ব্র্যাক ব্যাংকের “নিলাম নাটক”

‘নিলামের নাটক’ সাজিয়ে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় খেলাপি ঋণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। আর এ ‘নাটকের ফাঁদ’ বুঝতে না পেরে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে নিলাম জেতার পরও ওই সম্পত্তির বিপরীতে সমুদয় টাকা পরিশোধ করে এখন বেকায়দায় পড়েছেন এক চাকরিজীবী।

সাদা মনে টাকা পরিশোধ করার পর সম্পত্তি ফিরে পাওয়ার জন্য বার বার ধর্ণা দিয়ে ব্যর্থ হন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, নিলাম বাতিল করে ব্র্যাক ব্যাংক সেই সম্পত্তি বন্ধককারীকেই ফেরত দিয়েছে। প্রতারিত বোধ হওয়ায় শেষ পর্যন্ত নিলামে কেনা সম্পত্তি বুঝে পেতে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছেন এই ভুক্তভোগী। একই সাথে হয়রানির অভিযোগে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে তাকে।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ ব্যাপারে ৪০৬, ১০৯ ও ৫০৬ ধারায় অভিযোগ এনে ৮ নং সিএমএম আদালত এবং সম্পত্তি বুঝে পেতে ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি।

ওই ভুক্তভোগী জানান, বনশ্রীতে সম্পত্তি বন্ধকের বিপরীতে প্রদত্ত ঋণ খেলাপি হওয়ায় তা বিক্রিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিলাম ডাকে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় ৬০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে সম্পত্তি বুঝে নিতে তাকে আহ্বান জানায় ব্র্যাক ব্যাংক। সে অনুয়ায়ী তিনি সম্পত্তি নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু করতে ব্যাংকের কাছে মিউটেশনসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরবরাহের আবেদন জানান। তবে নির্ধারিত ঐ ৬০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই সম্পত্তি বন্ধককারী উচ্চ আদালতে পিটিশন দাখিল করেন এবং আদালত নিলাম হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত করে। পিটিশনের রায়ে আদালত ৯০ দিনের মধ্যে খেলাপি হওয়া পুরো ঋণ পরিশোধের শর্তে নিলাম স্থগিত করে উল্লেখিত সম্পত্তি ঋণ গ্রহীতাকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ গ্রহীতা টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিলামে ক্রয়কারী ঐ সম্পত্তি বুঝে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরুতে ব্যাংকের নিকট আবেদন জানান।

তিনি জানান, এ আবেদনের পরেও ব্যাংকের কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে মিউটেশনসহ দাবিকৃত কাগজপত্র সরবরাহ করেনি, কালক্ষেপণ করে। এই সময় সম্পত্তি হস্তান্তরে ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিউটেশনের কাগজ ছাড়াই প্রক্রিয়া শুরু করতে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে নিলামের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা দেন এবং সম্পত্তি বুঝে পেতে আবেদন জানান। পরবর্তীতে গত জুনে ঋণ গ্রহীতা ২য় বার উচ্চ আদালতে একই বিষয়ে রিট আবেদন করলে আদালত আবার নিলাম স্থগিত করে পিটিশনকারীকে কেন সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়া হবে না সে ব্যাপারে কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। একই সাথে নিলাম সংক্রান্ত কার্যক্রম ছয় মাস স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। অথচ স্থগিতাদেশের সময় অতিক্রম করার আগেই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিলাম বাতিল নোটিশ প্রেরণ করে।

পরে তিনি জানতে পারেন ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে বন্ধক প্রদানকারীকে দলিল ফেরত দিয়ে তা অন্য আরেকজন ব্যাংক কর্মকর্তার নিকট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দায়ের করেও কোন সুরাহা হয়নি। তাই প্রতারিত এবং হয়রানি বোধ করে তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ওই চাকরিজীবীর অভিযোগ, নিলামে ক্রয়কৃত সম্পত্তির প্রয়োজনীয় কাগজ বুঝিয়ে দিতে ব্র্যাক ব্যাংক শুরু থেকেই নানা টালবাহানা করে। সম্পত্তি হস্তান্তরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে তথ্য উদ্দেশ্য প্রণেদিতভাবে ব্যাংক যথাসময়ে তাকে জানায়নি। সর্বশেষ নিলাম কার্যক্রম স্থগিতে উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অযৌক্তিক অভিযোগে তা বাতিল করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রধান নির্বাহীর অনুপস্থিতিতে ব্র্যাক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড সার্ভিস কোয়ালিটি জারা জাবীন মাহাবুব ঢাকাটাইমসকে জানান, মামলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

তিনি দাবি করেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই ওই সম্পত্তি বন্ধকদাতাকে ফেরত দেয়া হয়েছে।

তবে এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনশ্রীর সম্পত্তি নিলাম প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ব্র্যাক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নিলাম সম্পত্তি ক্রয়কারী যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ও সময়মত সম্পত্তি বুঝে পেতে আবেদন জানিয়েছিলেন। সে অনুয়ায়ী এ সম্পত্তি তাকে হস্তান্তর করা উচিত ছিল। কিন্তু নিলামে ক্রয়কারী যে টাকায় সম্পত্তিটি ক্রয় করেন তাতে ব্যাংকের পুরো টাকা আদায় হচ্ছিল না। সম্পত্তিটি যদি নিলামে ক্রয়কারীকে হস্তান্তর করা হতো তাহলে এই খাতে ব্যাংকের আরও ২৫ লাখ টাকা বকেয়া থেকে যেতে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ব্যাংক পরবর্তীতে বন্ধককারী খেলাপির পুরো টাকা জমা দেয়ায় লাভের কথা চিন্তা করে ব্যাংক তা নিলামের ক্রেতাকে হস্তান্তর না করে বন্ধককারীকে ফেরত দিয়েছে।

জারা জাবিন জানান, বন্ধককারীর নিকট সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার পর ব্যাংক নিলামে ক্রয়কারীকে তার প্রদেয় জামানতের টাকা সুদসহ ফেরত দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে ক্রেতা তাতে কোন আগ্রহ দেখাননি।

এ ব্যাপারে ওই ভুক্তভোগী জানান, ব্যাংক তাকে কোন প্রকার লিখিত প্রস্তাব দেয়নি, উল্টো মৌখিক আশ্বাস দিয়ে হয়রানি করেছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চাইতে গেলে ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা তাকে জানান, নিলাম সম্পত্তি ক্রয় করতে ইচ্ছুক নন বলে লিখিত দিয়ে টাকা উত্তোলনের আবেদন জানালে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে অভিযোগ তুলে নিলে টাকা ফেরত বা নিলামে আরেকটি সম্পত্তি ক্রয়ে সহায়তা করা হবে।

কিন্তু এক নিলামে হয়রানি শিকার হয়ে দ্বিতীয়বার তাতে রাজি হওয়ার প্রশ্ন অবান্তর বলে জানান তিনি।

সামগ্রিকভাবে তিনি মনে করনে, ব্যাংক ‘নিলামের নাটক’ সাজিয়ে বন্ধককারীর কাছ থেকে খেলাপির টাকা আদায় করেছে। এই ফাঁদে পড়ে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই