ভবিষ্যত সুপারম্যানে কোনো কালো ত্বকের অভিনেতা আসতে পারেন!

সুপারম্যানের কালো হওয়া উচিত। কালো পোশাকের কথা বলা হচ্ছে না, কালো ত্বকের কথাই বলছেন অনেকে। আসলে সুপারম্যানের ত্বকের রং আফ্রিকান বা আমেরিকান বা অন্য কারো মতো হওয়া উচিত নয়। কারণ, তিনি এসেছেন ক্রিপটোন গ্রহ থেকে। তিনি পৃথিবীর কেউ নন। তাই অনেকেই মনে করছেন, ভবিষ্যত সুপারম্যানে কোনো কালো ত্বকের অভিনেতা আসতে পারেন। চলচ্চিত্র সমালোচক ও বিশেষজ্ঞ জেভি চামারি এর পেছনে বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি তুলে ধরেছেন। মানুষ সাধারণত ত্বকের রংকে জাতিগত সত্ত্বার বৈশিষ্ট্য হিসাবে মনে করেন। কিন্তু জীববিজ্ঞানে জাতি-গোত্রের তেমন অর্থ নেই। এটা আসলে সামাজিক চিন্তা। তাই সুপারহিরোদের ক্ষেত্রে জাতি বা গোত্র অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই কমিক বইয়ের প্রকাশক এবং সিনামে নির্মাতারা সুপারহিরোদের মাঝে জাতিগত বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। মূলত জাতিগত বৈচিত্র্যতা তুলে ধরার খাতিরে সুপারহিরোহের উপস্থাপন করা উচিত নয়। এদের মধ্যে পরিবর্তন আনা দরকার। এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানানো উচিত যা স্থায়ীত্ব লাভ করবে। বেশিরভাগ সুপাহিরোরাই পদার্থবিদ্যার নিয়মগুলো ভেঙে ফেলেন। তারা এক অস্বাভাবিক ও অসম্ভব শক্তি ধারণ করেন। তাদের এই শক্তি কিভাবে আসতে পারে তা নিয়ে ন্যূনতম সম্ভবনার পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। সৌর শক্তির কোষ : ‘ম্যান অব স্টিল’ সিনেমায় সুপারম্যানত তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন, মানুষ থেকে তার পার্থক্য কোথায়? উত্তরে বাবা বলেন, পৃথিবীর সূর্য ক্রিপটোনের চেয়ে অনেক কম বয়সী এবং এর উজ্জ্বলতাও বেশি। তোমার কোষগুলো তার তার রেডিয়েশন শুষে নিয়েছে। এতে তোমার পেশি, ত্বক এবং অনুভূতি আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে। সূর্যের আলোতে যে সুপারম্যান শক্তি অর্জন করে তা ‘ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস’ মুভিতেও দেখানো হয়েছে। আসলে পৃথিবীর সব প্রাণই সূর্যের আলোতে বেঁচে থাকে। উদ্ভিদ ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়ায় কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানির ব্যবহারে খাবার তৈরি করে। এদের ফটোসিনথেটিক কোষ অক্সিজেন নিঃসৃত করে। এটি শক্তিপূর্ণ কার্বোহাইড্রেট পোড়ায়। সুপারম্যানের কোষ অনেকটা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়াতেই কাজ করে। তবে কার্বোহাইড্রেট তৈরির পরিবর্তে সম্ভবত তার সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া মলিকিউল বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক শক্তি সংরক্ষণ করে। আলোতে থাকে ফোটোন এবং সাবঅ্যাটোমিক কণা যা তরঙ্গ এবং খাঁটি শক্তি উভয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। তরঙ্গে দৈর্ঘ্য ফোটোনের শক্তির মাত্রা নির্ধারণ করে। ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্য, যেমন গামা রে বা এক্স-রে এবং ইউভি লাইট এ তালিকায় রয়েছে। আবার লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্য ইনফ্রারেড। ইউভি-এর মতো উচ্চশক্তির রেডিয়েশন টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জেনেটিক মিউটেশন ঘটায় যার কারণে ক্যান্সার হতে পারে। সুপারম্যান এই দৃশ্যমান বর্ণচ্ছটা থেকেই শক্তি সঞ্চয় করেন। রঙিন রঞ্জক : সুপারম্যানের গ্রহ ক্রিপটোনে সূর্যরশ্মি শোষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর রঞ্জকটি হলো কালো। আলো গ্রহণকারী রঘঞ্জকগুলো অ্যান্টিনার মতো কাজ করে। একেক রঞ্জক বিশেষ ফোটন শোষণ করে শক্তি সংগ্রহ করে থাকে। আসলে তারা কোন ফোটন গ্রহণ করে তার ওপর রং নির্ভর করে আমরা চোখে রং দেখি। যেমন- নীল ফোটোনে লাল ফোটোনের চেয়ে শক্তি বেশি থাকে। বাতাস এবং পানি বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ফিল্টা করে। পৃথিবীতে উদ্ভিদ লাল রঞ্জক ব্যবহার করে, যা সবুজ দেখায়। তবে সব ফটোসিনথেটিক অঙ্গ সবুজ নয়। যেমন- অনেক উদ্ভিদের লাল পাতাও আছে। সুপারম্যান ভক্তরা সবাই জানেন, ক্রিপটোন একটি লাল নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে এবং সুপারম্যান হলুদ সূর্যের আলো থেকে শক্তি সঞ্চয় করে। ম্যান অব স্টিলে জর-এল তার ছেলেকে এমন এক গ্রহে পাঠান যা একটি হলুদ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। ক্রিপটোনের সূর্য : বিজ্ঞানীরা নক্ষকে তাদের তাপমাত্রা ও ঔজ্জ্বল্যের ভিত্তিতে ৬ ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো, ও, বি, এ, এফ, জি, কে এবং এম। ও টাইপের বিরল কিছু নক্ষত্র উত্তপ্ত, উজ্জ্বল ও নীল রংয়ের হতে পারে। রেড ডওয়ার্ফ এবং রেড জায়ান্টস-এর মতো নক্ষত্রগুলো এম টাইপ। এটা নিবু নিবু এবং ঠাণ্ডা। আমাদের সূর্য এদের মাঝামাঝিতে রয়েছে। উত্তপ্ত এবং হলুদ বর্ণের যাকে জি টাইপ নক্ষত্র বলা হয়। ক্রিপটোনের সূর্যও এম টাইপ। পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীতে যে সূর্যের আলো পৌঁছে তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য মোটামুটি ৬৮৫ ন্যানোমিটার। ক্রিপটোনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য ১০৪৫ ন্যানোমিটারের মতো। সুপারম্যানের মতো ফটোসিনথেটিক প্রাণীকে পৃথিবীতে থেকে তার সূর্যের আলো শোষণ করতে হলে গাঢ় রঞ্জক ব্যবহা করতে হবে। বিশেষজ্ঞ ড. ন্যান্সি কিয়াং তার বিজ্ঞানভিত্তিক আমেরিকান নিবন্ধে বলেছিলেন, এম টাইপ নক্ষত্রের কোনো গ্রহের প্রাণীকে পৃথিবীর পানি অপেক্ষা অর্ধেক শক্তি গ্রহণ করতে হবে সূর্য থেকে। ফটোসিনথেটিক রঞ্জকের ওপর ভিত্তি করেও আমাদের চোখে কোনো বস্তু গাঢ় বা পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হতে পারে। আলোর একটি বেশি বিচ্ছুরণে গাছও আমাদের চোখে কালো দেখাতে পারে। কালো ত্বক : সুপারম্যানের কালো ত্বক সূর্য থেকে আলোকরশ্মি সংগ্রহ করলে ত্বকের মেলানিনের কার্যক্রম কিছুটা ভিন্ন হবে। মানুষের বাদামী ত্বক ইউভি রশ্মি প্রতিরোধে কাজ করে। ২ লাখ বছর আগে আফ্রিকা থেকে মানুষ ছড়িয়ে যাওয়ার পর তাদের বিবর্তন ঘটেছে। এতে ক্রমেই তাদের ইউভি প্রতিরোধী রঞ্জক দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারণ ধীরে ধীরে তাদের ত্বক সাদা হয়ে গেছে। ক্রিপটোনিয়ান হিসাবে সুপারম্যানের সূর্যের আলো প্রয়োজন বেঁচে থাকতে। তিনি শক্তিশালী এবং ক্ষমতাশালী। কাজেই তার ত্বকে সূর্যের আলো শোষণকারী রঞ্জক থাকাটা জরুরি। প্রকৃতি প্রাণীকে তার মাঝে বেঁচে থাকার মতো করেই সৃষ্টি করে। কাজেই ক্রিপটোনিয়ান হিসাবে সুপারম্যানের কালো রঞ্জক থাকাটাই স্বাভাবিক। তাহলে সুপারম্যান কিভাবে পৃথিবীতে এলেন বা এখানে টিকে গেলেন? হয়তো ক্রিপটোন গ্রহে সুপারম্যানের পূর্বপুরুষরা শক্তি হারিয়েছেন তাদের রক্ষত্র লাল হয়ে যাওয়ার কারণে। তাদের মহা শক্তি ও ইন্দ্রিয়ে ক্ষমতা কমে যায়। পৃথিবীর হলুদ সূর্যের আলো তাদের শক্তি জোগায়। ডিসি কমিক প্রতিনিয়ত সুপারম্যানকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনায় সুপারম্যানকে কালো বানানো কোনো ইচ্ছা সম্ভবত নেই। কারণ, সুপারম্যানের পুরনো ইতিহাস রয়েছে। তা ছাড়া একজন হিরোর জাতিগত সত্ত্বা বিশাল এক শ্রেণির মানুষের পরিচয় ফুটিয়ে তোলে। মানুষ হিরোকে নিজেদের বলে মনে করে।কাজেই আশা করা যায়, ম্যান অব স্টিলকে আরো বাস্তবসম্মত করতে এবং গ্রহণযোগ্য করতে পরবর্তিতে পর্দায় কালো সুপারম্যানকে দেখতে পাবো আমরা।



মন্তব্য চালু নেই