বেতন-বোনাস পাননি অধিকাংশ শ্রমিক

ঈদুল আজহা কড়া নাড়ছে দরজায়। ঈদের আর মাত্র চার দিন বাকি। সবাই যখন পোশাক বা কোরবানির পশু কিনতে ব্যস্ত, তখন বেতন-বোনাসের টাকা পেতে দৌঁড়ঝাপ করছেন লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক। কোরবানির পশু কেনা তো দূরের কথা, খাওয়া আর বাসাভাড়া দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে বেতন-বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়নি। এদিকে শ্রমিক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ঈদের আগে এসব কারখানা আদৌ বেতন-বোনাস দেবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

অপরদিকে মালিকপক্ষ জানিয়েছে, রোববার সব কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়েছে। তার দুই-তিন দিন আগে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে।

কিন্তু শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়েছে। আর বেতন দেওয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ কারখানায়। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসের অর্ধেক বেতন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কিছু বড় কারখানা ছাড়া অধিকাংশ কারখানাই বেতন ও বোনাস দেয়নি। বেতন বোনাস না পাওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

বিজিএমইএর লেবার উইং জানিয়েছে, বেতন-বোনাস পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় থাকা ১ হাজার ২০০ কারখানার তালিকা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রায় ৭৫০টি কারখানা পরিদর্শন করেছে সংস্থাটি। এদের মধ্যে গ্রিন ভ্যালি সোয়েটারস ও রিমি অ্যাপারেলস ছাড়া সবাই সময়মতো বেতন-বোনাস দিতে পারবে না বলে প্রতিবেদন দিয়েছে মনিটরিং দল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেছে। বিজিএমইএর মনিটরিং টিম এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

তবে গার্মেন্টস ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু বলেন, ‘কেবল ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস ও ৫০ শতাংশ কারখানায় বেতন দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা বেতন-বোনাস নিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করবেন। ২০ দিনের বেতন ও বোনাস ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকদের কাছে থেকে খবর আসছে, এখনো অনেক কারখানা বেতন-বোনাস দেয়নি। এখন শ্রমিকদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। শ্রমিকদের অপেক্ষা করার সময় নেই।’ আজ-কালের মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবি জানান তিনি।

জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতনসহ ঈদ বোনাস দেবে বলে মালিকপক্ষ রাজি হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ শতাংশ শ্রমিক বেতন পাননি। বোনাস পেয়েছেন অল্প সংখ্যক শ্রমিক।

সরকারি নির্দেশনা সত্ত্বেও অধিকাংশ কারখানা বেতন-বোনাস দেয়নি বলে জানান গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (জিটিইউসি) সাধারণ সম্পাদক কাজী রুহুল আমিন। তিনি বলেন, ‘আমরা দাবি জানিয়ে আসছি, সেপ্টেম্বর মাসের পুরো বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার জন্য। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০ তারিখের মধ্যে অর্ধেক মাসের বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে। তারপরও নানা গড়িমসি করে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণও বাড়াতে হবে।’

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অনেক কারখানা আগস্ট মাসের বেতন দেয়নি। এর মধ্যে হাজারীবাগের সিটিএম, উত্তরার গ্রসি ও দক্ষিণখানের রিমি অ্যাপারেলস অন্যতম। আগস্ট মাসের বেতন দেয়নি এরকম কারখানা গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে আছে। ঈদের আগে বেতন-বোনাসের পাশাপাশি আগস্ট মাসের বেতন দেওয়ার দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।



মন্তব্য চালু নেই