বেঁচে থাকতে সন্তানের কিডনি বিক্রি করছে মা!

স্বামী ও চার সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে জীবনযাপন করছেন মা ওম হুসেইন। আরও কয়েক মিলিয়ন ইরাকির মতো তারাও যুদ্ধের কারণে চরম আর্থিক সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। হুসেইনের স্বামী আলী বর্তমানে একদিকে বেকার ও অন্যদিকে ডায়বেটিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। বিগত নয় বছর ধরে স্বামীর বদলে হুসেইন নিজেই বিশাল পরিবারটির মুখে দানাপানি জোটাচ্ছেন। কিন্তু দীর্ঘ সংগ্রামের পর এখন তিনিও কোনো কাজ পাচ্ছেন না।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদের পূর্বাঞ্চলের একটি ভাড়া করা ঘরে বাস করেন হুসেইন ও তার পরিবার। মাত্র এক রুমের ঘরটিতে বসেই হুসেইণ জানান, ‘আমি খুবই ক্লান্ত। আমরা বাসাভাড়া, বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় জিনিস এবং খাবার কেনার মতো অর্থও কোথাও পাচ্ছি না।’ কয়েকমাস আগেই তাদের জীর্ণ ঘরটিও ভেঙে গেছে। এরপর থেকে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের দয়ায় বেঁচে আছেন তারা। কিন্তু এই দয়াওতো অফুরন্ত নয়।

হুসেইনের স্বামী আলীর কণ্ঠে শোনা যায়, ‘আপনি চিন্তা করতে পারবেন না, আমি সবকিছু করেছি বেঁচে থাকার জন্য। কসাই, দিনমজুর থেকে শুরু করে ময়লা ফেলার কাজও করেছি। আমি তাদের কাছে টাকা চাইতে পারিনি, কিন্তু তারা আমাকে কিছু টাকা দিয়েছে কাজের বিনিময়ে। এমনকি আমি খাবার পর্যন্ত তাদের কাছে চাইতে পারিনি। আমি আমার সন্তানদের রাস্তা থেকে নষ্ট রুটি কুড়াতে বলিনি কিন্তু আমরা সেটা খেয়েছি।’

যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট এমন চরম দরিদ্র অবস্থার মাঝে মানুষ অনেক অসম্ভব কাজও করে ফেলতে পারে। যেমনটা আলী করেছেন, ‘আমি আমার কিডনি বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। দিনে দিনে পরিবারের বোঝা হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। তাই দয়ার জীবন বেঁচে থাকার চেয়ে আমার শরীর বিক্রি করে দেয়াই ভালো।’ আলী এবং হুসেইন তাদের কিডনি অবৈধভাবে বিক্রি করার জন্য একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা যায়, তাদের কিডনি অতটা ভালো নয়। শেষমেষ কিডনিও বিক্রি করতে না পেরে এই দম্পতি আরও কঠিন সিদ্ধান্তের দিকে আগালেন।

‘আমাদের এমন দুর্দশার কথা চিন্তা করে শেষমেষ আমরা আমাদের সন্তানদের কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ ঠিক কোন বাস্তবতায় পিতা-মাতাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয় তা বোধকরি যাদের অন্তত একবেলা খাবারও জুটছে তারাও বুঝতে পারবেন না। ক্রিমিয়া যুদ্ধের সময় অভাবে নিজের সন্তানের কলিজা খাবার মতো ঘটনাও শোনা গিয়েছিল, কিন্তু সেই যুদ্ধের পর মানুষ ভেবেছিল পৃথিবীর মানুষকে হয়তো আর এমন বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যেতে হবে না। কিন্তু আজ এই একবিংশ শতাব্দীর উৎকর্ষতার সময়েও পিতা-মাতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে দুমুঠো খাবারের জন্য সন্তানের কিডনি বিক্রি করার।

২০১৪ সালে বিশ্বব্যাংকের করা এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ইরাকের প্রায় ত্রিশ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে জীবনযাপন করছে। আর এই দারিদ্র অবস্থার সুযোগ নিয়ে অবৈধ অঙ্গ-প্রতঙ্গ ব্যবসায়িরা ইরাকে বেশ ভালোভাবেই জাকিয়ে বসেছে। এই দলগুলো একটি কিডনির জন্য দশ হাজার ডলার পর্যন্ত দেয়। মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনজীবি ফিরাস আল বায়াতির মতে, এই অবৈধ চক্র এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেয়া যাচ্ছে না।



মন্তব্য চালু নেই