ভারতীয় পোষাকের চেয়ে সাতক্ষীরার মার্কেটগুলোতে বেশি বেচা কেনা হচ্ছে দেশী পোষাক

‘ঈদ একটি ধর্মীয় উৎসব এবার আমাদের পরিবারের সকলেই দেশীয় পোশাকে ঈদ পালন করবো বলে ঠিক করেছে। দেশী শাড়ি, থ্রি পিচ, ডিজাইনও ভাল পরতেও আরাম। এজন্য এবার পাশ্চাত্যের কোন পোশাক কিনবো না’। একথাগুলো বলছিল শহরের মুনজিতপুর এলাকা থেকে আসা ক্রেতা রোকেয়া খাতুন। মঙ্গলবার পৌর নিউমার্কেটে ঈদ মার্কেট করার সময় এ কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

শুধু রোকেয়া খাতুন নয় দেশীয় পণ্য কিনে হন ধন্য! এবার ঈদে যেন এক কথাটি সাতক্ষীরাবাসীর যেন প্রযোজ্য হয়েছে। সকল ক্রেতা সাধারণ সমস্ত মার্কেট খুঁজে খুঁজে দেশীয় পোশাক নিয়ে ঘরে ফিরছেন। মঙ্গলবার শহরের বড় বড় মাকের্টগুলো ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতা সাধারণের পছন্দের তালিকায় রয়েছে দেশীয় পণ্যের টাঙ্গাইলি শাড়ি, জামদানী, খদ্দর, মনীপুরী, কাতান, স্বর্ণকামাল, টাঙ্গইল জামদানি, বালুচুরী, জর্জেট শাড়ি, তাঁতের শাড়ী। পাশাপাশি ছেলেরা দেশীয় পাঞ্চাবি, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্চি ব্যাগভর্তি করে ঘরে ফিরছেন। সাতক্ষীরা শহরের নিউ মার্কেট, মেহরুন প্লাজা, আমিনিয়া মার্কেট, এস মাওলা প্লাজা, ফাল্গুনী বস্ত্রলয়ের মার্কেটগুলোতে ঈদের কেনাকাটা দেশীয় পোশাকের চাহিদা ব্যাপক। সকল ক্রেতা দেকানে একে দেশীয় পোশাক খোঁজ করছেন সবার আগে।

সাতক্ষীরা শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যবারের মতো এবার বড় আশা করে ভারতীয় পোশাক তুলেছিলাম। কিন্তু মানুষ সচেতন হয়ে গেছে। বেশি দাম দিয়ে এখন আর কেউ নি¤মানের জিনিস কিনতে চায় না। কিরণমালা থ্রি-পিস আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, মধুমালা থ্রি-পিস দেড় হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা, মায়াপরী থ্রি-পিস সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা, ফ্লোরটাচ থ্রি-পিস আট হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। দাম শুনে ক্রেতাদের চক্ষু চড়কগাছ। ভারতীয় পোশাকের দাম বেশি কিন্তু মান কম। অপরদিকে দেশীয় পোশাকের দাম কম কিন্তু মান ভাল।

গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় নিম্নবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। অবশ্য নিম্নবিত্তদের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে থানা মসজিদের সামনে ফুটপাতে বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকান দিয়েছে স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ীরা। বড় বড় মার্কেটের চেয়ে এই সব মার্কেটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। এবারও পোশাকে পাশ্চাত্যের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে অন্যান্যবারে তুলনায় কম আছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। কিছু কিছু তরুণীদের পছন্দ ভারতীয় স্টার জলসার সিরিয়ালের কিরনমালা, মাচাককালি, ফ্লোরটাস ইত্যাদি। অনেকে আবার দেশীয় পণ্য কিনে হচে চান ধন্য। সবকিছুর পরও যেন দেশীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের চাহিদা যেন একটু বেশী।

নিউ মার্কেটের নিপুন বস্ত্রালয়েল সত্ত্বাধিকারী মো. শওকত হোসেন বলেন, এবার ভারতীয় শাড়ি এবং কাপড়ের চেয়ে দেশীয় পণ্যের বেশী খোঁজ করছে ক্রেতারা। তার দোকানে টাঙ্গাইল শাড়ি ৬০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, জর্জেট শাড়ি ১২০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা, সিল্ক শাড়ি দুই হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরুন প্লাজার বোরকা এন্ড থ্রি পিচ হাউজের সত্ত্বাধিকারী কাজী মারুফ হোসেন বলেন, তার দোকানে থ্রি পিচ বিক্রি হচ্ছে বেশ ভালো। সকল ক্রেতা দেশীয় স্কার্ট, ডিভাইডার, বুটিক্সের তৈরী থ্রি পিচ, ফোর পিচ নিয়ে ঘরে ফিরছেন। তিনি দাম সর্ম্পকে বলেন তার দোকানে থ্রি পিচ ১৫ শ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

মেহেরুন প্লাজার ফ্যাশন কিং এর ইস্তিয়াক আহমেদ দোকানে দেশীয় শাড়ির রকমারি বাহার। তার দোকানে টাঙ্গইল শাড়ি, জামদানি, কাতান, বালুচুরী শাড়ি বেশী বিক্রি হচ্ছে।

আমিনিয়া মার্কেটের পোষাক এর সত্ত্বাধিকারী রাজিব আহমেদ জানান, তার দোকানে দেশীয় পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট বিক্রি হয়। পাঞ্জাবির মধ্যে সূতি পাঞ্জাবি ৩০০ টাকা থেকে ২১০০ টাকা, জর্জেট পাঞ্জাবি দেড় হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, জামদানি পাঞ্জাবি ৭০০ টাকা থেকে ১৬০০ টাকা, টিস্যু পাঞ্জাবি সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা, শেরওয়ানী পাঞ্জাবি ২হাজার টাকা থেকে ৪হাজার টাকা দাম রয়েছে। এছাড়া দেশীয় গেঞ্জি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। এবার ঈদকে সামনে রেখে ব্যবাসায়ীরা মনে করেন আবহাওয়া ভালো থাকলে অন্যবারের তুলনায় বিক্রি বেশী হবে।



মন্তব্য চালু নেই