বেরোবিতে অজ্ঞাতনামা মামলার চূড়ান্ত রায় : পদোন্নতি ও বেতন গ্রহণে বাঁধা রইলো না

এইচ.এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে গত বছরের মার্চে ১৫০/২০০ নামে অজ্ঞাতনামা মামলার চূড়ান্ত রায় প্রদান করেছে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কোনো আসামী না পাওয়ায় আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: শফিউল আলম চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে গত ২৫ এপ্রিল মামলাটি( মামলা নং জি আর-১৬১/১৫) ডিসমিস(নিস্পত্তি) করেন।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলার অজুহাত দিয়ে যাদের পদোন্নতি আটকে রেখেছে তাদের আর পদোন্নতি ও দীর্ঘ প্রায় ৩ বছরের বেতন প্রদানে আর কোনো বাঁধা রইলো না।

আদালতকর্তৃক অনুলিপিকৃত পত্রে বলা হয়, ‘২৫/৪/১৬=অদ্য ধার্য্য তারিখ। সিডিসহ চূড়ান্ত রিপোর্ট শুনানীর দিন ধার্য্য আছে। দেখিলাম। সিডি দাখিলীয় চূড়ান্ত রিপোর্টসহ সমগ্র নথী পর্যালোচনা করিলাম। পর্যালোচনায় দাখিলীয় এফ আর টি যথাযথ বিবেচিত হওয়ায় গৃহীত ইইল। মামলাটি নথীজাত।’

মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলকারি একে এম খন্দকার মুহিবুল ইসলাম মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেন,‘এমতাবস্থায় মামলাটি অহেতুক মুলতবী রাখিলে কোন সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের নাম ঠিকানা না পাওয়ায় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০জন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানের মতো সাক্ষ্য প্রমান না থাকায় অত্র থানার চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য নং ১৪৬, তাং ২৯/১০/১৫ ইং সত্য ধারা ১৪৩/৩৪১/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৪২৭/৩৪ পিসি দাখিল করিলাম। মামলা তদন্তের ফলাফল বাদিকে জানানো হইলো।’

মামলা সূত্রে জানা যায়,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আন্দোলন চলাকালে গত ৩ মার্চ শিক্ষকদের উপর অজ্ঞাতদের হামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা মিছিল করলে সাধারণ জখম ও সরকারিকর্মচারিকে কর্তব্য কাজে বাঁধা প্রদান করার অভিযোগে পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলার উদ্দেশ্যে রংপুর কোতয়ালি থানায় একটি এজাহার দায়ের করে (ধারা-১৪৩/১৪১/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৪২৭/৩৪, জিডি নং-১৩৫)।

পরবর্তী সময় মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত করেন। মামলাটির তদন্ত করে আসামীদের নাম ঠিকানা না পাওয়ায় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের মতো সাক্ষ্য প্রমাণ না থাকায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রংপুর কোতয়ালি থানায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন (সত্য নং ১৪৬, সত্য ধারা ১৪৩/১৪১/১৮৬/৩৫৩/৩৩২/৪২৭/৩৪ পিসি) দাখিল করেন।

মামলার ২য় কর্মকর্তা মুহিবুল ইসলামও তার প্রদানকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কারো নাম পাওয়া যায়নি বলে জানান।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলার (এস আই শফিককর্তৃক এজাহারকৃত) অজুহাতে গত বছরের ১৭ এপ্রিল ৪৩ তম সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে মোট ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি ও গত বছরের ১৮সেপ্টেম্বর ৪৫ তম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২ জন শিক্ষকসহ আরো একজন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিতের অভিযোগ উঠে।

স্থগিতকৃত প্রভাষক দুইজন হলেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইদুর রহমান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান এবং ৪৪ তম সিন্ডিকেটে পদোন্নতি স্থগিত করা শিক্ষক হচ্ছেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাফিজুর রহমান সেলিম।
বেতন স্থগিত অন্যান্য কর্মকর্তা হলেন-মো: রফিকুল ইসলাম, মো: ওবায়দুর রহমান, কর্মচারিরা হলেন- মো: নাহিদ পারভেজ,আপেল মাহমুদ, সোহেল রানা, সুদেব চন্দ্র রায় ও দিলীপ কুমার।

অভিযোগের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বরে প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত ৪৫ তম সিন্ডিকেট সভার উপাচার্য স্বাক্ষরিত কার্য বিবরনীতে বলা হয়,‘তবে…. ক্রমিক নং ৫ এ উল্লিখিত জনাব তাবিউর রহমান প্রধান,প্রভাষক,গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,বেরোবি,রংপুর ও ক্রমিক নং ৯ এ উল্লিখিত জনাব মোঃ সাইদুর রহমান,প্রভাষক,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,বেরোবি, রংপুর-এর নামে কোতয়ালি থানার পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত মামলায় (সূত্রঃ রংপুর কোতয়ালি থানার মামলা নং ০৮, তারিখ: ০৩-০৩-২০১৫ ইং, ধারা-১৪৩ /৩৪১ /১৮৬ /৩৫৩ /৩৩২/৪২৭/৩৪ দ:বি:) অভিযুক্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে স্বাক্ষ্য প্রমান পাওয়ার বিষয়টি সিন্ডিকেট সভার সদস্যদের গোচরীভূত হলে সংশ্লিষ্ট মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে তাঁর পদোন্নতি স্থগিত রাখার জন্য সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত সকল সদস্য সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।” বিবরণীতে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘ফলে প্রভাষক হতে সহকারি অধ্যাপক পদে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত বাছাই বোর্ডের ১৪-০৮-২০১৫ ও ২১-০৮-২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত সভার সুপারিশ অনুযায়ী… ১৮ জন শিক্ষককে প্রভাষক থেকে আপগ্রেডেশনের মাধ্যমে সহকারি অধ্যাপক পদে উন্নীত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

উপাচার্য যে ‘প্রাথমিকভাবে স্বাক্ষ্য প্রমাণ’ পাওয়ার বিষয়টি সভার বিবরনীতে উল্লেখ করেছেন সেখানে তখন অভিযুক্ত কারো নাম পাওয়া যায়নি। মামলাটির প্রথম তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ ০৪-০৩-২০১৫ ইং তারিখে কোতয়ালি থানায় জমা দেওয়া ‘প্রাথমিক তথ্য (থানায় পেশকৃত ফৌজদারী বিধান কোষের ১৫৪ নং ধারায় ধর্তব্য অপরাধ সংক্রান্ত) বিবরনী’তে আসামির নাম ও বাসস্থান/ঠিকানা উল্লেখ করতে গিয়ে “অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জন” বাক্যাংশ ব্যবহার করেছেন। সেখানে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি।
একইভাবে ৪৩তম সিন্ডিকেটে মোট ৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন এবং শামসুজ্জামান নামের এক কর্মকর্তার ‘কেন্দ্রীয় ভান্ডার’ পদ থেকে ‘সহকারি রেজিস্ট্রার’এ পদোন্নতি আটকে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মামলার চূড়ান্ত রায় অনুযায়ী এদের কারোই বেতনগ্রহনে বাধা রইলো না।



মন্তব্য চালু নেই