‘ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই’

বায়োমোট্রক সিম নিবন্ধন নিয়ে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সে বিষয়ে এবার লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহর একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেছেন।

তিনি লিখেছেন: যারা বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ও গণপ্রতিরোধের ডাক দিচ্ছেন আমি তাদের সমর্থন করি। অন্যদের সমর্থন করবার জন্য আহ্বান জানাই।

খোলা মুক্ত বাজার ব্যবস্থার এই যুগে অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, শিক্ষা ইত্যাদি সংস্থানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো প্রকার ভূমিকা থাকবে না, এটাই এখন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একে সাম্রাজ্যবাদ বলুন, লিবারেলিজম বলুন কিছুই আসে যায় না, আপনি বুঝতে পারছেন কিনা সেটাই আসল কথা।

এক সময় এই পঞ্চনীতি কায়েমের কথা বলে ব্যাক্তির অধিকার হরণ করা হয়েছিল। প্রবল ও প্রকট কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক রাষ্ট্র বানিয়ে নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সমাজতন্ত্র’। মানুষকে স্রেফ জীব বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। সেই ব্যবস্থা তার নিজের দোষে ভেঙ্গে পড়েছে, কারণ মানুষ জন্তু জানোয়ার নয়, তার মনের আরও অনেক চাহিদা আছে যেদিকে আমরা মনোযোগ দেই নি। এখন চলছে তার উল্টো যুগ।

যার যার তার তার, আপনি এই নিখিলে একা। আপনার বেঁচে থাকবার ব্যবস্থা প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হিংস্র পুঁজিতান্ত্রিক সমাজে নিজেকেই আদায় করতে হবে। এই বাস্তবতায় বাস করেও আপনি তা বুঝতে চান না। আপনি ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নতুন সমাজের জন্য লড়াই করলেন না। শাহবাগী হয়ে গেলেন! ইসলামপন্থীদের ফাঁসিতে ঝোলালেন আর মিষ্টি খেলেন। ইসলামপন্থিরাও নাস্তিক আর মুরতাদদের ফাঁসির দাবি তুলছে, কেউ কেউ নাস্তিক মুরতাদদের কুপিয়ে মারছে, আপনি মুক্তমনা ব্লগার হয়ে বিদেশে পালালেন।

বুঝুন, সাম্রাজ্যবাদ আর নিউলিবারেজিম বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি নয় — আস্তিক বা নাস্তিক এটা আপনার নিজেরই জীবন। হালার রাষ্ট্র যদি কিছুই করবার না পারে তার কাজ হয় কিলানো। ভদ্র ভাষায় শুধু সিকিউরিটি নিশ্চিত করা — সাম্রাজ্যবাদের এই নতুন পর্যায়টা — নিউলিবারেলিজম, গ্লোবালাইজেশান যাই বলুন — আমাদের বোঝা দরকার।

সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে গিয়ে রাষ্ট্র জঙ্গিবাদ দমনকেই তার একমাত্র কর্তব্য মনে করে, বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ এনে রিমাণ্ডে নির্যাতন করা ও স্বীকারোক্তি আদায়, তারপর তাদের পোষা গণমাধ্যমে প্রচার করবার জন্য। আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার নামে রাষ্ট্র আপনার নাগরিক ও মানবিক অধিকার হরণ করে। আপনার কোন আইনী সুরক্ষার ব্যবস্থা নাই, আপনি দার্শনিকদের ভাষায় (bare life) — ল্যাংটা হনুমানে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। আপনার কোনো খবর নাই।

এখন সিকিউরিটি নিশ্চিত করবার জন্যই আপনার ওপর নজরদারি কঠোর করা দরকার। আপনি রাষ্ট্রের চোখে সবস্ময়ই সম্ভাব্য জঙ্গি, ক্রিমিনাল, কোন না কোন অপরাধের আসামী। তো আপনার নাম পরিচয় সাকিন সহ ন্যাশনাল আই ডি কার্ড দরকার, দরকার ফিঙ্গার প্রিন্ট। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিকে আপনাকে ডিজিটাল বাইটসে ধারণ করা হবে। তারপর ডিজিটাল টেকনলজি দিয়ে আপনার ওপর নজরদারী চলবে।

ফলে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের বিরোধিতাকে হাল্কা ভাবে নেবেন না। যারা এটা বুঝে গিয়েছেন তাদের লাল সালাম আর সবুজ শুভেচ্ছা। আছি আপনাদের সঙ্গে।

আসুন সিকিউরিটি স্টেইট আর তার নজরদারির পাতানো জালের বিরুদ্ধে নাগরিকদের মানবিক অধিকারের জন্য লড়ি। আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরকেই, সমাজকেই নিশ্চিত করতে হবে। ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল মারার গোঁসাই — আসুন এই রাষ্ট্রের বিলয় ত্বরান্বিত করি।



মন্তব্য চালু নেই