বৃদ্ধার জন্য নিয়ম ভেঙে কাজ করেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ইউএনও এহসানুল মামুন

সুন্দরী বেওয়া নামের একজন বৃদ্ধা এসেছিলেন জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বি এম এহসানুল মামুনের সাথে দেখা করতে। উদ্দেশ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র। এই পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ায় সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছিলেন না। ইউএনও’র সাথে দেখা করতে এসে এই অসহায় দরিদ্র বৃদ্ধা যে বিস্ময় নিয়ে ফিরে গেছেন তা হয়ত তার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়। আর ইউএনও এহসানুল হক এই বৃদ্ধার জন্য নিয়ম ভেঙে কাজ করেও অনুতপ্ত নন। তিনি তৃপ্ত। মানবতার জন্য অনিয়ম যেন জায়েজ হয়ে যায়। আসলেই হয়ত তাই।

ইউএনও এহসানুল হক মামুন নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, আজকে অফিস থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমেছি, উদ্দেশ্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্যারকে রিসিভ করে এসি ল্যান্ড অফিসে নিয়ে যাওয়া। হঠাৎ চোখ গেল গাড়ির অদূরে দাঁড়ানো এক বয়স্ক নারীর দিকে। পরনে একটি জরাজীর্ণ শাড়ি, হাতে একটি কাগজ। নিজে থেকে গিয়েই প্রশ্ন করলাম, আপনি এখানে কি কোনো অফিসে কাজে এসেছেন? জবাবে বললেন, আমি ‘টুয়ানো’ সাবের সাথে দেখা করব।

বললাম আমি সেই লোক, আমাকে বলেন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? তিনি উত্তরে বললেন আমি ‘টুয়ানো’ সাবের রুমে যেয়ে বলব। একদিকে প্রটোকল এর সময় হয়ে এসেছে, অন্যদিকে মানবতার প্রশ্ন জড়িত। শেষ পর্যন্ত মানবতা জয়ী হলো। বৃদ্ধাকে নিয়ে পুনরায় অফিসে নিয়ে বসলাম। তাকে আমার সামনের চেয়ারে বসতে বললাম কিন্তু রাজি হলেন না। হাতের কাগজটি নিয়ে দেখলাম জন্ম নিবন্ধন এর সনদপত্র। কথা বলে জানলাম তার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে, এ জন্য কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না। নির্বাচন কর্মকর্তাকে একটি চিরকুট লিখে দিলাম বিনা হয়রানিতে নারীর আইডি কার্ড করে দে্ওয়ার জন্য, সাথে ফোন করে বলে দিলাম। সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ডেকে বলে দিলাম বয়স্ক ভাতা এর একটি কার্ড করে দেওয়ার জন্য, আইডি কার্ড এর জায়গায় মন্তব্য কলামে লিখবেন ইউএনও এর নির্দেশনা, জন্ম নিবন্ধন এর নং-টি পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখবেন আইডি কার্ড এর জায়গায়।

এ ক্ষেত্রে যদি নিয়মের ব্যত্যয় হয় তবে এই বৃদ্ধার জন্য এইটুকু অনিয়ম হোক। সদর ইউপি চেয়ারম্যানকে ফোনে বলে দিলাম তাকে একটি ফেয়ার প্রাইস কার্ড এবং ভিজিএফ কার্ড করে দেওয়ার জন্য। বৃদ্ধার বয়স ৮০ এর ওপর এবং একটি চোখ নষ্ট। এই নারীকে আমরা যদি সহায়তা করতে না পারি তাহলে এই চেয়ারে বসে লাভ কি আমার? বৃদ্ধা যাওয়ার সময় দেখলাম তার একটি মাত্র চোখে পানি চিকচিক করছে। আমি নিশ্চিত এটি আনন্দাশ্রু। যাবার সময় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে গেল, “বাবা, আমি আল্লার কাছে দোয়া করি তুমি অনেক বড় হও।” আমার তখন মনে হলো, স্যারকে সঠিক সময়ে রিসিভ না করার জন্য যতটুকু ভুল বা অন্যায় হয়েছে তার তুলনায় এই দোয়া আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এহসানুল হক মামুন বলেন, এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। দায়িত্ব যদি বলেন সেটা অফিসিয়াল হয়ে যায়। এর সাথে মানবিকতাও থাকবে। ওই বৃদ্ধার নাম সুন্দরী বেওয়া। তিনি গতকাল এসেছিলেন আমার এখানে। আর আজ আমি নিজে তাকে নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে গিয়েছিলাম প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য নাম অন্তর্ভুক্ত করতে। তাঁর এক চোখ নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় আমি নিজে আমার সাক্ষরসহ লিখিত দিয়ে এসেছি। কালই সুন্দরী বেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়ে যাবেন।

মানবিকতার প্রশ্নে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রত্যকে নিজেদের জায়গা থেকে শুধু একটু সহানুভূতিশীল হলে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে উঠতে পারে।



মন্তব্য চালু নেই