বেরোবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ

চাঁদা দাবি করে না পাওয়ায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান হামলা চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে বেরোবি ছাত্রলীগ। এঘটনার জের ধরে ছাত্রলীগ, স্থানীয় এলাকাবাসি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দু’দফার সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।

শনিবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০জন। এর প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এদিকে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ বেরোবি ছাত্রলীগ কমিটিকে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার (৪ মার্চ) সকালে। বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একাংশ এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে পার্কের মোড় এলাকার লিফা ফাস্টফুড অ্যান্ড কনফেকশনারিতে অবস্থান নেয়। এতে আস্বীকৃতি জানান দোকনটি মালিক মাজেদুল ইসলাম লাভলু। এসময় উভয়পক্ষের বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে ছাত্রলীগ। তারা তাণ্ডব চালায় দোকানটিতে।

এর প্রতিবাদে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দুপুরে রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই সন্ধ্যায় আবারো মহড়া দিতে যায় শিশির অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা। এসময় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ ব্যবসায়ীরা তাদের ধাওয়া করেন। এতেই আবারো শুরু উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় উত্তপ্ত সংঘর্ষ। যা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি দোকানে অগ্নিসংযোগসহ হামলা ও লুটপাট চালায়। এর প্রতিবাদে ফের সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এতে রংপুর-লালমনিরহাট সড়কসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশির সকালে ওই দোকানের মালিক এবং পার্কের মোড় দোকান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মাজেদুল ইসলাম লাভলুর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এতে দোকান মালিক রাজি না হওয়ায় শিশির ক্ষিপ্ত হয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে শনিবার সকাল ১০টার দিকে দোকানে গিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে দোকানে রাখা চারটি ফ্রিজসহ বিভিন্ন মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পার্কের মোড়ের দোকানদাররা একজোট হয়ে রংপুর-কুড়িগ্রম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধ দোকান মালিকরা।

কিন্তু সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারো ওই এলাকায় মহড়া দিতে গেলে ব্যবসায়ীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে ব্যবাসায়ীদের পাল্টা ধাওয়া করে ছাত্রলীগ। এতে করে এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাঁচটি দোকানে অগ্নিসংযোগসহ ভাঙচুর ও হামলা চালায়। পরে তারা পার্কের মোড় এলাকার মসজিদেও অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শিশিরের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন মাজেদুল ইসলাম লাবলু।

বিষয়টি অস্বীকার করে বেরোবি ছাত্রলীগের সভাপতি শিশির বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হচ্ছে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম। উক্ত ব্যবসায়ীর সঙ্গে একজন সাধারণ ছাত্রের কথা কাটাকাটি হয়েছে। এর জের ধরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ছাত্রলীগের কোনো প্রকার সম্পৃক্ততা নেই।

কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম দোকান ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই