২২ বছর বয়সে শেখেন ড্রাইভিং। সোলো ট্রেকিং বা সোলো ড্রাইভিং-অভিযান‚ দুয়েই তিনি সিদ্ধহস্ত।

বিয়ের পরেও বন্ধ হয়নি নিধির বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। এখন তার দুঃসাহসিক অভিযানের প্রধান উৎসাহদাতা স্বামী ও দুই ছেলে। দুই ছেলে হরহামেশাই সঙ্গী হয় মায়ের। নিধির বড় ছেলের জন্ম লাদাখে। শিশুকে ক্যারিয়ারে বেঁধেই ট্রেক করেছিলেন মা। এখন তো অভিযানে যায় ছোট ছেলেও।

সাইবেরিয়ায় নিধির একক-অভিযান বা শিক্ষামূলক ভ্রমণের সহযোগী ছিল ১৫ টি স্কুল। তাদের পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল নিধির। মূল উদ্দেশ্য‚ ওই দুর্গম অংশকে চেনা এবং জানা। প্রত্যক্ষ করা‚ কীভাবে মানুষকে জীবনধারণ করতে হয়। আর একটি বার্তাও দিতে চান নিধি। তা হল‚ অভিযান বা হাইওয়ে ড্রাইভিং। কোথাওই কিন্তু মেয়েরা ব্রাত্য নন। মেয়ে বলেই সে অরক্ষিত‚ এটা ভাবার কোনো জায়্গা নেই। সূত্র: বাংলালাইভডটকম।



মন্তব্য চালু নেই