ব্যাংক ডাকাতির লক্ষ্য ছিল জঙ্গিদের

সম্প্রতি রাজধানীর বনানী ও সূত্রাপুর এলাকা থেকে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি) ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃত এসব জঙ্গি ডাকাতির জন্য একটি ব্যাংককে টার্গেট করেছিল। হুজির সদস্যদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানতে পেরেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, জঙ্গিরা একটি ব্যাংকে ডাকাতির টার্গেট করেছিল। সেটির ছবি তুলেছে, কোন দিক দিয়ে অ্যাটাক করবে, কীভাবে টাকা লুট করবে, টাকা নিয়ে কোন দিক দিয়ে যাবে, কোথায় যাবে, যাওয়ার পর কী করবে; সব পরিকল্পনা করেছিল তারা। নিরাপত্তার স্বার্থে সেই ব্যাংকের নাম প্রকাশ করছে না গোয়েন্দা পুলিশ। যে ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেটি দিনাজপুরে।ঢাকার ভেতরে কোনো ব্যাংকে ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল কিনা তার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এসব জঙ্গি সংগঠনের সদস্য সংখ্যা বেশি নয়। ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান ও অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার দায় স্বীকার করে আলোচনায় আসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সন্ত্রাস দমন আইনের (সংশোধন) ২০১৩/ ১৮ (২) ধারা অনুযায়ী সরকারবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এর আগে ২০০৫ সালে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবি, হুজিসহ চারটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০৯ সালে নিষিদ্ধ হয় হিজবুত তাহরীর। যে ছয়টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ হয়েছে, তাদের নিয়ে কাজ করা কঠিন।

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন আরো বলেন, ‘নিষিদ্ধ হওয়া এই ছয়টি জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যবহার করলে হয়তো তারা ঝামেলায় পড়তে পারে। তাই তারা এখন আর পুরাতন সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কাজ করতে চায় না। আরেকটি বিষয় হলো- পুরাতন সংগঠনগুলো যেহেতু সবসময় একটি হট কেক, সেজন্য নতুন করে কেউ আর ওই সংগঠনের লেবাস নিজের গায়ে চড়াতে চায় না। সবাই চায় সেফ থাকতে।তাই ওইগুলোর মেম্বার কেউ হতে চায় না। এই দুই কারণে ওই সংগঠনের লোকজনই ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে সদস্য সংগ্রহ করছে এবং তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সদস্যদের অনেক সময় ওই নতুন নামও বলে না। এই নয়জনের মধ্যে দুজন ছাড়া অন্য কেউ ওই সংগঠনের নাম জানত না। যারা সংগঠনের নাম জিজ্ঞাসা করেছে, তাদের বলা হয়েছে সংগঠনের নাম তোমাদের জানার দরকার নেই। নাম বললে বাকি সদস্যদের সমস্যা হয়।’

নতুন সংগঠনের সদস্য সংখ্যার ব্যাপারে মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই সংগঠনের সদস্য কতো তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এদের সেন্ট্রালি এক-দুইজন বস থাকে। যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। একেকটা নিউক্লিয়াসে একজন করে বস আছে।’

এর আগে গত রোববার বিকেল ৩টায় রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনের (হুজি) তিন সদস্যকে আটক করা হয়। এরপর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সুত্রাপুর থানাধীন লালমোহন দাস এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো তিন জনকে আটক করা হয়। এরা হলেন- কাজী ইফতেখার খালেদ, ফাহাদ বিন নুরুল্লাহ কাশেমী, রাহাত, দ্বীন ইসলাম, আরিফুল ইসলাম আদনান, নুরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, ইয়াসিন আরাফাত ও মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী।’

নুরুল ইসলাম আর দ্বীন ইসলাম দুজনের বাড়ি শরিয়তপুর জাজিরায়। তারা কয়েক মাস আগে জাজিরায় পরীক্ষামুলক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে। তবে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। আগে যেমন এহসার সদস্য, গায়েরে এহসার সদস্যদের একজন আরেকজনকে চিনত। একজনকে ধরলে সে বাকি সদস্যদের নাম বলত। এখন আর বলতে পারছে না। এখন এরা যে পর্যন্ত বলতে পারছে আমরা তথ্য নিয়ে সে পর্যন্ত কাজ করছি। এ ছাড়া জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’



মন্তব্য চালু নেই