ব্রেকআপের কষ্ট ভুলতে পারছেন না? এই পোস্টটি তাহলে আপনারই জন্য

প্রেমে ব্যর্থ মানুষমাত্রই জানেন হৃদয়ভঙ্গের কষ্টটি কেমন। এতে অনেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়, কেউ হয়ে যান পাগলপ্রায়, কেউ সংসার-ধর্ম ছেড়ে হয়ে যান বিবাগী। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর মানুষ কেন এতো ভেঙ্গে পড়েন? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি কি?

সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবার পর জীবনে বড় ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বেশিরভাগ মানুষ। চাকরি বা পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া এগুলো খুবই সাধারণ কিছু উদাহরণ। এতে আসলে তাদের কোনো দোষ নেই। বিজ্ঞান বলে, ব্রেকআপ হয়ে যাবার পরের সময়টিতে মানুষ খুবই আবেগি হয়ে থাকে এবং এ সময়ে শরীরে প্রভাব ফেলে কিছু হরমোন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ঠিক এই একই হরমোনগুলো আমাদের প্রেমে পড়ার জন্য, প্রেমে আপ্লুত হবার জন্য দায়ী।

ভালোবাসার মানুষটিকে হারানোর পর আমাদের মস্তিষ্কের রাসায়নিক অবস্থায় আসে পরিবর্তন। আপনি কি জানেন, ব্রেকআপ হবার কষ্টটি আসলে শুধুমাত্র মানসিক কষ্ট নয়, বরং শারীরিক কষ্টও বটে। মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ শারীরিক ব্যাথা পাওয়ার সময় উদ্দীপিত হয়। fMRI স্ক্যান করে দেখা যায়, সম্প্রতি ব্রেকআপ হওয়া মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশটিতে রয়েছে সাধারণের চাইতে বেশি সক্রিয়তা। ফলে কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মতো কিছু হরমোনের নিঃসরণ ঘটে। এসব হরমোন হলো স্ট্রেস হরমোন। এরা আমাদের শরীরে বমি বমি ভাব, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট এসব লক্ষণের জন্ম দেয়। শুধু তাই নয়, এ কারণে হৃৎপিণ্ডের পেশিগুলোতে এক ধরণের দুর্বলতা দেখা যায় যার পোশাকি নাম হলো Takotsubo cardiomyopathy। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হতে পারে জীবনঘাতী।

ফিরে যাওয়া যাক মস্তিষ্কের ওপর হৃদয়ভঙ্গের প্রভাবের ব্যাপারে। স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ ছাড়াও আরো কিছু ঘটনা ঘটে এ সময়ে। একটি গবেষণার উদাহরণ দেওয়া যাক। নিউ ইয়র্কের রাটগারস উনিভেরসিটির গবেষকেরা ১০ জন নারী ও ৫ জন পুরুষকে বেছে নেন যাদের সম্প্রতি ব্রেকআপ হয়েছে অথচ প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি এখনো ভালোবাসা রয়েছে তাদের। নিজের প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার ছবির দিয়ে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় তাদের মস্তিষ্কের MRI করা হয়। এ থেকে বের হয়ে আসে চমকপ্রদ কিছু তথ্য।

একজন কোকেইন আসক্ত মানুষের মস্তিষ্কে যেমন সক্রিয়তা দেখা যায়, এসব মানুষের মস্তিষ্কের অবস্থাও ছিলো অনেকটা তেমন! এর ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় বিজ্ঞান থেকে। আপনি যখন কারো প্রেমে পড়ছেন, তখন কোকেইনের মতো ড্রাগ নেবার ফলাফলস্বরূপ নিঃসৃত হওয়া হরমোন ডোপামিনের আধিক্য দেখা যায় শরীরে। ফলে আমরা সুখের একটা অনুভূতিতে ভাসতে থাকি। আর এই প্রেমের যখন সমাপ্তি ঘটে তখন আপনার সেই মাদকতাময় অনুভূতিরও ঘটে সমাপ্তি। ফলে আমরা ড্রাগ উইথড্রয়ালের মতো কষ্টকর একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাই।

কিন্তু ডোপামিনের একটা বৈশিষ্ট্য কি জানেন? তা সবসময় আরো বেশি চায়। ফলে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আমরা সবসময় প্রেমিক বা প্রেমিকার পাশাপাশি থাকতে চাই। আবার ব্রেকআপ হয়ে যাবার পর খুব তাড়াতাড়িই আমরা আরেকজন প্রেমিক অথবা প্রেমিকার প্রয়োজন অনুভব করি। এই অভাব পূরণ করতে গিয়ে আমাদের বুদ্ধি-বিবেচনা কিছুটা ভোঁতা হয়ে যায়। উল্টোপাল্টা কাজ করতে থাকি আমরা। কেউ কান্নাকাটি করি, কেউ বা অতিরিক্ত খাওয়া শুরু করি। কিন্তু একটা না একটা সময় আমাদের মস্তিষ্ক আবার তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়। আর এ বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, পুরনো প্রেম ভুলতে গড়ে তিন মাস সময় লাগে মানুষের।

একটা ভালো খবর হলো, পুরনো প্রেমের কষ্টটা চিরস্থায়ী নয়। এই বিষাদের মুহূর্ত কেটে গিয়ে একটা না একটা সময় আমাদের জীবনযাত্রা স্থিতিশীল হয়ে পড়ে। আর যদি এই কষ্টটি অসহনীয় মনে হয়, জেনে রাখুন, হৃদয় মুচড়ে আসা কষ্টটি কমাতে কাজে আসতে পারে সাধারণ প্যারাসিটামল। হাস্যকর মনে হলেও সত্যি। এর পাশাপাশি কাছের মানুষদের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলা, হালকা গল্পগুজব করাটাও অনেক শান্তি দিতে পারে আপনাকে। এ কারণে ব্রেকআপের পর নিজেকে মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত মনে হলে নিজের ওপর রাগ হবেন না। এটা প্রকৃতিরই নিয়ম।

মূল: Fiona Macdonald, sciencealert.com



মন্তব্য চালু নেই