ব্রিটিশরা যেভাবে কোহিনূর চুরি করেছিল

ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে চুরি হওয়া বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোহিনূর হীরা এখন ব্রিটিশ রাজপরিবারের অলঙ্কার ভাণ্ডারের অংশ। এই কোহিনূরের দাম প্রায় ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,২০০ কোটি টাকা। ব্রিটিশদের চুরি করে নিয়ে যাওয়া সেই কোহিনূর ভারতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, কোহিনূর শোভিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ‘হীরার মুকুট’ ফিরিয়ে আনতে ‘মাউন্টেন অব লাইট’ নামক একটি দল ইতিমধ্যেই লন্ডন হাইকোর্টে মামলা দায়েরের জন্য আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। মাউন্টেন অব লাইট-এর পক্ষের আইনজীবী দলটির দাবি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ১০৫ ক্যারেট হীরার ওই কোহিনূরটি চুরি করে নিয়ে যায় ব্রিটিশ শাসকরা। এ কারণে তারা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে ওই কোহিনূরটি ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পর্যন্ত সব রানিই এই কোহিনূর তাদের রাজমুকুটে ব্যবহার করেছেন। ফলে এখন তা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সম্পদে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই কোহিনূরের মালিক ভারতীয়রা। ইতিহাস বলছে, কোহিনূর সম্রাট শাহজাহানের মুকুট-মণি ছিল। ৩৭.৫০ তোলা ওজনের এই হীরা ১৭৩৯ সালে পারস্য-রাজ নাদির শাহের হস্তগত হয়। ১৭৪৬ সালে তিনি মারা গেলে সেনাপতি আহমদ শাহ্ দুররানী ওই কোহিনূর লাভ করেন। ১৭৭৩ সালে আহমদ শাহ্ মারা গেলে পুত্র তৈমুর শাহ্ এবং ১৭৯৩ সালে তৈমুরের মৃত্যুর পর ভাই জামান শাহ্ কোহিনূর প্রাপ্ত হন। এরপর বহু বিবাদ ও রক্তপাতের পর ছোট ভাই শাহ্ সুজা রাজ্য এবং কোহিনূর অধিকার করেন। কিন্তু ১৮২৬ সালে মন্ত্রীপুত্র ও বন্ধু মুহম্মদ খাঁ ষড়যন্ত্র করে শাহ্ সুজাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করেন। শাহ্ সুজা তখন পালিয়ে পাঞ্জাবে এসে আশ্রয় নেন।

পাঞ্জাবের শিখ রাজা রনজিৎ সিংহ শাহ্ সুজার কাছ থেকে জোড়পূর্বক কোহিনূর ছিনিয়ে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন।

দ্বিতীয় শিখযুদ্ধের পর লর্ড ডালহৌসি পাঞ্জাব অধিকার করলে লাহোর রাজকোষ থেকে কোহিনূর উদ্ধার করে তিনি বিশেষ সতর্কতায় রানি ভিক্টোরিয়ার নিকট পাঠিয়ে দেন। রানি কোহিনূরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আমস্টারডামে হীরা কাটার কারখানায় প্রেরণ করেন। কিন্তু ১২ হাজার অশ্বশক্তির মেশিন দ্বারা কাটার সময় কোহিনূরের কিছু অংশ ভেঙে যায়। বর্তমানে ওই ভাঙা কোহিনূরই রানির মুকুটে শোভাবর্ধন করছে।

কোহিনূরের আবিষ্কার প্রসঙ্গে বিভিন্ন তথ্য জানা যায়। একদল গবেষকের দাবি, পনেরশ শতকে অন্ধ্রপ্রদেশের গোলাকুণ্ডা কয়লা খনির কল্লুর এলাকা থেকে এই হীরাটি আবিষ্কৃত হয়। খনিশ্রমিকদের বিরল এই আবিষ্কারের পর অন্ধ্রপ্রদেশেরই একটি মন্দিরের দেবির গলায় ছিল এই এটি। তারপর এটি বিভিন্ন হাত ঘুরে সম্রাট শাহজাহানের হস্তগত হয়। ভারতে ইংরেজ শাসন শুরু হওয়ার পর কোহিনূর এক পর্যায়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয়। তারাই ১৮৫১ সালে ভারত থেকে এটি চুরি করে নিয়ে যায় এবং মহারানি ভিক্টোরিয়াকে উপহার দেয়।



মন্তব্য চালু নেই