বিয়ের পর দু’জনে সরে যাচ্ছেন অনেক দূরে? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

একজন মানুষের সাথে মন, শরীর, অনুভূতি ভাগ করে নেয়াটা খুব সহজ কোন কাজ নয়। কিন্তু বিয়ের পর সবাইকে খুব যত্ন সহকারে এই কাজগুলোই করতে হয়। মনে রাখবেন, প্রেম আর বিয়ে কখনই এক ব্যাপার নয়। প্রেমিকের কাঁধে মাথা রেখে আকাশটা দেখতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু সেই প্রেমিক যখন বর হয়ে সব ব্যাপারে নাক গলানো শুরু করে, তখন বিরক্তিটা যেন লাগামছাড়া হয়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে খুব সফল দাম্পত্য জীবনেও হুট করে সুর কেটে যেতে পারে। যদি কখনও টের পান বিবাহিত জীবনে আপনারা ক্রমশ একে অপরের দূরে সরে যাচ্ছেন, তখন দেরি না করে নিচের কাজগুলো শুরু করুন।

১. পুরনো সুখস্মৃতি গুলো মনে করুন

এই ধরাধামে মানুষই সম্ভাবত সবচেয়ে স্বার্থপর প্রাণী। এরা অতীতকে মনে রাখতে চায় না। কিন্তু অতীতের উজ্জ্বল দিনগুলোই আমাদের বহুভাবে বাঁচাতে পারে। ধরুন সঙ্গীর বর্তমান আচরণ আপনার পছন্দ হচ্ছে না, কথায় কথায় তার সাথে আপনার খুনসুটি হচ্ছে, এ সময়ে আপনার প্রধান করনীয় মাথা ঠাণ্ডা রাখা। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় সুন্দর স্মৃতিগুলোর রোমান্থন করা। ভেবে দেখুন এই মানুষটাই আপনার অসুস্থতায় রাত জেগে বসে ছিল, আপনার অভিমান ভাঙাতে এই মানুষটাই এগিয়ে এসেছিল সবার আগে, আপনার হাসিতে যে মায়া ঝরে ঝরে পরে এই মানুষটাই প্রথম বলেছিল। ভাবতে শুরু করুন দেখবেন এমন হাজার মজার স্মৃতি মনের মাঝে উঁকি দেবে। আর মনটাও খানিকটা সময়ের জন্য ভালো হয়ে যাবে।

২. সমস্যাটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন

সুন্দর স্মৃতি আপনার মনটা কিছু সময়ের জন্য ভালো করে দেবে, এবার খুঁজে বের করুন কী কারণে সম্পর্কে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। হ্যাঁ প্রথম দিকে তেমন কোন সমস্যাই চোখে পড়বে না। গভীরভাবে ভাবুন। দেখুন তো নিচের এই কাজটি আপনি বা আপনার সঙ্গী করছে কি না-

• গত কয়েক মাস ধরে আপনারা একে অপরকে বেশি সময় দিচ্ছেন না।

• সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনারা বেশি সময় ব্যয় করছেন।

• আপনার সঙ্গীর কর্মক্ষেত্রে ঝামেলা চলছে, কিন্তু আপনি তা জানার চেষ্টাও করেন নি।

• আপনাদের সম্পর্কটা হয়ে পড়েছে বড্ড ফর্মাল। একঘেয়েমি আপনাদের পেয়ে বসেছে। ভেবে দেখুন এর পিছনে আপনার দায়টাও কম নয়।

• আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আপনি সঙ্গীর নানা কাজে বিরক্ত হচ্ছেন। আপনার শরীরে তার গরম নিঃশ্বাস , মুখে হাত না দিয়ে হাঁচি দেওয়া, নাক ডাকা, তীব্র সাউন্ডে টিভি দেখা বা অন্য যে কোন কারণে আপনার বিরক্তি ক্রমেই বাড়ছে। আপনার প্রতি এমন বিরক্তি সঙ্গীর মাঝেও সৃষ্টি হতে পারে। তাই সাবধান থাকুন।

৩. শুরু হোক আলোচনা

আপনি সমস্যাটা ধরতে পেরেছেন বা কিছুটা আইডিয়া পেয়েছেন বা ধরতে পারেন নি। কোন সমস্যা নেই। আপনার সঙ্গীর সাথে আলোচনায় বসুন। না রুদ্ধদ্বার বৈঠক নয়, মনের সবকটা দরজা জানালা খুলে দিয়ে আলোচনায় বসুন। প্রথমেই আবেগ মিশ্রিত গলায় সঙ্গীর সাথে পুরনো মজার স্মৃতিগুলো স্মরণ করুন। তার বর্তমান অবস্থার খোঁজ খবর নিন। তাকে উদ্বিগ্ন দেখলে তার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখুন। নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন, ‘সবসময় পাশে আছি।’ মজার ছলে একসময় বলে ফেলুন আপনি তার কী কী আচরণে বিরক্ত হচ্ছেন বা কষ্ট পাচ্ছেন। একই ভাবে তার কাছ থেকেও শুনুন তিনি আপনার প্রতি বিরক্ত কি না। আপনার খুব বেশি দোষ না থাকলেও সরি বলুন। মনে রাখবেন সরি বললে আপনি ছোট হবেন না, বরং একটা সরিতেই অনেক কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান লুকিয়ে থাকতে পারে।

৪. তিনি উত্তেজিত আপনি দিন উপহার

আপনার সঙ্গী প্রায়শই অল্পতে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে? আপনি মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। সে উত্তেজিত হলেই আপনি তাকে উপহার দিন। কী উপহার দেবেন? হাসির চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে? সঙ্গী উত্তেজিত হলেই আপনি হাসিমুখে বলুন, ‘আজ গরমটা মনে হয় বেশি পড়েছে।’ আপনার হাসি, নরম কথায় দেখবেন পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে চলে আসবে। সম্পর্কের টানাপোড়েনের সময়ে বেশি কিছু চিন্তা না করে তাকে আরও উপহার দিন। উদাহরণঃ আপনার স্ত্রীর জন্য নিয়ে আসুন বেলি মুলের মালা, চকলেট, বা আপনার স্বামীর জন্য নিয়ে আসুন ছোট একটা কেক বা এক হালি হাওয়াই মিঠাই।

৫. বেড়িয়ে আসুন দূর থেকে

চিন্তা, আলোচনা, উপহার সবই তো হল। এবার বেড়িয়ে পড়ুন সব ভুলে, দূরে কোথাও। সমুদ্র, পাহাড়, রিসোর্ট, বারবিকিউ, সেলফি সব চলতে থাকুক। হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতে ভুলবেন না কিন্তু। ফিরে যান পুরনো দিনগুলোতে। কয়েকদিন জগত সংসার ভুলে যান। খুব নিকট আত্মীয় ছাড়া কারো সাথে মুঠোফোনে কথা বলা বন্ধ রাখুন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দূরে থাকুন। এই কয়েকদিন শুধু প্রেম আর প্রেম। নতুন করে নিজের স্বামীর বা স্ত্রীর প্রেমে পড়ার মত আনন্দ আর কিছুতে নেই।

৬. চলুক মন্ত্রপাঠ

আপনি কি জানেন বিবাহিত জীবনে সফল হওয়ার এক অব্যর্থ মন্ত্র আছে। সেই মন্ত্রপাঠ করলে এবং মন্ত্রের কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করলে অনেক সমস্যা থেকে আপনি দূরে থাকবেন। তাই প্রতিদিন কয়েকবার সঙ্গীর কানের কাছে এই মন্ত্রটা পাঠ করুন। মন্ত্রটা হচ্ছে, ‘ভালোবাসি, ভালোবাসি।’

পরামর্শ দিয়েছেন-

আরভী আহমেদ,
সাইকোলজিস্ট
চেম্বার- ৯ রায়েরবাজার, পশ্চিম ধানমণ্ডি, ঢাকা।
যোগাযোগ- ০১৭১৫-০৯৩৬৫১



মন্তব্য চালু নেই