বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলেকে নিয়ে কেন এই অপপ্রচার?

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছোট ছেলে শওকত আলীকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে বেশ আলোচনা চলছে। তাকে কোথাও ফেরিওয়ালা কোথাও চা দোকানের পানি সরবরাহকারী হিসেবে উপস্থাপন করে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয় কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা সত্যাসত্য যাচাই না করেই এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো, শওকত আলী মানসিক ভারসাম্যহীন। স্ত্রী ও এক কন্যাকে নিয়ে তার সংসার। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তিনি নিরুদ্দেশ থাকেন। রুহুল আমিনের অন্য সন্তানদের মতো শওকত আলীর পরিবারও নিয়মিত ভাতা পায়। তবে যেহেতু একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিই মানসিক ভারসাম্য এ কারণে ভাতার সামান্য টাকায় পরিবারের ভরণ-পোষণ দুরহ হয়ে উঠেছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের বাগপাঁচড়া (রুহুল আমিন নগর) গ্রামে যান আমাদের প্রতিনিধি। সেখানে শওকতের স্ত্রী রাবেয়া আক্তারের (৩০) সঙ্গে অনেক কথা হয়।

তিনি জানান, তাদের একমাত্র মেয়ে আমেনা আক্তার বৃষ্টি (১০),স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল অক্সফোর্ড মডেল একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। সংসারের অভাব-অনটনের কথাও জানালেন তিনি।

ফেসবুকে অপপ্রচার নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী একটি দুষ্টচক্র হীন উদ্দেশ্য নিয়েই এ অপপ্রচার চালিয়েছে। আর এ মিথ্যা অপপ্রচারে তাদের সুযোগ করে দিয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছোট ছেলে শওকত আলীর মানসিক অসুস্থতা। এটিকেই পুঁজি করেই ওই দুষ্টচক্র মহান মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ সন্তানের সন্তানকে নিয়ে এমন ঘৃণ্য অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।

shaokat01

মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করার লক্ষ্যে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে সেই দুষ্টচক্রটিই আধা পাগল শওকতকে সামান্য টাকার লোভ দেখিয়ে তার কাঁধে পুরনো বোতল ঝুলিয়ে দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে দেয়। প্রচার করে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলে ফেরি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে।

কিন্তু আলোচিত ছবিটিতেই রয়েছে গলদ। কারণ, একটি গাছের ডালে অন্য একটি পাতাসহ ডালের মধ্যে পুরনো প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে শওকতকে ফেরি করতে দেখা যাচ্ছে। এমন উদ্ভট ফেরিওয়ালা বর্তমানে গ্রামেগঞ্জে চোখে পড়ে না।

গত বছরও একই কায়দায় শওকতকে দুই শত টাকা দিয়ে একটি ঠেলা গাড়ি ঠেলতে দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকের মাধ্যমে অপপ্রচার চালায়, তিনি নাকি ঠেলাগাড়ি ঠেলে জীবিকা নির্বাহ করেন। আরও এক বছর আগে গ্রামের একটি চা-দোকানে শওকত চা খাওয়ার পর টাকা দিতে না পেরে দোকানের কাপ-পিরিচ ধুয়ে দেন। ওই সময় বিষয়টিকে নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়- শওকত চা-দোকানে কাজ করে জীবিহা নির্বাহ করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের বড় মেয়ে নুরজাহান বেগমের বড় ছেলে সোহেল বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের পক্ষের ও সরকার বিরোধী একটি দুষ্টচক্র আমার অসুস্থ ছোট মামাকে নিয়ে এ ঘৃণ্য মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এতে করে আমাদের পরিবারের সবাই মানসিকভাবে অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আমাদের দাবি, প্রকৃত সংবাদ প্রকাশ করা হোক। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে প্রকৃত সত্য তুলে সাধারণের মাঝে ছড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচারটি প্রতিহত করা।’

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পারিবারিক সূত্র থেকে জানা যায়, তার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় ছেলে বাহার ১৪ বছর আগে মারা যান। তার পরিবারের লোকজন সিলেটে বসবাস করছে বলে জানা যায়। ছোট ছেলে শওকত আলী (৪৬) ও তিন মেয়ে নূরজাহান বেগম (৫৫), রিজিয়া বেগম (৪৯), ফাতেমা বেগম (৪৭)। এর মধ্যে তিন মেয়ে সবাই স্বামী-সন্তান নিয়ে চট্টগ্রামে সরকারের বরাদ্দ দেয়া বাড়িতে বসবাস করছেন। তারা সবাই শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। একমাত্র ছোট ছেলে শওকত ও তার স্ত্রী-মেয়ে নোয়াখালীর গ্রামে বাড়িতে থাকেন।

শওকতের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার জানান, ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে বিয়ের পর তারা ননদের সঙ্গে চট্টগামে থাকতেন। এক বছরের মাথায় আবার নোয়াখালী চলে আসেন। গ্রামের বাড়িতে আজ থেকে ৩০ বছর আগে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী তিন কক্ষের একটি পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়। বর্তমানে সেখানেই থাকেন।

স্বামীর মানসিক ভারসাম্যহীতা সম্পর্কে বলেন, কেউ তাকে ৫০-১০০ টাকা দিলেই তার পক্ষে কথা বলেন। এমনকি টাকা দিলে চেক-দলিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে সই দিয়ে দেন। দিনে মানুষের কাছে হাত পেতে ৪০-৫০ টাকা পেলেই তার আর কিছুই লাগে না। দোকানে বসে বসে শুধু চা-সিগারেট খান। মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।

তিনি জানান, তার স্বামীর নামে মাত্র চার শতাংশ জমি আছে। তবে যে ভবনটিতে তারা থাকেন তা এখনও পরিবারের সবার নামে। তারা সর্বসাকুল্যে ৬ হাজার ৩২০ টাকা ভাতা পান। এটা বীরশ্রেষ্ঠের নামে সরকার থেকে মাসিক বরাদ্দকৃত টাকার একটি অংশ। রেশন সুবিধাও পাচ্ছেন। তবে, এ টাকা দিয়ে সংসার চালানো, স্বামীর নিয়মিত চিকিৎসা ও মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতে অসুবিধা হচ্ছে বলেও জানালেন তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে যদি বীরশ্রেষ্ঠের সবচেয়ে অসহায় ছোট ছেলে শওকতের অসুস্থতা ও অভাবের কথা বিবচনায় নিয়ে তাদের জন্য মাসিক ভাতা ১০ হাজার টাকা করে দেয়ার দাবি জানান রাবেয়া আক্তার।



মন্তব্য চালু নেই