ভর্তি পরীক্ষায় হল বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি, ক্ষোভ প্রকাশ

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ও অনিয়ম ঠেকাতে এবছরেও হলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।ফলে হল শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটসহ চরম ভোগান্তিতে পড়বে পরীক্ষা দিতে আসা হাজার হাজার ভতিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দু’টি এবং মেয়েদের একটি আবাসিক হলের এক হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীর নিজেদেরই থাকার জায়গা হচ্ছে না, সেক্ষেত্রে ভর্তিচ্ছুদের অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে হল বন্ধের বিকল্প পন্থা অবলম্বন করার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে (ফেসবুকে) বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, পরীক্ষায় হল বন্ধ রাখাই সুষ্ঠ নিরাপত্তাসহ মনোরম পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবার প্রধান সহায়ক।

আবাসিক শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, আসন্ন ১৩ থেকে ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী ১২ থেকে ১৭ নভেম্বর আবাসিক তিনটি হল বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা আবাসন সংকট, লেখাপড়ার সুষ্ঠ পরিবেশে ব্যাঘাত, হল বন্ধের কারণে বিভিন্ন দিক থেকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনসহ নানা ভোগান্তিতে পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের হলে অবস্থানরত আবাসিক শিক্ষার্থীদের অনেকেরই ফাইনাল পরীক্ষা চলমান এবং আসন্ন, এমনকি বিভিন্ন ধরণের চাকরিরও পড়াশুনা করছেন শিক্ষার্র্থীরা। হল বন্ধের সিদ্ধান্তে তারা আবাসন সংকটে তো পড়ছেই উল্টো পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বড় ধরণের ব্যাঘাত হানছে। এমনকি দূরবর্তী জেলার শিক্ষার্থীদেরকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে এবছরেও গ্রামের বাড়ির পথে পাড়ি জমাতে হবে। এদিকে, হল বন্ধের সিদ্ধান্তে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা ভর্তিচ্ছুরাও আবাসন সংকট সহ নানা ভোগান্তির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ মুখতার ইলাহী হল এবং ছাত্রীদের একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে অবস্থানরত এক হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী নিজেই আবাসন সংকটে সেখানে তাদের মাধ্যমে আসা ভর্তিচ্ছুরা কোথায় ঠাই পাবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সে হিসেবে ভর্তিচ্ছুদের শেষ আশ্রয়স্থল হবে শহরের আবাসিক হোটেলসহ ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মেসগুলো। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রংপুর শহরে আবাসিক হোটেলের সংখ্যা অতি নগন্য। সংখ্যায় ২৮ টির মত আবাসিক হোটেলের ধারণক্ষমতা মাত্র এক হাজারেরও কম বলে জানা গেছে। অথচ এবছর ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১ হাজার ৫৭৭ জন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকার জন্য তেমন কোনো আবাসিক হোটেল নেই। অন্যদিকে, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে ক্যাম্পাসে অবস্থানরত হলগুলো বন্ধ থাকার কথা বললেও শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি ডরমেটরি খোলা রাখা হচ্ছে। এনিয়েও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের শেষ নেই। গত দু’বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ডসংখ্যক জালিয়াতি ও অনিয়মে কোন শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টার প্রমান না থাকলেও একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অভিযোগ প্রমাণিত হলে গনিত বিভাগের এক শিক্ষকসহ মোট চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে।

হল বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট কমলেশ চন্দ্র রায় বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় নিরাপত্তার স্বার্থে গত বছরের ন্যায় এবছরেও আবাসিক হলগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। হল ত্যাগের বিষয়ে শীঘ্রই নোটিশ দেয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. একে এম নূর-উন-নবী মুঠোফোনে বলেন, ‘পরীক্ষা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে এবারেও ভ্রাম্যমান আদালত থাকার পাশাপাশি গত বছরের ন্যায় একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।



মন্তব্য চালু নেই