বেপরোয়া হিজড়াদের থামাবে কে?

রাস্তাঘাটে প্রায়ই দলবেঁধে চলতে দেখা যায় হিজড়াদের। কখনও তারা হাত পাতে পথচারীর কাছে। কখনও বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা পথচারীর পথরোধ করে টাকা চেয়ে বসে। কেউ হয়তো তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে সাহায্যও করে থাকে।

সম্প্রতি হিজড়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পথচারীরা। চাঁদাবাজদের মতোই আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। কখনও আবারো বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা চেয়ে গৃহকর্তা বা কর্মীদের হেনস্থা করার ঘটনাও ঘটছে।

তবে বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হিজড়াদের দেখা গেছে একেবারে সন্ত্রাসী মূর্তিতে আবির্ভূত হতে। শ্রীমঙ্গলে তো এক রিকশাচালকে কয়েকজন হিজড়া মিলে কামড়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।

আর রাজশাহীতে তো চাঁদা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে পিটিয়ে আহত কয়েকজন চাঁদাবাজ হিজড়া। পরে হামলাকারী হিজড়াদের আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হিজড়ারা কেন এতো বেপরোয়া আচরণ করছে। কেনই বা মানবিক বোধ হারিয়ে সন্ত্রাসী আচরণ করছে? বেপড়োয়া এসব হিজড়াদের থামাবে কে?

মৌলভীবাজার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, দুপুর দুটার দিকে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের হবিগঞ্জ রোডের মানিকচাঁদ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সামনে এক রিকশাচালকের ওপর চড়াও হয় কয়েকজন হিজড়া। এক পর্যায়ে চালকের চোখের ওপর কামড় দিয়ে বসে তারা। এতে মারাত্মক আহত হয় শিপন মিয়া (৩৮) নামের ওই রিকশাচালক।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরতা দিয়ে সেলিম জানান, ঘটনার সময় হবিগঞ্জ রোড থেকে যাত্রী নিয়ে মানিকচাঁদ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে যান শিপন মিয়া। যাত্রী মিষ্টি কেনার জন্য দোকানের ভেতর গেলে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন শিপন। এ সময় কয়েকজন হিজড়া রিকশায় উঠে তাকে স্টেশনে যাওয়ার জন্য বলে। কিন্তু যাত্রী থাকায় তিনি যেতে পারবেন না বলে জানালে এক হিজড়া তার পকেট থেকে টাকা উঠিয়ে নেয়। বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে শিপন মিয়ার চোখের ওপর কামড় দিয়ে বসে এক হিজড়া। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে হিজড়ারা পালিয়ে যায়। অচেতন অবস্থায় শিপনকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার চোখের ওপর চারটি সেলাই দিতে হয়েছে।

রাজশাহী থেকে ইলিয়াস আরাফাত জানান, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামাল হোসেনকে পিটিয়েছে হিজড়ারা। আহত অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই তিন হিজড়াকে আটক করেছে মতিহার থানা পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অক্ট্রয় মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষকরা জানান, শিক্ষক কামাল হোসেনের দুই বছরের সন্তানকে দেখে তার অক্ট্রয় মোড়ের বাসায় যায় কয়েকজন হিজড়া। এ সময় তারা ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। তবে তিনি তাদের কিছু টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু হিজড়ারা পুরো ১০ হাজার টাকার দাবিতে অনড় থাকে। ওই শিক্ষক দাবিকরা টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে রাস্তার ওপর ফেলে কিল, ঘুষি মারে হিজড়ারা। এ সময় পিটিয়ে তার বাম হাত ভেঙে দেয় তারা। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।

কামাল হোসেনের স্ত্রী নীলা খাতুন বলেন, ‘টাকা চাইলে আমি একশ’ টাকা দিই। কিন্তু তারপরও তারা আমার বাচ্চাকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমার স্বামীকে তারা পিটিয়ে আহত করেছে।’

এ ব্যাপারে দিনের আলো হিজড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মোহনা জানান, সংস্থার কোনো সদস্য যদি ওই কাজে জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কথা হচ্ছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে সমাজে হিজড়ারা অনেকের সহানুভূতি পায়। বেসরকারি অনেক সংস্থা তাদের পাশে সহায়তার হাতও বাড়ায়। কিন্তু হিজড়ারা যখন সন্ত্রাসীদের মতো আচরণ করে তখন তাদের থামাবে কে?বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই